জাফর সাহেব আগে খুব দরিদ্র ছিলেন। তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল আলী মৃধা সাহেবের মেয়ে গোলাপী বেগমকে বিয়ে করে তিনি স্বচ্ছ্বল হন। গোলাপী বেগম খুবই মুখরা মহিলা। চুন থেকে পান খসলেই জাফর সাহেবকে খোঁটা দিয়ে অস্থির করে তুলেন। জাফর সাহেব সবকিছু দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করেন। সবার ধারনা, জাফর সাহেবের ছাত্র নির্যাতন তার স্ত্রীর কাছে নিগৃহীত হওয়ারই প্রতিক্রিয়ামাত্র।
সবাই জাফর সাহেবের মত ভাগ্যবান নন। হাতের কাছে পিটিয়ে মনের বোঝা হালকা করার জন্য ছাত্রও অনেকের কাছে থাকে না। তাদের জীবন হয় অনেক বেশি ভয়ংকর। প্রসিদ্ধ সমাজবিজ্ঞানী আলফ্রেড টমাসনের মতে,
"যারা সমাজজীবনে যত বেশি নিগৃহীত হয়, তারাই ব্যক্তিজীবনে ততবেশি হিংস্র হয়।"
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এদিক দিয়ে সবচেয়ে করুন অবস্থায় থাকেন মাদ্রাসাপড়ুয়া দরিদ্র ছাত্রগোষ্ঠী এবং বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ডের দল করা পার্টিসমূহের নেতাকর্মীরা। তবে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় থাকেন বোধহয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিরা, যাদেরকে রাজনীতির জন্য স্বাধীন বাংলাদেশকে না মেনে উপায় থাকে না। অথচ তারা মনে-প্রানে বাংলাদেশের ঘোর বিরোধী। তারওপর তাদেরকে জেনেশুনে ধর্মের অপব্যাখ্যা করে রাজনীতি করতে হয়। এদের মধ্যে যারা সামান্যতমও আল্লাহতে বিশ্বাস করেন, তারা সবসময়ই এই প্রতারনার জন্য ভিতরে ভিতরে আতংকে থাকেন। এহেন মানসিক চাপে থেকে তাদের মধ্যে যে হিংস্রতা জমা হয়, অনুকূল পরিবেশ পেলেই তা বেরিয়ে আসে বোমাবাজি, মানুষ জবাই, রগকাটা ইত্যাদি ধবংসাত্মক কাজের মাধ্যমে।
বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যবাসী একটি বিরাট অংশও এরূপ নিপীড়নের স্বীকার হন। আরবরা ১৪০০ বছর আগেও বর্বর ছিলো, এখনও আছে এবং তাদের বর্বরতার প্রকাশ তারা করে এদেশের খেটে খাওয়া শ্রমিকদের ওপর। আমার দেশের এসব মানুষ না পারে সইতে, না পারে কিছু কইতে। ফলে তাদের মধ্যে চরম হীনমন্যতা এবং হিংস্রতা জমা হতে থাকে। উপরে উপরে সবার সাথে মিষ্টভাষী ভালোমানুষ হিসেবে অভিনয়টা এরা জীবনের প্রয়োজনেই রপ্ত করে ফেলে। কিন্তু অনুকূল পরিবেশে দেখা যাবে ক্রোধে প্রজ্জ্বলিত হয়ে অন্যকে ব্লাডি বাস্টার্ড গালি দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না, অন্যের জিহবা ছিঁড়ে নেয়ার জন্যও মরিয়া হয়ে উঠছে।
ডাক্তারদের মতে, ইহা একটি অন্যতম সামাজিক এবং মানসিক ব্যধি। এ ব্যধিতে আক্রান্ত লোকদিগের চিকিৎসাস্বরূপ তাদের মধ্যকার জমা হওয়া প্রেসার রিলিজের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রেসার রিলিজের কাজটা করতে হবে দুই ধাপে। প্রথম ধাপে রোগীকে ভালো করে উত্তম-মধ্যম দিয়ে তারপর শবাসনে শিথিলায়ন করতে হবে। এরপর, সপ্তাহে তিন বার করে নিষিদ্ধ পল্লীতে ছেড়ে দিয়ে বলতে হবে, তুমি এখানে স্বাধীন, যেমনে ইচ্ছা 'উহা' করো। এরূপ মানসিক রোগী সামলাইতে ব্রথেলে কর্মীরা চার্জ একটু বেশি নিলেও রোগীর স্বার্থে তা মেনে নেওয়া উচিত।
পরিশেষে বলি, সমাজ জীবনে হিংস্রতা একটি সামাজিক ব্যধি। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে গালি না দিয়ে প্রতি সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১২:৫৭