somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাগলা শহীদকে নিজে গুলি করেছিল ইলিয়াস আলী

২২ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিলেটের বিশ্বনাথের রামধানা গ্রাম।
সেই গ্রামের নিরীহ কৃষক ওয়ারেস আলি।
ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন।
এই সেই ইলিয়াস আলী.......

১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর তিনি ছিলেন জসিম উদ্দিন হলের আবাসিক ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই ইলিয়াস আলী যোগ দেন এরশাদের ছাত্রসমাজে। এসময় অস্ত্রবাজির রাজনীতি শুরু করেন। নতুন বাংলা ছাত্রসমাজের ক্যডার হিসেবে যোগ দিলেও পরে দলবদল করে ছাত্রদলের নেতা হয়ে ওঠেন ইলিয়াস আলী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায়ই দলে গ্রুপিংয়ের রাজনীতি ঢুকিয়েছিলেন ইলিয়াস আলী। গড়ে তুলেছেন নিজস্ব গ্রুপ। ছাত্রদলের ক্যাডার পরিচিতি দিয়েই উত্থান তার। একের পর এর ঘটনার নায়ক হয়ে জন্ম দিতে থাকেন অভন্তরীণ সংঘাত। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যায় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। ইলিয়াস আলী পরিণত হন ত্রাস সৃষ্টিকারী এক সন্ত্রাসনির্ভর ছাত্রনেতায়। বহু খুনের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সে কারণে একাধিকবার গ্রেফতার করা হয় তাকে। জেলে কাটে সময়। ৮৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ৮৮ সালের ১১ ডিসেম্বর ছাত্রদল নেতা বজলুর রহমান শহীদ ওরফে পাগলা শহীদ হত্যাকান্ড, ৮৯ সালের ২৯ নভেম্বর তার নেতৃত্বে ডাকসু কার্যালয় ভাংচুর, ৯২ সালের ৩ আগস্ট ছাত্রদলের রতন গ্রুপের সঙ্গে ইলিয়াস গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির নিহত হওয়া এবং এই সংঘর্ষের জের ধরে ৯২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মামুন ও মাহমুদ নাম দুই ছাত্রদল নেতার হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক ছিলেন ইলিয়াস আলী। মামুনকে হত্যা করে তার লাশ গুম করা হয়েছিলো সূর্যসেন হলের পানির ট্যাংকিতে।
এছাড়াও প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা মির্জা গালিব ও ছাত্রলীগ নেতা লিটন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৯১ সালে গ্রেফতার করা হয় ইলিয়াস আলীকে।

ওই বছর ক্ষমতায় আসে বিএনপি। তাই এক বছরের মধ্যেই ছাড়া পান ইলিয়াস আলী। এর পর দলের প্রত্যক্ষ মদদে ছাত্রদলে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন তিনি। ৯২ সালে ১৬ জুন ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন করা হলে রহুল কবির রিজভী আহমেদ সভাপতি ও এম ইলিয়াস আলী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

কিন্তু সন্ত্রাসী তখনও কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় বিএনপির শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা তার প্রতি বিরগভাজন হয়ে ওঠেন। মাত্র ৩ মাসের মাথায় ছাত্রদলের কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়। এ সময় বিএনপি ক্ষমতায় থাকা স্বত্বেও ৯৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মামুন ও মাহমুদ হত্যা মামলায় আবার গ্রেফতার হন ইলিয়াস আলী। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। ২ বছর কারাবাসের পর মুক্তি পান তিনি। শর্ত হিসেবে বিএনপির হাইকমান্ডকে ইলিয়াস আলী কথা দেন কেবলমাত্র তার নিজ এলাকা বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জে বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা ছাড়া অন্যকিছু নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।

এরপর ঢাকার রাজনীতি ছেড়ে সিলেটে যান ইলিয়াস আলী। কিন্তু সিলেট গিয়েই ভুলে বসেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দেওয়া তার ওয়াদার কথা।

সে সময় থেকেই ভংয়কর মূর্তি নিয়ে সিলেট দাপিয়ে বেড়ান এই নেতা। শুধু নিজ এলাকায় বিএনপি সংগঠিত করা নয় সিলেটে তাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের একটি শক্তিশালী গ্রুপ গড়ে উঠে। তিনি নিজেও তার বেপরোয়া আচরণ অব্যাহত রাখেন। নিজস্ব বলয় গঠন করে সিলেটের রাজনীতির আলোচনায় উঠে আসেন ইলিয়াস আলী।

১৯৯৬ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

সিলেটের অনেক সিনিয়র রাজনীতিবীদ ইলিয়াস আলীর ও তার দলবলের হামলার মুখে পড়েন। বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ এম সাইফুর রহমান, আবদুস সামাদ আজাদ, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, এসএমএ কিবরিয়া, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, আব্দুল মাল আবদুল মুহিতের মতো ব্যক্তিরা ইলিয়াস আলীর রাজনৈতিক কূটচালের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন।

শুধু সিলেট আর ঢাকায় নয় দেশের বাইরেও উশৃংখল আচরণের দায়ে পুলিশের নজরবন্দি হতে হয় ইলিয়াস আলীকে।
২০০০ সালে লন্ডনের মিল্টন কিন্স শহরে জয়পুর রেস্টুরেন্টে ওয়েটারকে হত্যার হুমকি দেন তিনি। রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে কঠোরভাবে হুশিয়ার করে দিয়ে যায় তাকে।

২০০১ সালে এমপি হওয়ার পর তার এলাকা বিশ্বনাথ বালাগঞ্জে ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করার অভিযোগ উঠে ইলিয়াস আলী বিরুদ্ধে। তার নির্বাচনী এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী আর প্রশাসনকে ইচ্ছেমতো দলীয়করণের প্রচেষ্টায় নামেন তিনি।

প্রকাশ্য আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মাঠে নামে ‘ইলিয়াস বাহিনীর লোক’ নামে পরিচিত একদল ক্যাডার-এমন অভিযোগ তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের।

এসব কিছুর প্রতিবাদ করারও সাহস ছিলো না মানুষের এমনকি ভুক্তভোগীদের। ২০০১ সালের ওইসব ঘটনার জের ধরে মামলা হয়েছে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন সকালে। সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়।

২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ এনে মামলা দুটি করেছেন আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ব্যবসায়ী বশারত আলী বাঁচা।

মামলায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ভয় দেখানো, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইলিয়াস আলী ও তার লোকেরা বাদীর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়।

এতসব অত্যাচার নিপিড়ণের অসংখ্য বিতর্কিত ঘটনার নায়ক ইলিয়াস আলী সবকিছু পাশ কাটিয়ে ফিল্মি স্টাইলে দেশব্যাপী পরিচিত হয়ে উঠেন।

সর্বশেষ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এ কিবরিয়া হত্যা এবং ব্রিটিশ হাইকমশিনার আনোয়ার চৌধুরীরকে হযরত শাহজালাল মাজার গেটে হত্যা চেষ্টার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে।

তবে এতকিছুর পরেও ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকা বিশ্বনাথ বালাগঞ্জের উন্নয়নে তার সময়ের অবদান এখনও লোকমুখে। সাধারণ মানুষ রাজনীতির কূটচাল ভুলে ইলিয়াস আলীকে তাদের উন্নয়নের কাণ্ডারী ভাবেন।

ইলিয়াস আলী নিঁখোজের পেছনে নিজ দলের প্রতিপক্ষ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, গোয়েন্দা সংস্থা, সরকার ও জামায়াতে ইসলামের হাত থাকতে পারে বলে অনুমান করছেন সিলেটবাসী।

আর সিলেট-লন্ডন কানেকশন, কোটি কোটি টাকার লেনদেন এসব বিষয় নিয়েও কথা শোনা যায়।

ইলিয়াস আলী জীবিত ফিরলেই হয়তো মূল তথ্য জানা যাবে। নয়তো সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ যে তথ্য উদঘাটন করবে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। আর নয়তো ইলিয়াস আলী উপাখ্যানের শেষ অংশ আর কখনোই জানা যাবে না।




২০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×