somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজজীবনে হিংস্রতা ও তার প্রতিকার

২২ শে জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাফর সাহেব আমড়াগাছিয়া স্কুলের অংকের শিক্ষক। খুবই সজ্জন মানুষ। শিক্ষক হিসেবেও চমৎকার। কিন্তু তাকে মাঝে মধ্যেই ছাত্রপেটানোর এক নেশায় পেয়ে বসে। এমনিতে ফিটফাট জাফর সাহেবকে কোনো কোনোদিন দেখা যায়, জুতার ফিতা বাঁধেন নি, প্যান্টের চেইন খোলা, চোখদুটো লাল। এসব দিনে ছাত্রেরা আসন্ন বিপদাশংকায় সতর্লঝয়ে যায়। সতর্ক হলেই নিস্তার পাওয়া যায় না। কোন একজনের সামান্য খুঁত ধরে সারা ক্লাসকে তিনি তার জোড়া বেত দিয়ে পিটান।

জাফর সাহেব আগে খুব দরিদ্র ছিলেন। তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল আলী মৃধা সাহেবের মেয়ে গোলাপী বেগমকে বিয়ে করে তিনি স্বচ্ছ্বল হন। গোলাপী বেগম খুবই মুখরা মহিলা। চুন থেকে পান খসলেই জাফর সাহেবকে খোঁটা দিয়ে অস্থির করে তুলেন। জাফর সাহেব সবকিছু দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেন। সবার ধারনা, জাফর সাহেবের ছাত্র নির্যাতন তার স্ত্রীর কাছে নিগৃহীত হওয়ারই প্রতিক্রিয়ামাত্র।

সবাই জাফর সাহেবের মত ভাগ্যবান নন। হাতের কাছে পিটিয়ে মনের বোঝা হালকা করার জন্য ছাত্রও অনেকের কাছে থাকে না। তাদের জীবন হয় অনেক বেশি ভয়ংকর। প্রসিদ্ধ সমাজবিজ্ঞানী আলফ্রেড টমাসনের মতে,

"যারা সমাজজীবনে যত বেশি নিগৃহীত হয়, তারাই ব্যক্তিজীবনে ততবেশি হিংস্র হয়।"

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এদিক দিয়ে সবচেয়ে করুন অবস্থায় থাকেন মাদ্রাসাপড়ুয়া দরিদ্র ছাত্রগোষ্ঠী এবং বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ডের দল করা পার্টিসমূহের নেতাকর্মীরা। তবে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় থাকেন বোধহয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিরা, যাদেরকে রাজনীতির জন্য স্বাধীন বাংলাদেশকে না মেনে উপায় থাকে না। অথচ তারা মনে-প্রানে বাংলাদেশের ঘোর বিরোধী। তারওপর তাদেরকে জেনেশুনে ধর্মের অপব্যাখ্যা করে রাজনীতি করতে হয়। এদের মধ্যে যারা সামান্যতমও আল্লাহতে বিশ্বাস করেন, তারা সবসময়ই এই প্রতারনার জন্য ভিতরে ভিতরে আতংকে থাকেন। এহেন মানসিক চাপে থেকে তাদের মধ্যে যে হিংস্রতা জমা হয়, অনুকূল পরিবেশ পেলেই তা বেরিয়ে আসে বোমাবাজি, মানুষ জবাই, রগকাটা ইত্যাদি ধবংসাত্মক কাজের মাধ্যমে।

বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যবাসী একটি বিরাট অংশও এরূপ নিপীড়নের স্বীকার হন। আরবরা ১৪০০ বছর আগেও বর্বর ছিলো, এখনও আছে এবং তাদের বর্বরতার প্রকাশ তারা করে এদেশের খেটে খাওয়া শ্রমিকদের ওপর। আমার দেশের এসব মানুষ না পারে সইতে, না পারে কিছু কইতে। ফলে তাদের মধ্যে চরম হীনমন্যতা এবং হিংস্রতা জমা হতে থাকে। উপরে উপরে সবার সাথে মিষ্টভাষী ভালোমানুষ হিসেবে অভিনয়টা এরা জীবনের প্রয়োজনেই রপ্ত করে ফেলে। কিন্তু অনুকূল পরিবেশে দেখা যাবে ক্রোধে প্রজ্জ্বলিত হয়ে অন্যকে ব্লাডি বাস্টার্ড গালি দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না, অন্যের জিহবা ছিঁড়ে নেয়ার জন্যও মরিয়া হয়ে উঠছে।

ডাক্তারদের মতে, ইহা একটি অন্যতম সামাজিক এবং মানসিক ব্যধি। এ ব্যধিতে আক্রান্ত লোকদিগের চিকিৎসাস্বরূপ তাদের মধ্যকার জমা হওয়া প্রেসার রিলিজের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রেসার রিলিজের কাজটা করতে হবে দুই ধাপে। প্রথম ধাপে রোগীকে ভালো করে উত্তম-মধ্যম দিয়ে তারপর শবাসনে শিথিলায়ন করতে হবে। এরপর, সপ্তাহে তিন বার করে নিষিদ্ধ পল্লীতে ছেড়ে দিয়ে বলতে হবে, তুমি এখানে স্বাধীন, যেমনে ইচ্ছা 'উহা' করো। এরূপ মানসিক রোগী সামলাইতে ব্রথেলে কর্মীরা চার্জ একটু বেশি নিলেও রোগীর স্বার্থে তা মেনে নেওয়া উচিত।

পরিশেষে বলি, সমাজ জীবনে হিংস্রতা একটি সামাজিক ব্যধি। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে গালি না দিয়ে প্রতি সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১২:৫৭
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×