পর্ব- ১
ইয়োলিয়া ভীষন চাপা স্বভাবের মেয়ে। ওর সবকিছুই কেমন যেন অন্যরকম, আর অন্য দশটা মেয়ের মত না। আসলে ওর লাইফটাই আর অন্য দশটা মেয়ের মত না.....
ইয়োলিয়ার জন্ম হয় স্পেনে। তার মা লরা লুইযা গ্রাসিয়া একজন স্পেনিয়ার্ড মহিলা। তবে তার বাবা বাংলাদেশি।
ইউসুফ আব্দুল্লাহ্ হাসান, ইয়োলিয়ার বাবা।
ইউসুফ সাহেব সবসময়ই তাঁর ক্যারিয়ারের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাস্টার্স পাশ করে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য তিনি স্পেনে চলে যান। সেখানে গিয়ে মাদ্রিদের সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা করেন।
মাদ্রিদ শহরেই ইয়োলিয়ার মা লরার সাথে পরিচয় হয়েছিল ইউসুফ সাহেবের।
লরা লুইযা গ্রাসিয়া এবং ইউসুফ আব্দুল্লাহ্ হাসান তখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ছিলেন। লরার বিষয় ছিল মিউজিক। তখন তিনি সবে মাত্র অনার্স পাশ করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন, পাশাপাশি একটা স্কুলে জুনিয়র মিউজিক টিচার হিসেবে চাকরি করতেন। আর ইউসুফ সাহেব তখন পিএইচডির ছাত্র।
একদিন লাইব্রেরিতে বসে কিছু প্রয়োজনীয় নোট আর বই ঘাটছিলেন ইউসুফ সাহেব। বেশ অনেকক্ষন পর কাজ শেষে লাইব্রেরির প্রিন্ট সেন্টারে গেলেন তিনি। সেখানেই লরাকে প্রথম দেখেছিলেন তিনি।
এরপর কয়েকবার তাদের এরকম হঠাৎ করে দেখা হয়েছিল। একদিন ক্লাস শেষে ভার্সিটির কাছে এক কফিশপে বসে ইউসুফ সাহেব কফি খাচ্ছিলেন।হঠাৎ সেসময় লরা ঐ কফিশপে ঢুকে। ইউসুফ সাহেব ভাবলেন আজই মেয়েটার সাথে কিছু কথা বলতে হবে। তিনি তার কফি নিয়ে লরার টেবিলের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন, অনুমতি নিয়ে লরার সামনের চেয়ারটাতে বসলেন।
একটু একটু করে অনেক কথাবার্তাই হলো দুজনের। ইউসুফ সাহেব জানতে পারলেন লরা তারচেয়ে কয়েক বছরের জুনিয়র এবং তারা দুজন একই এলাকাতে থাকেন।
সেই থেকেই শুরু। ধীরে ধীরে দুজনের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়। এরপরে একসময় বন্ধুত্ব রুপ নেয় ভালোবাসায়। সেই থেকে প্রেম, প্রেম থেকে বিয়ে.........
বেশ সাদামাটা ভাবেই ইয়োলিয়ার বাবা-মার বিয়ে হয়েছিল।
ইয়োলিয়ার নানী অর্থাৎ লরার মা প্রথমে একদমই রাজি ছিলেন না এই বিয়ের ব্যাপারে। তার একটাই কথা, তিনি কোনো ভিনদেশী যুবকের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি না। পরে অবশ্য তিনি রাজি হয়েছিলেন। বৃদ্ধা অনেক চিন্তা করে দেখেছিলেন, এই বৃদ্ধা মা ছাড়া পৃথিবীতে লরার আর কেউ নেই। বাবাকে তো ছোটবেলাতেই হারিয়েছে। তাই মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে মেয়ের পছন্দের ছেলের সাথেই মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হলেন।
বেশ সুখেই কাটছিল তাদের সংসার। বিয়ের তিন বছর পর জন্ম হয় ইয়োলিয়ার। জন্ম থেকেই তার চুল হলদেটে সোনালি বর্নের। এজন্যই ইউসুফ সাহেব মেয়ের নাম রেখেছিলেন ইয়োলিয়া। মা বাবা দুজনের নামের সাথে মিল রেখেই তার পুরো নাম রাখা হয় ইয়োলিয়া লুইযা হাসান।
এরপর একটু একটু করে বাবা-মার হাত ধরে ইয়োলিয়া বেড়ে উঠতে থাকে।
স্প্যানিশ, ইংরেজি, বাংলা তিন ভাষাই একটু একটু করে শিখতে থাকে সে। বাবা-মার সাথে হেসে খেলে বেশ আনন্দে দিন যাচ্ছিল তার........
ইয়োলিয়ার যখন তিন বছর বয়স তখন তার নানী মারা যায়। মার মৃত্যুর পর ভীষন ভেঙে পড়েন লরা। এই শোক কাঁটিয়ে উঠতে তার বেশ সময় লেগেছিল........
ইয়োলিয়ার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে তার বাবা-মার মাঝে বিশাল বিবাদ তৈরি হয়। তাদের মাঝে বেশ ভালো রকমের ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। এরপর এক পর্যায়ে ইয়োলিয়ার বাবা ইয়োলিয়াকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। এরপর তাদের আর স্পেনে যাওয়া হয়নি। ইয়োলিয়া আজ পর্যন্ত জানে না কি কারনে তার বাবা-মার মাঝে এই বিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল.........
সেই থেকে মার সাথে ইয়োলিয়ার আর সামনাসামনি দেখা হয়নি। শুধু ফোনে কথা হয় আর চিঠির আদান-প্রদান। তবে কয়েক বছর ধরে ফেসবুক আর স্কাইপেও তাদের বেশ ভালো যোগাযোগ হয়।
তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, তার বাবা-মার এখনো ডিভোর্স হয়নি।
ইয়োলিয়া তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশ নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো থেকেই অর্জন করেছে। প্রথমে উদয়ন স্কুল, এরপরে হলিক্রস স্কুল, এরপর ভিকারুননেসা স্কুল এন্ড কলেজ। এখন পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে।
স্পেন ছেড়ে আসার পর বলতে গেলে একদম একা একাই বড় হয়েছে ইয়োলিয়া। বাবা সারাক্ষনই তাঁর কাজকর্ম নিয়ে ব্যাস্ত, ইয়োলিয়াকে সময় দেয়ার মত সময় তার নেই। আর মা তো কাছেই নেই! বাড়ির কাজের লোকরা ইয়োলিয়ার দেখাশোনা করতো।
সেই ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত ইয়োলিয়া একা একাই থাকে। তার খুব বেশি বন্ধু-বান্ধবও নেই। তার নিজেকে ঘিরেই তার জগৎ। সে নিজের মত থাকে, ঘোরাফেরা করে, লেখালেখি করে। নিজের মত করে সময় কাঁটায়.............
(চলবে......)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




