somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্বেষা (পর্ব-১)

২০ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল থেকে বৃষ্টি। থামবার কোন আভাস নেই!
বই হাতে আনমনে মৃদু ঝম ঝম শব্দে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। দূর থেকে আকাশ চিড়ে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যাচ্ছে। অশনিসম্পাতের এই মহাক্ষণ মনে করিয়ে দিলো আপনার মৃদু হাসি। অদ্ভুত মায়াময় হাসি আপনার। দেখলে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।
চারিদিকে বাতাস বেড়েছে আরো। ইচ্ছে করে এই মুক্ত বাতাসে করে ভেসে যাই। হাতে থাকা ড্যান ব্রাউন সাহেব হয়ত বড্ড অপমান বোধ করছেন। কিছুক্ষণের জন্য তাকে ভুলেই গিয়েছিলাম। মেঝেতে থাকা কফির মগটাও তারই সঙ্গী। মা কে আরেক মগ কফি দিতে বললাম। এদিকে বিকেল আর সাঁঝের মাঝে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে। দিনের এই শেষ প্রান্তে এসে বৃষ্টির অবসান। রাস্তায় হাটু পানি জমেছে।
বাইরের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে কফির মগে চুমুক দিচ্ছি। পেছন থেকে হঠাৎ আওয়াজ এলো,
"কি ভাবছেন?"
পেছন ফিরে দেখি আপনি দাড়িয়ে। ভাগ্যের এই সমাপতন দেখে মোটেও অবাক হই নি। স্থির কন্ঠে বললাম,

"কিছুনা। আপনি এই সময়ে এখানে!"

বাসায় বসে বোর হচ্ছিলাম তাই চলে আসলাম গল্প করতে।

আমি গল্প করতে পারিনা।

শুনেছি আপনি ভালো গাইতে পারেন।

কে বলেছে আপনাকে?

রিমির মুখে সারাদিন আপনার গানের প্রশংসা শুনি।তার ফোনে আপনার রেকর্ডিংও শুনেছি।

আমি অপরিচিতদের গান শুনাই না। আপনি এখন আসতে পারেন।

জোর করে আপনাকে বিদায় জানাতে একদমি ভালো লাগছিলোনা। ইচ্ছে করছিলো ধমক দিয়ে বলি, দাড়ান! কোথাও যাবেন না। আমার পাশে এসে বসুন। আমি গল্প করব আপনার সাথে। সারাজীবন গল্প করব।
তা আর হলো কই! আপনি অভিমান করে চলে গেলেন। যাবার সময় মাকে বললেন আর ককখনোও আসবেন না। মা'র বুঝতে বাকি রইল না।তবুও আমায় কিছু বললেন না। হয়তো ছেলের অসামাজিকতায় তিনি অতিষ্ঠ।
আলো ছায়ার খেলার মতো ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে মুখরিত রাত। অন্ধকারে ছায়ার রঙ শুধুই নাকি কালো। জানালার পাশের ইজি চেয়ারে বসে হাজারো কল্পনার ভিড়ে আচ্ছন্ন হয়ে আছি। ইজি চেয়ারটার বয়স আমার সমান। শৈশবে দুলতে দুলতে আছড়ে পড়ার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম।

পরদিন সকালে চড়ুই পাখির কলরবে ঘুম ভাঙলো। হাউস স্প্যারো।মানুষের আশপাশে বসবাস করতে এরা ভালোবাসে। প্রায় ১০হাজার বছর আগে এরা মানুষের সান্নিধ্যে এসেছিলো। মাত্র দুই দশক আগেও ঘরের ভেন্টিলেটরে চড়ুই পাখির সংসার দেখা যেত।
রোদ ঝলমলে সকাল। বারান্দায় সাদা-লাল-হলুদ পর্তুলিকার ফুলগুলো যেন বৃষ্টি শেষের রঙধনু সাঁজে সেঁজেছে। এমন সময় রিমি এসে জানালো অন্বেষা আমার উপর খুব রেগে আছেন।
আমি সে কথা কানে নিলাম না। তবে ভেতরে এক অজানা অনুতাপ আমায় গ্রাস করছিলো।
রিমি আমার ছোট বোন। এইচএসসি পাশ করে সদ্য ভার্সিটির আঙিনায় পা দিয়েছে। মাথায় জেইন অস্টেন এর মতো বিচারশক্তি না থাকলেও নাচে-গানে খুব পারদর্শী। এরই মধ্যে ঝুলিতে বেশকিছু পুরস্কার জমিয়ে ফেলেছে।

অন্বেষা তোর কথায় খুব কষ্ট পেয়েছে। তুই এক্ষুনি ওর কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবি। চল আমার সাথে।

আমি চুপ করে রইলাম।

দেখ ভাইয়া অন্বেষার বাবা নেই। মায়ের পেনশনের টাকায় তাদের সংসার চলে। খুবই শান্ত স্বভাবের মেয়ে। এমন মেয়ের মনে কষ্ট দিলে আল্লাহও মাফ করবেন না।

রিমি হয়তো নিছক অভিমানে এসব বলেছিলো। কিন্তু কথাগুলো তীরের মতো আমায় আঘাত করল।

সকাল থেকে দুপুর এক আচ্ছন্ন অবসাদ আমায় গ্রাস করছিলো। বিকেলে ছাদে এলাম। বেশ কিছুদিন বৃষ্টি থাকায় বাগানের টবগুলোতে পানি দেওয়া হয় না। বাবার নিজ হাতে তৈরি বাগান। যেমন আছে চন্দ্রমল্লিকা,দোপাটি,গাঁদা,কৃষ্ণকলির মতো দেশীয় ফুল। তেমনি বাবা ইন্দোনেশিয়া, চীন থেকে আনিয়েছেন ডালিয়া,ক্যামেলিয়া,জিনিয়া,প্যান্সি আর বেশ কিছু হুয়াইট অর্কিড। বাবার বাগানপ্রেম দেখে একসময় আমিও গাছগুলোর প্রেমে পড়ে যাই। বাবা ব্যাস্ত থাকলে গাছগুলো তাদের নতুন ভৃত্য খুঁজে পায়।
পাশের বাড়ির ছাদে রহমান সাহেবের কবুতরেরা উড়ে বেড়াচ্ছে। খুব অদ্ভুত ব্যপার, কবুতরগুলো ঠিক ছাদের ব্যাসার্ধ ঘিরেই উড়ছে। ঝাঁঝরিতে করে দোপাটির টবে পানি দিচ্ছি। হঠাৎ সিড়িতে পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম।
তাকিয়ে দেখি অন্বেষা।
আমায় দেখে আবার উল্টো দিকে রওনা দিচ্ছিলো।তবে এবার কোনো এক সাহসে ভর করে বলে ফেললুম,
এই যে শুনছেন। দাড়ান! যাবেন না।

সংকোচের চোখে অন্বেষা উত্তর দিলো,
বলবেন কিছু?

হ্যাঁ। এদিকটায় আসুন।

বলুন কি বলবেন।

I'm really sorry for what happened yesterday.

আপনি ক্ষমা চাইছেন কেন! ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিত। আমিই নির্লজ্জের মতো আপনার ওখানে গিয়েছিলাম। দোষ টা তো আমারই বলুন!!

আমি সবার সাথে মিশে অভ্যস্ত নই। চারদেয়ালের মাঝেই আমার সময় কাটে। আমি,আমার বই আর এই বাগান। এরাই আমার কাছের মানুষ।

অন্বেষা চুপ করে রইলো। আমিও কিছু বললাম না। তবে এবার সে চলে যায়নি। ছাদের অন্য দিকটায় দাড়িয়ে আকাশ দেখছে। এদিক থেকে আমি মুগ্ধ হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
অন্বেষার দীঘল কালো চুল। মনে হচ্ছে শ্রাবণ মাসে যেন কালো মেঘ সাজ করেছে। নারীর সৌন্দর্য,রুচি আর ব্যাক্তিত্বের পরিচায়ক চুল।
হঠাৎ আকাশের থেকে মুখ ফিরিয়ে এদিকে তাকালো সে। আমি হুরমুরিয়ে পেছনে ঘুরে আবার এক ঝটকায় গাছে পানি দিতে লাগলাম।
হয়তো অন্বেষা আমায় দেখে মুচকি হেসেছিল সেদিন।

To be continued...
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২১ সকাল ৮:২১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×