somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য কিছু প্রস্তাবনা

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন তা ব্যকরণগত বিচারে ভুল হলেও তাঁর মূল বক্তব্যটি অনুধাবন করলে অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কারণ বাংলাদেশের অন্যতম বড় সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। একমাত্র ‘ডিজিটালাইজেশন’ এর মাধ্যমেই দুর্নীতি কমানো সম্ভব। সেজন্য কিছু কিছু বিষয়ের দিকে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর উপদেষ্টাদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই।

১।সরকারী ক্রয়:
ক) টেন্ডার/কোটেশন: সরকারী ক্রয়খাতে টেন্ডারের মাধ্যমে বড় বড় দুর্নীতি হয়ে থাকে। এখানে প্রকৃত ব্যবসায়ী বা সরবরাহকারী অনেক দুরে পড়ে থাকেন। রাজনৈতিক বা আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা তাদেঁর পৃষ্ঠপোষকরা বিভিন্ন ধরণের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে বা টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে। যদি টেন্ডার সাবমিট করা এবং টেন্ডারের ফলাফল অন-লাইনে করা যায় তাহলে অনেকখানি দুর্নীতি কমে যাবে। ধীরে ধীরে প্রকৃত ব্যবসায়ী এবং সরবরাহকারীরা টেন্ডার পেতে থাকবেন। সরকারও লাভবান হবেন।

খ) হিসাবরক্ষণ: সরকারের বিভিন্ন বিল-ভাউচার সমূহ, আয়ন-ব্যয়ন, হিসাবরক্ষণ ইত্যাদি ডিজিটালাইজড করা। বর্তমানে একাউন্টসের ব্যয়ের কয়েকটি খাতকে কোড নম্বর প্রদান করা হয়েছে মাত্র। এটা ডিজিটালাইজেশন নয়। কে কখন কিভাবে কখন খরচটি অনুমোদন করলেন, কোন যুক্তিতে করলেন তার রেকর্ড থাকতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে গৃহীত সরকারী আর্থিক সুযোগ-সুবিধাদি, দান-অনুদান, বরাদ্দ ও ব্যয় ইত্যাদিরও রেকর্ড থাকতে হবে।

২। জনপ্রশাসন ও কর্মী ব্যবস্থাপনা:
ক) জনপ্রশাসন: সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ওয়েবসাইট করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এটা ভাল লক্ষণ। কিন্তু ওয়েবসাইটে প্রদত্ত সেবার অঙ্গীকার আর প্রকৃত সেবা প্রদান এক কথা নয়। সেজন্য প্রদত্ত সেবাও রেকর্ড করা প্রয়োজন। এছাড়া জনপ্রশাসন যে সমস্ত কাজ করার কথা, কত সময়ের মধ্যে তা করার কথা, কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, অগ্রগতি না হলে তার কারণ এ সমস্তই ওয়েব সাইটে থাকতে হবে।

খ) কর্মী ব্যবস্থাপনা: সরকারী, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থাসমূহে কর্মচারীর সংখ্যা অনুযায়ী সম্পাদিত কাজের মান ও পরিমান খুবই কম। এজন্য কর্মচারীদের হাজিরা ডিজিটালাইজড করা দরকার। এছাড়া নিয়োগ, বদলী ও পদোন্নতিও ডিজিটালাইজড করা প্রয়োজন, যেন কোন কারনে পদোন্নতি বা বদলীজনিত অবিচারের কারনে কর্মী কর্মবিমুখ হয়ে না পড়েন।

৩। ভূমি ব্যবস্থাপনা:
ক) ভূমির ডিজিটাল ম্যাপ: বর্তমানে জিআইএস ও জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুব সহজেই ভূমিসমূহের ডিজিটাল ম্যাপ তৈরী করা সম্ভব। ভূমি ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের কারনে একদিকে যেমন কৃষি জমি অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে, তেমনি মামলা মোকদ্দমা ও বিবাদের কারনে অনেক কৃষি জমিই অনাবাদী থেকে যাচ্ছে এবং ভূমি দস্যুদের দখলে চলে যাচ্ছে।
খ) ভূমির রেকর্ড: ভূমির মালিকানা অদল-বদল এর সময় যে রেকর্ড করা হয় তা একটি জটিল ও দুর্নীতিযুক্ত বিষয়। এরসাথে সরকারী কর্মচারীরা জড়িয়ে থেকে নৈতিকতা ভ্রষ্ঠ হচ্ছেন। অথচ এই ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল ম্যাপের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ রেখে ডিজিটালাইজড করা সম্ভব।

৪। ব্যবসা-বানিজ্য:
ক) আমদানী-রফতানী: এই ক্ষেত্রে শিল্প উন্নত দেশসমূহ ইতোমধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করছে। আমদানী-রফতানীর পণ্যসমূহের একটি চলমান ডাটাবেজ এবং লিংকড একটি ডিক্লারেশন পদ্ধতি ব্যবসা-বানিজ্যকে আরও স্বচ্ছ করতে পারে।
খ) ব্যবসা: বিক্রয়কেন্দ্র ও বিপনীসমূহতে খুব সহজেই বার-কোড প্রবর্তন বাধ্যতামূলক করা যায়। কাঁচামালসমূহ প্যাকেটজাত না হলেও বারকোড দেয়া যেতে পারে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স প্রদানকালে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর সামগ্রিক তথ্য রেকর্ডভূক্ত করলে একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজের মাধ্যমে অপব্যবসায়ীদের তৎপড়তা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পরিবহন ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে সহজেই যানবাহন নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য বিধিব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। কৃষক ডাটাবেজ তৈরী করে দুর্নীতিমুক্তভাবে কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা করা যায়।

৫। আয়কর ও ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা: আয়কর আদায় ও বিভিন্ন রাজস্ব ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ডিজিটালাইজড করে সরকার বিপুল পরিমান আয় করতে পারে। যা দিয়ে উন্নয়ন ব্যয় মিটানো সরকারের জন্য কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বর্তমানে আদায়কৃত রাজস্বের একটি বড় অংশ যে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় টাউটের হাতে চলে যাচ্ছে তা কে না জানে।

প্রকৃত অর্থে, বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার কেনার হিড়িক পড়ে গেছে। সরকারী কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কম্পিউটার কেনা হলেই মনে করছেন ডিজিটালাইজড হয়ে গেল। কেউ কেউ আবার আরও একটু এগিয়ে একটা ওয়েবসাইট দাড় করাচ্ছেন এবং ডিজিটালাইজড করেছেন বলে মহাতৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন। এভাবে চললে কম্পিউটারে দেশ ভরে যাবে; ডিজিটালাইজড আর হবে না।



৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×