কোথাও কোন বায়োডাটা সাবমিট করতে গেলে লিখি ধর্ম ইসলাম। কোন কোন ফরম্যাটে গোত্র লেখা থাকলে লিখি সুন্নী। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে আমি অনিয়মিতভাবে ধর্ম পালন করি। শুক্রবারে অন্য সবার মত নিয়মিত যান্ত্রিকভাবে নামাজ পড়তে যাই। মসজিদে যাওয়ার পর হুজুরের বক্তব্য শুনি। একপর্যায়ে হুজুর বলেন ডানদিকের বাক্সগুলো চালান করে দেন। এখন আর ওড়নার মত একটা কাপড়ের কোনা ধরে টাকা তুলতে কোথাও দেখি না। মাঝে মাঝে টাকা দিই, মাঝে মাঝে দিই না। নামাজ পড়ে দোয়ায় সামিল হয়ে চলে আসি। কিন্তু নামাজ পড়তে গিয়ে এবং হুজুরের বক্তব্য শুনে মনে তেমন কোন ভাবান্তর হয় না। শুধু মনে হয়-
যে মসজিদটাতে নামাজ পড়ছি সেই মসজিদটার ইট-কাঠ-পাথর সব বিধর্মীদের আবিষ্কার, কয়েকতলা এই মসজিদ-এ যত প্রযুক্তি ব্যবহার হয় সব অমুসিলমদের অবদান। যে কাপড়টা পড়ে নামাজ পড়ি সেটাও তাদের প্রযুক্তির অবদান। মাথার উপর ফ্যান ঘোরে, টাইলসে মাথা লাগিয়ে সেজদা দিই, ট্যাপের পানি ছেড়ে অজু করি, মাইকে আজান শুনি, মাইক্রোফোনে খোতবা শুনি। আমাদের বিলাসের অন্ত নেই। হুজুরের বক্তব্যে কখনো শুনি না যে, আপনারা সমকালীন বিজ্ঞান আয়ত্ব করেন। বিধর্মীরা ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে।
আমার এখন বয়স হয়েছে। আগের মত শক্তি সামর্থ নেই। মসজিদের সিড়ি বেয়ে দোতালায় উঠতে কষ্ট হয়। ধীরে উঠতে গিয়ে দেখি- ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ধাক্কা দিয়ে, পা মাড়িয়ে তর তর করে উঠে যাচ্ছে। কোনরকমে উঠে যাও বা বসলাম; হুজুরের মূল্যবান কথা গুলো মনযোগ দিয়ে শুনবো ছোট বড় সব মানুষের কথায় মনে হয় এটা একটা জলসা ঘর। খোতবা শুরু হয়ে যায়- কথার গুঞ্জন থামে না। প্রথম রাকাত শেষ হয়ে দ্বিতীয় রাকাতের সুরা পড়া শুরু হলে শব্দ কমতে কমতে থেমে যায়। আবার যেইমাত্র সালাম ফিরানো শেষ হলো সেইমাত্র আবার ছোট বড় অনেকেই ফেরত যাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে উঠেন। একটু যে মোনাজাত করার জন্য বসে আছি, আমার মত সব বুড়ো মানুষদের মাড়িয়ে চলে যাওয়ার মধ্যে কেউ কোন অন্যায় দেখে না বরং বসে থাকাটাই অন্যায়। ছোটবেলায় জেনেছি সমাজের মৌলিক নিয়মটা হলো বয়ষ্কজনদের শ্রদ্ধা সন্মান করা। এই মৌলিক নিয়মটাও কেউ মসজিদ এসেও মানে না।
বিদেশের গির্জাগুলোতে গেলাম- কোন পাদ্রীকে টাকা তুলতে দেখলাম না। কোন হৈ হুল্লোড় করে গির্জার পবিত্রতা ছোট বড় কাউকে নষ্ট করতে দেখলাম না। ছোটদেরকে দেখলাম না বড়দেরকে অসন্মান করতে।
আমার ধর্ম, আমার বিশ্বাস যে সবচেয়ে ভালো তা নিয়ে যদি আমার সন্দেহ তৈরী হয়েই থাকে তবে তাতে কী খুব পাতকী হয়ে পড়বো?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



