somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আব্বার সম্পর্কিত বইপাঠঃ

২০ শে জুন, ২০২৩ বিকাল ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আব্বার একটা ছোট কাপড়ের থলে ছিল। তার ভেতর এভারেডির দুই ব্যাটারির একটা টর্চ, চাবীর গোছা, দৈনিক আজাদ এবং একটা ছোট ডায়েরী থাকতো। ঐ ডায়েরী আব্বা নিয়মিত লিখতেন। আমি পরে কয়েকটি ডায়েরি পড়েছি, এমনকি আমার জন্মের প্রকৃত সন, সময় এবং দিন জেনেছি আব্বার ডায়েরিতেই। আব্বা ডায়েরীর ভাজে নতুন টাকার নোট রাখতেন। আমি লাল হরিণ মার্কা একটাকা কত চুরি করেছি। কখনও খুলনায় গেলে জেটির ডিমের মতো চকলেট আনতেন প্লাষ্টিকের খেলনার ভেতরে।

আব্বা আমাকে গল্প শোনাতেন, আমাকেও বলতেন গল্প শোনাতে। আমি আব্বাকে শিশু, আসন্ন পত্রিকার গল্পগুলো মাঝে মাঝে শোনাতাম। একদিন প্রিন্স এন্ড দ্য পপার পুরোটা তাকে শুনিয়েছিলাম। আব্বার প্রিয় একটা বই ছিল, মাওলানা আকরাম খাঁ এর মোস্তফা চরিত। আমাদের বাড়ীতে তর্জুমানূল হাদীস এবং মাসিক আরাফাতের পুরানো সংখ্যা ছিল একগাদা। মনুভাই ইরানী দূতাবাসের নিউজ লেটার এবং ভারতীয় দূতাবাসের ভারত বিচিত্রার গ্রাহক ছিল। সোভিয়েত দূতাবাসের চমৎকার বড় মাপের একটি পত্রিকা বের হতো, উদায়ন; সেটির কিছু সংখ্যাও থাকতো। আমার ঘোরলাগা শৈশব এসব বইয়ের পাতায় ঘুর ঘুর করতো। আমার নিঃশ্বাসের সাথে নতুন বইয়ের শব্দসম্ভার হুড়মুড় করে মাথার ভেতরে ঢুকে যেত।

আমি কখনও কোন খেলায় ভালো ছিলাম না। আমার বিষয় ছিল পড়া এবং তা অবশ্যই যাকে আউট-বই বলা হতো। আমি যেমন উল্টোরথের পুরানো সংখ্যা পড়ে উত্তম কুমার সম্পর্কে জেনেছি তেমনি হিরে চুনি পান্না পড়ে হযরত উসমান (রাঃ) সম্পর্কে জেনেছি। তখন ছোটদের কত অনুবাদ হতো ছবি সমেত, মালকাইটের ঝাপি, সিনহুয়া ও ভাল্লুক, অহঙ্কারী সেনাপতি, তিন মুঘল সম্রাট, মাইন যুদ্ধ, কাজ করার আগে; আমার মনে আছে সব।

আব্বা হরেকরকম পত্রিকা বাড়ীতে আনতেন। জীবনবীমা কর্পোরেশনের একটি পত্রিকা বের হতো। চমৎকার গল্প থাকতো, সেখানে ঝর্ণারানী দাস পূরকায়স্থ এর গল্প পড়েছি। বিচিত্রার ঈদ সংখ্যায় রাহাত খানের উপন্যাস পড়েছি। ঢাকা ডাইজেষ্ট এবং রহস্যপত্রিকা অবশ্য পরে পড়া শুরু করেছিলাম। আব্বা শিশু একাডেমি আর ইসলামী ফাউন্ডেশনের বই পত্রিকা বেশি আনতেন। মাসিক শিশু পত্রিকায় হুমায়ুন আহমদের বোতল ভূত প্রথম পড়েছি। আসন্ন’তে সাজেদুল করিমের উসখুস পড়েছি।

তখন ডিগ্রী ক্লাসে বাংলার দুটো পার্ট ছিল। একটা কবিতা সংকলন অন্যটি গল্প সংকলন। বড় ভাইদের সূত্রে এই বই দুটো বাড়ীতে ছিল। আমার সবচেয়ে সুখকর অভিজ্ঞতা হলো এই দুইটি বই পাঠ। বিশেষভাবে গল্পসংকলনটি। প্রেমেন্দ্র মিত্র, নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়, মানিক বন্দোপাধ্যায় এসব মহিরুহের লেখা আমি প্রথম এই সংকলনে পড়ি। রস, টোঁপ এসব গল্প। আমাদের আগে এস এস সি তে বা এইচ এস সি তে রচনা আসতো একটি পয়সার আত্মকাহিনী, একটি নদীর আত্মকাহিনী বা একটি বটগাছের আত্মকাহিনী। এসব রচনা পড়তে আমি খুব ভালোবাসতাম।

কেমন রঙিন স্বপ্নে বোনা ছিল সেসব দিন। ফুরিয়ে যাওয়া সময় যেন নেপথালিনে মোড়া, কাঠের আলমারির উপরের তাকে তুলে রাখা সাদা ঈদের পানজাবী।

আব্বার ধুসর কাপড়ের থলেটি এখন চোখ বুজে খুঁজে ফিরি, উদায়নের পাতা দিয়ে খাম লাগানো ‘আমার বই’ ৩টাকা দামের নিউজপ্রিন্ট খাতার উপর লাগানো ক্যালেন্ডারের পাতা আর আব্বার শিংয়ের বাইফোকালটা আমি কেন যেন সব বিষাদের উপসম হিসেবে হৃদয়ে গেঁথে রেখেছি।

কামরুল বসির
আইল অফ শেফি, ইংল্যান্ড
১৯ জুন ২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৪
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×