বর্তমানের জেলা প্রশাসক/অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদেরই তো কোন কাজ নেই। প্রতিটা মিটিং-এ সভাপতিত্ব করা, এমিপ/মন্ত্রীদের প্রটোকল দেয়া, এলআর ফান্ডের জন্য টাকা সংগ্রহ করা, কোনকিছু না জেনেও সবকিছুতে মাতবরি করা ছাড়া তাঁদের আর কি কাজ আছে কেউ বলবেন কি?
জেলা প্রশাসকের ইংরেজী হলো ডেপুটি কমিশনার। বাংলা হওয়া উচিত উপ-কমিশনার। এরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হলে দেশের জন্য ভাল হতো। কিন্তু এরাতো সরকারের কর্মচারী। বঙ্গবন্ধু-কে হত্যার পর এরাই খন্দকার মোশতাক-কে বৈধতা দিয়েছিল। এরাই বারংবার সংবিধান বিকৃত করেছে। বাংলাদেশে বিচারের নামে যত অবিচার হয়েছে সব এদের হাতেই হয়েছে।
এদের পড়াশুনা বাংলায়, ইতিহাসে, ইংরেজীতে অথবা অন্য সাবজেক্টে- কিন্তু এরা দিব্যি ম্যাজিস্ট্রেটের কাজ চালিয়ে গেছেন বছরের পর বছর। যাওবা আদালতের নির্দেশনামূলে এদের ম্যাজিস্ট্রেসি কেড়ে নেয়া হয়েছিল, নতুন করে তা আবার বিভিন্ন নামে বেনামে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। একজন ল' পাস করা বিচারক যেখানে বিচার করতে হিমশিম খেয়ে যান, সেখানে এরা বিচারক পদের ক্ষমতা এবং মর্যাদার জন্য লালায়িত; উদ্দেশ্য বিচার করা নয় অবিচার করা।
মজার ব্যাপার হলো- এরা মাঠ প্রশাসনের প্রায় সবগুলো কমিটির সভাপতি। কিন্তু সভাপতি হিসেবে কোন সমস্যা বা ব্যর্থতার জন্য তাঁদের কোন শাস্তি ভোগ করতে হয় না। যেমন, সার কমিটির সভাপতি উপজেলা পর্যায়ে নির্বাহী অফিসার, আর জেলায় জেলা প্রশাসক। সার সংকট হলে বদলি করা হয় কৃষি অফিসার বা উপপরিচালক-কে। একই রকমভাবে আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতিও যথাক্রমে নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসক। শাস্তি পায় কে? ওসি অথবা এএসপি অথবা এসপি। আর এতকাল সভাপতি থেকে থেকে তারা কি করেছেন? কোন সিদ্ধান্তইতো সভাপতির অনুমোদন ছাড়া হয় না। কাজের কাজতো কিছুই হয়না বরং সকল সিদ্ধান্তই দীর্ঘসূত্রিতায় পর্যবসিত হয়।
যে দেশে প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলীর দাম সচিব/জেলাপ্রশাসক/নির্বাহী অফিসারের মত কেরানীকূলের নিচে সে দেশের উন্নতি সুদুর পরাহত। সামন্তযুগে রাজারা রাজ কর্মচারী রাখতেন; রাজকর্মচারীরা প্রায় রাজার সমান বিলাস ব্যসনে থাকতো আর রাজাকে জবাবদিহীতার হাত থেকে রক্ষা করতো। প্রকৃত জনকল্যানকারী রাজা তাই ছদ্মবেশে বেরিয়ে পড়তেন- দেখতেন তার রাজ্যে প্রজারা কেমন আছে। দুষ্ট কাজী আর আমলাদের শায়েস্তা করার জন্য আর কোন পথ ছিল না। কিন্তু অনেক আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আছে- সেগুলোর শাসন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে আমাদের দেশের উপযোগী শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা উচিত এখনই।
আমাদের দেশের বর্তমান শাসন ব্যবস্থা সেই উপনিবেশিক আমলের যেখানে জনগণের কল্যান মুখ্য ছিল না- ছিল খাজনা আদায় এবং লুন্ঠন। সেই শাসন ব্যবস্থার কারনেই বিভিন্ন সরকারের আমলে এত বড় বড় দূর্ণীতি হয়েছে। দূর্নীতিবাজ মন্ত্রী/এমপি/নেতারা কেউ কেউ শাস্তি পেয়েছেন, কেউ কেউ সামাজিকভাবে তিরষ্কৃত হয়েছেন; কিন্তু কোন সচিব/উপসচিব/জেলাপ্রশাসক/নির্বাহী অফিসার কি শাস্তি পেয়েছেন? অথচ তারাতো সরকারের আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা! সরকারী অর্থতো তাদের স্বাক্ষর ছাড়া কোষাগার থেকে বের হয়নি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



