somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূনকে দেখতে যাননি গুলতেকিন

২২ শে জুলাই, ২০১২ সকাল ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমেরিকায় থেকেও একটিবারের জন্যও চিকিতসাধীন অবস্থায় হুমায়ূন আহমেদকে দেখতে হাসপাতাল বা তার বাসায় দেখতে যাননি তার সাবেক স্ত্রী গুলতেকিন। এমনকি মৃত্যুর পর হুমায়ূনের মৃত্যুদেহও দেখতে না আসায় লেখকের স্বজন ও বন্ধুরা অবাক হয়েছেন। সদ্য প্রয়াত নন্দিত লেখক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের জীবনের প্রায় অর্ধেক সময়ে তার অস্তিত্বজুড়ে ছিলেন গুলতেকিন। ৩০ বছরের সংসার ছিল হুমায়ূন-গুলতেকিন দম্পতির। এ দীর্ঘ সময়ে একে অন্যের ছিলেন আনন্দ-বেদনার সারথী। ১৯৭৩ সালে তাদের বিয়ে হয়। বিচ্ছেদ ঘটে ২০০৩ সালে।
দীর্ঘ এতো বছর যে নারী একজন কালজয়ী লেখকের জীবনের বিশাল সময়জুড়ে সঙ্গে ছিলেন সে নারী একবার মৃত্যুশয্যায়ও খোঁজ নেবেন না, তা স্বয়ং হুমায়ূনও ভাবতে পারেননি!
যে দেশে হুমায়ূন আহমেদ চিকিৎসাধীন ছিলেন সে দেশে গুলতেকিনও অবস্থান করছিলেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অনেকেই দেখতে গিয়েছেন লেখককে। নিউইয়র্কে অসুস্থ লেখককে দেখতে গিয়েছেন পরিচিত-অপরিচিত অনেকেই, কেবল গুলতেকিন ছাড়া।
জানা গেছে, আমেরিকায় থেকেও গুলতেকিন হুমায়ূনের মৃত্যুদেহও দেখতে না আসায় লেখকের স্বজন ও বন্ধুরা অবাক হয়েছেন। হুমায়ূন আহমেদের পারিবারিক সূত্রসহ একাধিকসূত্রে জানা গেছে, হুমায়ূনের মৃত্যুর পর বাংলাদেশ সময় শনিবার দুপুর পর্যন্ত গুলতেকিন কোনো খোঁজ নেননি।
হুমায়ূন আহমেদের অনেক লেখায় এসেছে গুলতেকিনের নাম। তার প্রথম দিকের প্রকাশিত বইগুলোর কয়েকটি উৎসর্গ করেছিলেন গুলতেকিনকে। তিনি গুলতেকিন সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘জীবনের শ্রেষ্ঠ নারী গুলতেকিন।’ হুমায়ূন তার আত্মজীবনী ‘আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই’ বইটিতেও তার লেখক হয়ে ওঠার পেছনে গুলতেকিনের অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন।
একাত্তরে দেশ স্বাধীনের কিছুদিন পরই হুমায়ূনের প্রেমে পড়েছিলেন প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর নাতনি গুলতেকিন। ১৯৭৩ সালেই হুমায়ূন আহমেদ গুলতেকিনকে বিয়ে করেন। ২০০৩ সালে হুমায়ূন-গুলতেকিনের সংসারের সমাপ্তি হয়।
বিয়ে-বিচ্ছেদের পর ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অনেকটা অন্তরালে চলে যান গুলতেকিন। একপর্যায়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন। একাধিক সূত্র জানায়, হুমায়ূনের অসুস্থ্তা ও মৃত্যু সংবাদের পরও দেখা করার ব্যাপারে কোনো ধরণের আগ্রহ দেখাননি গুলতেকিন।
যোগাযোগ করা হলে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূনের ছোট ভাই রম্য ম্যাগাজিন উন্মাদের সম্পাদক আহসান হাবীব বলেন, আমার জানা মতে, তিনি (গুলতেকিন) এখনও পর্যন্ত দেখতে আসেননি। তিনি জানান, গুলতেকিন বর্তমানে আমেরিকারই কোনো একটি প্রদেশে অবস্থান করছেন।
অভিমানী-জেদি গুলতেকিন : হুমায়ূন আহমেদ ও গুলতেকিনের পরিচিত ও একসময়ের কাছের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘বিচ্ছেদের পর গুলতেকিন কাছের অনেককে বলেছেন, হুমায়ূনের মৃত মুখও কখনো দেখতে চাইবেন না এবং হুমায়ূনের কোনো খবরই তাকে আনন্দে উদ্বেলিত কিংবা বেদনাক্রান্ত করবে না। তিনি জানান, এখনও জেদের বশেই আছেন গুলতেকিন। বিচ্ছেদের পর কোনো রকম যোগাযোগই করেননি বলেও তিনি জানান।
হুমায়ূন-গুলতেকিনের সংসারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে। তিন মেয়ের নাম বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ এবং ছেলের নাম নুহাশ আহমেদ। নুহাশের নামেই গাজীপুরে হুমায়ূন আহমেদ গড়ে তোলেন স্বপ্নের নুহাশ পল্লী। গুলতেকিনের নামে হুমায়ূন রাজধানীর ধানম-িতে পাঁচতলা একটি বাড়ি লিখে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
হুমায়ূনের দ্বিতীয় জীবন এবং শাওন : ১৯৯০ সালের মধ্যভাগ থেকে মেয়ে শীলার বান্ধবী এবং তার বেশ কিছু নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা জন্মে। ২০০৫ সালে হুমায়ূন আহমেদ বিয়ে করেন শাওনকে। হুমায়ূন-শাওনের সংসারে ৩ সন্তান জন্মগ্রহণ করে। প্রথম মেয়ে-সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মারা যায়। বর্তমানে হুমায়ূন-শাওন দম্পতির দুই ছেলে হচ্ছে নিষাদ ও নিনিত। বিয়ের পর হুমায়ূন আহমেদ তার সেন্টমার্টিনের বাড়ি ‘সমুদ্র বিলাস’ লিখে দেন শাওনের নামে।
মেয়েরা দেখে গেছেন অসুস্থ বাবাকে : প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মেয়েরাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন বাবা হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে। তবে হুমায়ূন আহমেদের ক্যান্সার ধরা পড়ার পরে তার ধানম-ির দখিন হাওয়া অ্যাপার্টমেন্টের বাসায় মেয়ে শীলা, নোভা ও বিপাশা আহমেদ অসুস্থ বাবাকে দেখতে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। হুমায়ূন আহমেদ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর স্বামী ও সন্তানসহ মেয়েরা একবারই দেখতে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। হুমায়ূন-গুলতেকিন দম্পতির একমাত্র পুত্র নুহাশ আহমেদ অবশ্য তার বাবাসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন বড় হওয়ার পর থেকেই।


View this link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×