somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন মুস্তাফিজ হওয়ার গল্প

২০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাহমুদা খাতুন। বৃহস্পতিবার রাতে টেলিভিশনে বাংলাদেশ-ভারতের ওয়ানডে ম্যাচ দেখছিলেন। হঠাৎ দেখলেন ভারতের অধিনায়ক ধোনি কনুই দিয়ে সজোরে ধাক্কা দিল ১৯ বছর বয়সী নবীন পেসার মুস্তাফিজকে। উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়লেন তিনি। দাঁতে দাঁত চেপে খেলা দেখে গেলেন। মুস্তাফিজের নেয়া পাঁচ উইকেটের সহযোগে ৭৯ রানে বিজয়ী হলো বাংলাদেশ।

ম্যাচ শেষে আর সহ্য করতে পারলেন না মাহমুদা, সরাসরি ফোন দিলেন মুস্তাফিজকে। কতখানি ব্যাথা পেয়েছেন তিনি। কেমন আছেন, সুস্থ্যতো। একের পর এক প্রশ্ন করে জর্জরিত করলেন মুস্তাফিজকে। আর বৃহস্পতিবার রাতে ১৭ কোটি বাংলাদেশের নায়ক মুস্তাফিজ বিজয় উদযাপন বাদ দিয়ে এই নারীকে সান্ত্বনা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। এক পর্যায়ে তাকে আশ্বস্ত করেই স্বস্তি মেলে মুস্তাফিজের।


আসলে এছাড়া আর উপায় কি। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদা খাতুন হলেন মুস্তাফিজের মা। ছেলে খেলছেন বলে বিকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত খেলা দেখেছেন। ধোনির আঘাতটা ছাড়া ছেলের সব কিছুই ছিল কবিতার মতো। মায়ের চোখের সামনেই অভিষেকে ম্যাচে মুস্তাফিজ পাঁচ উইকেট নিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে দশ ভাগ্যবানদের একজন হয়ে উঠেছেন। হাসি ফুটিয়েছেন সমগ্র বাংলাদেশে।

মুস্তাফিজের বাবা আলহাজ আবুল কাশেম গাজী। পেশায় ব্যবসায়ী তিনি। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মুস্তাফিজ সবার আদরের ছোট ভাই। বড় ভাই মাহফুজার রহমান মিঠু খুলনায় গ্রামীণফোনের টেরিটরি অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন, মেজ ও সেজ ভাই ঘের ব্যবসায়ী।

তার ক্রিকেট খেলায় আসার পেছনে সেজ ভাই মোখলেসুর রহমানের অবদানই সবচেয়ে বেশি। কালীগঞ্জ থেকে প্রতিদিন সাতক্ষীরা শহরে মোটরসাইকেলের পেছনে চড়িয়ে নিয়ে যেতেন তিনি। বড় ভাই এক সময় ক্রিকেট খেলতেন, মেজ ভাইও কম যান না, আর সেজ ভাই এখনও ক্রিকেট খেলেন।

সেজ ভাই মোখলেছুর রহমান পল্টু ছোট ভাইয়ের বেড়ে ওঠার গল্প শোনান। তিনি বললেন, “পড়াশোনায় অতটা মন তার কখনোই ছিল না। স্কুল ফাঁকি দিয়ে সে ক্রিকেট খেলতে যেত। বাসায় তো বলেই দিয়েছিল, আমার দ্বারা ওসব হবে না। তোমরা আর জোর করো না। এর পর থেকে ক্রিকেটই তার ধ্যানজ্ঞান। কালীগঞ্জের বরেয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নেট প্র্যাকটিস করতেন মুস্তাফিজ। এই তো বছর পাঁচেক আগের কথা। সাতক্ষীরায় অনূর্ধ্ব-১৪ ক্রিকেটে বাছাই পর্বে নজর কাড়েন সবার। তারপর তিন দিনের কোচিং ক্যাম্প করানো হয়। এরপর জেলা পর্যায়ে অনূর্ধ্ব-১৬ ক্রিকেট খেলায় সাতক্ষীরার হয়ে প্রথম মাঠে নেমেছিলেন মুস্তাফিজুর।”

সাতক্ষীরা গণমুখী সংঘের কোচ আলতাফই প্রথম ধরতে পেরেছিলেন মুস্তাফিজের ভেতরের “ধারটা”। জেলা পর্যায়ে এসে মুস্তাফিজকে আরও পরিণত করে তুলতে পরিশ্রম করেন সাতক্ষীরার জেলা কোচ মুফাসিনুল ইসলাম তপু।

জেলা পর্যায়ের পর খুব বেশি দিন তাকে অপেক্ষা করতে হয়নি। ডাক পেয়ে যান খুলনার বিভাগীয় দলে খেলার। বছর তিনেক আগে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ফার্স্ট বোলিং ক্যাম্পে ট্রায়াল দিতে এসে কোচরা আর ছাড়েননি এ প্রতিভাকে। নিয়মিতই অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলেছেন। বল করতেন জাতীয় দলের নেটেও। তবে সম্ভাবনার দ্যুতি ছড়িয়েছেন গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। তার ঝুলিতে ভরেছিলেন ৯ উইকেট। হয়েছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।


গত বছরের মে মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ “এ” দলেও স্থান পেয়েছিলেন মুস্তাফিজ। রীতিমতো চমক ছিলেন তিনি। মুস্তাফিজ প্রথম শ্রেণিতে খেলা শুরু করেন গত বছরের এপ্রিলে। এই তো ছয় মাস আগে অভিষেক হয়েছে ঘরোয়া এক দিনের ম্যাচে।

মুস্তাফিজের স্বপ্ন পূরণে আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন তার বাবা-মাসহ গোটা জেলাবাসী।

মুস্তাফিজের ক্রিকেট কোচ আলতাফ হোসেন বলেন, “সৌম্য এবং মুস্তাফিজ দুজনই আমারই ছাত্র। দুজনই একসাথে জাতীয় দলে খেলছে। একজন বোলার আরেকজন ব্যাটসম্যান, এর চেয়ে আনন্দের কিছু হতে পারে না।”

মুস্তাফিজের আরেক কোচ মুফাসিনুল ইসলাম তপু বলেন, “তার সেজ ভাই অনূর্ধ্ব ক্যাম্পে নিয়ে আসে। প্রথমে তার বোলিং দেখি বুঝেছিলাম সে ভালো করবে। সে তো প্রথমে ব্যাটসম্যান হতে চেয়েছিল। আমি তাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম বোলার হওয়ার জন্য। আমার ছাত্র জাতীয় দলে খেলছে এতে আমি গর্বিত। তাকে দলে টিকে থাকতে হলে পরিশ্রম করে যেতে হবে।”

মুস্তাফিজের বাবা আলহাজ আবুল কাশেম আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলে যে জাতীয় টিমে খেলছে এটি গর্বের বিষয়। তিনি আরও বলেন, মুস্তাফিজ আজকে আমার একার ছেলে নয় গোটা জাতির হয়ে ২২ গজের রণাঙ্গনে লড়বে।” তিনি সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×