somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুক্তি এবং বিশ্বাসের পারস্পরিক সহাবস্থান কি অসম্ভব? আস্তিক এবং নাস্তিকীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি গঠনমূলক আলোচনার চেষ্টা- প্রথম পর্ব।

১৩ ই আগস্ট, ২০১১ সকাল ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখার শুরুতেই নিজের সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট করে না বলে দিলে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থেকে যাবে, তাই নিজের সম্পর্কে কিছু বলে নিচ্ছি।

আমি আস্তিক নই, আমি নাস্তিকও নই। ঈশ্বর সম্পর্কে আমার ধারণা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে অক্ষম। কারণ ভাষা হচ্ছে মানুষের সৃষ্টি, ভাব প্রকাশের খুব সাধারণ একটি মাধ্যম। এই মাধ্যমে দিয়ে মানুষ জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কেই নিজের ভাব প্রকাশ করতে পারে। অভিজ্ঞতা লব্ধ, পর্যবেক্ষণলব্ধ বিষয়কেই প্রকাশ করা সম্ভব ভাষা দিয়ে। কিন্তু ঈশ্বরের ধারণা খুবই আত্মিক উপলব্ধির ব্যাপার, যা ভাষাতে প্রকাশ করাই সম্ভব নয়।

সাধারণভাবে বলতে পারি, জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার যে সম্পর্ক, রাধার সাথে কৃষ্ণের যে সম্পর্ক, স্বর্গীয় পিতার সাথে যীশুর যে সম্পর্ক, বুদ্ধের সাথে প্রকৃতির যে সম্পর্ক, মুহাম্মদের সাথে তার স্বর্গীয় আশেকের যে সম্পর্ক, সক্রেটিসের সাথে জ্ঞানের যে সম্পর্ক, চৈতন্যদেবের সাথে প্রেমের যে সম্পর্ক, লালনের সাথে সঙ্গীতের যে সম্পর্ক, আরজ আলীর সাথে জিজ্ঞাসার যে সম্পর্ক, আমার সাথেও ঈশ্বরের একই সম্পর্ক। এই সম্পর্ককে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমি জানিও না সে আছে কি নেই, শুধু জানি, এক প্রেমময় সম্পর্ক রয়েছে কোন এক সত্ত্বার সাথে, যা অজ্ঞেয়-ব্যাখ্যাতীত। যাকে ধরা যায় না ছোয়াঁ যায় না, যে থেকেও নাই, আবার না থেকেও আছে।

কথাগুলো হয়তো আধুনিক যুক্তিবাদীদের কাছে হাস্যকর মনে কতে পারে, কঠিন নাস্তিকরা আমার কথাগুলোকে হেসেই উড়িয়ে দিতে পারে, কিন্তু আমি শূধু আমার মতামত ব্যাক্ত করলাম। আপনারও যে আমার মতের সাথে একমত হতে হবে, এমন কোন কথা নেই। আমি মনে করি "যত মত তত পথ"। এবং প্রত্যেক মানূষই তার বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, স্বাধীনতা এবং মূল্যবোধ নিয়ে মাথা উচু করে বেঁচে থাকবে। আপনার দ্বিমত পোষনের অধিকার অবশ্যই রয়েছে। তবে দ্বিমতের সাথে গালাগালি এবং অভব্য আচরণ আমি আশা করবো না।

ব্লগে রেজিস্ট্রেশনের পরে বহু লেখা চোখে পরেছে, আস্তিক নাস্তিক দ্বন্দ্ব দেখতে দেখতে অনেক সময় বিরক্ত হয়েছি, অনেক সময় অনেক ভাল আলোচনা দেখে অনুপ্রানিত হয়েছি, কিছু লেখার ইচ্ছা তৈরি হয়েছে, কিন্তু বিরক্তিকর কাঁদাছোড়াছুড়ি দেখে আমি অত্যন্ত হতাশ বোধ করেছি। এই লেখাটিও হয়তো কেউ পড়েই দেখবেন না। তাহলেও আমি আমার মত করে কিছু আলোচনা করতে চাচ্ছি। আশা করবো সম্মানিত ব্লগারগন তাদের বিজ্ঞ মতামত দিয়ে আমার চিন্তার নতুন খোরাক যোগাবেন।

প্রথমেই যে বিষয়টি তুলে ধরতে চাই, তা হচ্ছে ব্লগে ইসলাম বিদ্বেষ। না, ইসলাম বিদ্বেষ নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। কেউ একটা মতাদর্শ অপছন্দ করতেই পারেন, ঘৃণা করার অধিকারও সবার রয়েছে। যেমন আমি ঘৃণা করি নাৎসীবাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং মৌলবাদ। সেভাবে যে কারো অধিকার রয়েছে কোন নির্দিষ্ট মতাদর্শের সমালোচনা করার, সেটাকে ঘৃণা করারও।

কিন্তু ইসলাম বিদ্বেষ সমগ্র বিশ্বে বর্তমানে কেন জানি মনে হচ্ছে মুসলিম বিদ্বেষে পরিণত হচ্ছে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর বলেই আমি মনে করি। এই ধরণের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ-জাতিগত বিদ্বেষ অবশ্যই অমার্জনীয় এবং তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। ইসলামের সমালোচনা হতে পারে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সমালোচনা হতে পারে, এমনকি আল্লাহ সুভানাল্লাহ তালারও সমালোচনা করার অধিকার সকলের রয়েছে। কিন্তু মুসলিমদের প্রতি কোন ধরণের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, কোন উষ্কানী মূলক আচরণ কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। আমার এই লেখাটির বিষয়বস্তুও সেটাকেই কেন্দ্র করে। আপনাদের কর্মকান্ডের ভেতরে নাক গলানো এবং মাতব্বরি করার কোন ইচ্ছাই আমার নেই, আমি শুধু নিজের মতামত ব্যাক্ত করছি। ভাল না লাগল অপরাধ মার্জনীয়।

পৃথিবীর ৯৫ ভাগ মুসলিম জনগোষ্টী অত্যন্ত দরিদ্র, তারা বেশিরভাগই বসবাস করেন আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশে। সৌদী আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর কথা বাদ দিলে, পৃথিবীর কোথাও মুসলিম জনগোষ্টী ভাল নেই। তারা আকন্ঠ অশিক্ষা আর কুসংস্কারে নিমগ্ন, তারা জ্ঞান বিজ্ঞানের সবচাইতে পিছিয়ে পরা জনগোষ্টী, তারা অধিক জনসংখ্যা আর দুর্নীতিতে হাসফাস করে কোনমতে টিকে আছে পৃথিবীর বুকে। খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য তাদের সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করে যেতে হচ্ছে, কিন্তু তার সুফল ভোগ করছে চিহ্নিত মানুষ, যারা তাদের ঘামের মূল্য তাদের দিচ্ছে না, তাদের শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঠকিয়েই যাচ্ছে।

এর উপরে তাদের ঘাড়ে এসে জুটেছে মৌলবাদী তকমা। যেখানেই মুসলিম দেখা যাচ্ছে, "উন্নত বিশ্ব" নামক একটি সংঘবদ্ধ জাতিগোষ্টী সেখানেই তাদের টেরোরিস্ট আখ্যা দিয়ে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। "উন্নত বিশ্ব" নিজেরাই লাদেন তৈরি করছে, আবার নিজেরাই লাদেনকে হত্যা করে নিজেদের লোকের কাছে বীর সেজে ফায়দা লুটে যাচ্ছে। মাঝখান দিয়ে মুসলিমদের ভাগ্যে জুটছে মৌলবাদী খেতাব, নির্যাতন, নিপীরণ, বোমা, রক্ত আর অত্যাচার।

তাই ব্লগের বিজ্ঞ নাস্তিকদের কাছে প্রথমেই আমার অনুরোধ, আপনারা ইসলাম বিদ্বেষী হোন, তাতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই, কিন্তু অনুগ্রহ করে কখনই মুসলিম বিদ্বেষীতে পরিণত হবেন না। এই হতদরিদ্র সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ আপনাকে কোন সাফল্যই এনে দেবে না, বরঞ্চ এই সম্প্রদায়টাকে আরো বেশি হিনমন্য এবং হিংস্র করে তুলবে ধীরে ধীরে।

আমি একে একে ইসলাম এবং মুহাম্মদ সম্পর্কে আমার ব্যাক্তিগত ধারণা আপনাদের জন্য লিখে যাবো। আমি আশা করবো আপনারা আমার লেখাটিকে আপনাদের তীক্ষ্ণ যুক্তি এবং প্রাজ্ঞ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখবেন, আমার লেখাগুলোর সমালোচনা করবেন।

আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১১ সকাল ১১:৩৬
৫টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×