মেলবোর্নের সত্যতা মিললো মিরপুরে। বিশ্বকাপের বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালটি পক্ষপাতদুষ্ট ম্যাচ না হলে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল যে ওই ম্যাচটি জিতেও যেতে পারতো, এটা তো এখন ক্রিকেটবিশ্বের কাছে পরিস্কার হয়ে গেল। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি ৭৯ রানের বড় ব্যবধানে জিতে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। এই জয় এদেশের কোটি সমর্থককে বারবার ফিরে নিয়ে যাচ্ছে মেলবোর্নে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে কী ঘটেছিল? যারা ওই ম্যাচটি দেখেছেন তাদের আফসোস কী দ্বিগুন হচ্ছে না? তৎকালীন আইসিসি প্রেসিডেন্ট আ হ ম মুস্তফা কামালের মন্তব্য কী সঠিক ছিল না? ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফিও কী যথার্থ বলেননি, ‘মাঠে যা হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন’? তার এ কথা শুনে কলকাতার বড় একটি পত্রিকায় সাংবাদিক লিখেছিলেন, মাশরাফির তাচ্ছিল্য দেখে মনে হচ্ছিল, ম্যাচটি বোধহয় ওরা জিততো!
তা শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ওই সাংবাদিক কী ছিলেন? থাকলে লজ্জায় মুখ ঢাকার কথা। একবার ভাবুন রোহিত শর্মার বিপক্ষে রুবেল হোসেনের করা বলটি আম্পায়ার ‘নো’ না ডাকলে ভারতের স্কোর কত হতো? নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ভারতের স্কোর তিনশ’ ছাড়াতো না।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় মাহমুদুল্লাহ আউটটি নিয়েও সংশয় ছিল। অথচ ফিল্ড আম্পায়ার থার্ড আম্পায়ারের শরণাপন্ন হলেন না। শিখর ধাওয়ান সীমানায় দাঁড়িয়ে মাহমুদুল্লার ক্যাচটা নিলেন বটে, তবে তার পা দড়ি ছুঁয়েছে কি না টিভি রিপ্লে সেটা একবারের বেশি দু’বার দেখালো না। অথচ এরকম ক্ষেত্রে টিভি রিপ্লে বারবার দেখায়। বাংলাদেশের বেলায়ই সেটা হলো না। ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল্লাহ যে টানা তৃতীয় সেঞ্চুরিটিও যে তুলে নিতে পারতেন সেটা কে-ই বা বলতে পারতো!
এমসিজিতে আলিম দার এবং ইয়ান গোল্ড যেন ওই ব্রত নিয়েই মাঠে গিয়েছিলেন যে যাই হোক ভারতকে জিতিয়ে দিতে হবে! তাদের সঙ্গে মনে হয় সহমত পোষন করেছিলেন থার্ড আম্পায়ারও! এটা বলাই যায়, ওই ম্যাচে ১৪ জনের বিপক্ষে লড়েছে বাংলাদেশের ১১ জন! মাঠে মাশরাফি বিন মুর্তজাদের হারানোর তোড়জোড় ছিলই, এমনকি মাঠের বাইরেও একই কাজ করা হয়েছে।
জায়ান্ট স্ক্রিনে ভারতীয় ক্রিকেটারদের প্রেরণার জন্য বারবার দেখানো হয়েছে ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা।’ আইসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভ রিচার্ডসনকে ডেকে আইসিসি প্রেসিডেন্ট ওই বিজ্ঞাপন সরাতে বললেও তিনি তা করেননি। বাংলাদেশের বিপক্ষে আম্পায়ারদের দেওয়া সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি কামালের। মাঠে বসেই গণমাধ্যমের সামনে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন। এর প্রতিশোধ নিয়েছেন আইসিসি চেয়ারম্যান এন শ্রীনিবাসন ফাইনালে বিজয়ী দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে না দিতে দিয়ে।
কার্যত এর জেরেই আইসিসি প্রেসিডেন্টের পদ থেকে ইস্তফা দেন কামাল। তার এই ইস্তফা দেওয়াকে এদেশের মানুষ বাহবা দিয়েছে। সেদিন কামালের মন্তব্য যে ভুল ছিল না সেটি বৃহস্পতিবার মিরপুরে আরেকবার প্রমাণ করে দিল মাশরাফির দল।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিশ্বকাপের ওই কোয়ার্টার ফাইনাল শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না। বাংলাদেশের ৭৯ রানের অভাবনীয় বিজয়ে বারবার ফিরে আসতে বাধ্য মেলবোর্ন! যেখানে সবসময়ই বিজয়ী দলের কাতারে থাকবে বাংলাদেশের নাম। সঙ্গে একজন্য ব্যক্তিও। তিনি আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৬