somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের স্বাধীনতা: অতীত থেকে বর্তমান

১০ ই মার্চ, ২০০৭ সকাল ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের দূরবতর্ী কারন ছিল অনেক । এর মধ্যে প্রথম সর্ববৃহৎ কারণ ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের অভিনবত্ব এবং দ্বিতীয় কারণ ছিল বিভন্ন ভাষাভাষীদের নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের জন্য উপযোগী অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কাঠামো অন্বেষণে পাকিস্তানি নেতৃবর্গের সম্যক ব্যর্থতা। ফলে পাকিস্তানের কাঠামোগত স্ববিরোধীতার সমাধান না ঘটে এক সংঘাতের প্রবল স্রোত উত্তরোত্তর জোরদার হতে থাকে। পাকিস্তান গঠনের পর থেকে বাঙ্গালীরা রাষ্ট্র জীবনের সর্ব েেত্র উপেতি, বঞ্চিত ও শোষিত হতে শুরু করে। এর প্রতিত্রিুয়া হিসেবে বাঙ্গালি জাতী কখনো রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলন, কখনো স্বায়ত্বশাসন আন্দোলন, কখনো জনসংখ্যাভিত্তিক আইন পরিষদ গঠনের দাবি এবং কখনো অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরনের আন্দোলন করে এসেছে।
1971 সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠির পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি বিমাতা সুলভ আচরণ,গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, রাজনীতি থেকে বাঙ্গালীদের বঞ্চিত, উচ্চপর্যায়ের চাকুরি থেকে বাঙ্গালীদের বঞ্চিত করায় পাকিস্তানিদের প্রতি বাঙ্গালীদের আস্থা হারিয়ে যায়। এরই ফলশ্রুতিতে জন্ম নেয় বাঙ্গালীদের স্বাধীনতা সংগ্রাম।
1971 সালের 1 মার্চ সালের ইয়াহিয়া খানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতকরণের অপ্রত্যাশিত ঘোষনায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিােভে ফেটে পড়ে। পরবর্তীতে স্বাধিকার আন্দোলন রূপ লাভ করে স্বাধীনতা আন্দোলনে। সারাদেশে স্বাধীনতার দাবী জোরেসোরে উচ্চারিত
হতে থাকে। ইয়াহইয়া সরকার এই গণজাগরণ স্তব্দ করার জন্য 2 ও 3 মার্চ সান্ধ্য আইন জারি করলে জনগণ তা স্বত:স্ফর্ুত ভাবে ভঙ্গ করলে পুলিশ জনগণের উপর নির্বিচারে গুলির্বষন করে। ফলে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। পুলিশের নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণ হরতালের ডাক দেয় । পরিবেশ শান্ত করার জন্য ইয়াহিয়া সরকার 25 মার্চ অধিবেশনে বসার কথা ঘোষনা করে। কিন্তু সেটা ছিল তার মিথ্যা আশ্বাস এবং কালপেনের কৌশল মাত্র। কারণ নরপিশাচ ইয়াহিয়া খান ও ষড়যন্ত্রের মূল নায়ক জুলফিকার আলী ভূ্ট্টো অযথা আলোচনা দীর্ঘায়িত করে এবং সেই সুযোগে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সেনাবাহিনী এবং যুদ্ধের সাজ সরঞ্জাম গোপনে পূর্ব পাকিস্তানে আনার কাজটি সম্পন্ন করে। 25 মার্চ সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া এবং ভুট্টো কাউকে না জানিয়েই ঢাকা ত্যাগ করে। ষড়যন্ত্রের নীলনকশা তৈরি শেষ হলে ইয়াহিয়া পুর্ব বাঙলার সর্বত্র হত্যাযজ্ঞ চালানোর আদেশ প্রদান করে ফলে বাঙ্গালি জাতীর জীবনে নেমে আসে এক কালো রাত্রি , তমসাচ্ছন্ন দিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে স্তব্দ করার জন্য পাকিস্তানের প্রশিতি সেনাবাহিনী গভীর রাত্রে ঢাকাসহ বিভন্ন স্থানে নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অমানবিক আক্রমনের স্বীকার হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক এবং শিার্থীসহ হাজার হাজার নিরস্ত্র শ্রমিক এবং বস্তিবাসিকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে। পৃথিবীর হত্যাকান্ডের ইতিহাসে এটা ছিল একটি বর্বরোচিত হত্যাকান্ড। এই হত্যা কান্ডের ইতিহাস পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার ইতিহাসকে ম্রিয়মান করে দেয়। এখানকার ধ্বংযজ্ঞ, হামলা আর নিষ্ঠুরতা ছিল খুবই ভয়ংকর যাকে প্রতিপবিহীন এক বিভৎস রণত্রে হিসেবে আখ্যা দেয়া যায়। পাকিস্তানিদের নির্বিচারে গুলিবর্ষন এবং হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে পূর্ববাংলার সাধারণ জণগন স্বত:স্ফর্ুতভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। 25 মার্চ কালরাত্রিতে পাকবাহিনী যখন পৈশাচিক হত্যাকান্ড শুরু করে বঙ্গবন্ধু তখনই স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। 25 মার্চ রাত বারোটার পর অথর্াৎ 26 মার্চ তিনি গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোতে স্বাধীনতার ঘোষণা পৌছে দেন। 26 মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় চট্রগ্রাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মতৎপরতা আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয় এবং বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রের অনুবাদ পাঠ করা হয়। 27 মার্চ সন্ধ্যা বেলা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর প েস্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। ফলে সর্বস্তরের মানুষ স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে পাকবাহিনীর কাছ থেকে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনে।স্বাধীন হয় দেশ, গঠিত হয় সরকার এবং আমাদের মাতৃভূমি পায় সার্বভৌমত্ব। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসকে সামনে রেখে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ভিন্ন এক করুণ চিত্র। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু থাকলেও তার সুষ্ঠ প্রয়োগ হয় না। সরকারি দল এবং বিরোধী দলের মধ্যে কোন সমঝোতা নেই, এমনকি আমাদের এক নেত্রী অন্য নেত্রীর সাথে কথা পর্যন্ত বলেন না যা গণতন্ত্রে অপ্রত্যাশিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে মতা হস্তান্তরের বিষয়টি পর্যালোচনা করলে প্রত্যেকের মনে এই প্রশ্ন জাগতে বাধ্য যে, আসলেই কি আমরা স্বাধীন? যদি স্বাধীন হয়েই থাকি তাহলে কি স্বাধীনতা আবার হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি? সদ্যবিদায়ী সরকারী দল যাদের হাতে মতা হস্তান্তর করে, বিরোধী দল তাদের মেনে নিতে না পারায় শুরু হয় আন্দোলন। এক পর্যায়ে দফায় দফায় উপদেষ্টাদের পদত্যাগের পালা শুরু হয় । যাতে বিরোধী দল খুশি হলেও সদ্য বিদায়ী সরকারী দল খুশি হতে পারে নি। যার প্রমান হচ্ছে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক(?) সরকারের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে বিএনপি ও তার মিত্র দল গুলোর অনুপস্থিতি। দেশের প্রধান দুটি দলের পরস্পর বিরোধী অবস্থানের কারণে মতা চলে যায় তৃতীয় শক্তির কাছে। বিভিন্ন পত্রিকায় আমরা দেখতে পায় রাষ্ট্রপতি তৃতীয় এক শক্তির চাপে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এখন বলা কঠিন কবে নির্বাচন কবে হবে । আর নির্বাচন হলেও তা কি আমাদের উপদেষ্টামলীদের মত করে হবে, না কি অন্য কোন শক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে?
সাজ্জাদ বিপ্লব
লেখক: সাংবাদিক, ডবি্লউ এন বি।

[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০০৭ সকাল ৯:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×