তিনটি মৌলনীতি ও তার প্রমাণ পঞ্জি , ১/২
মূলঃ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব
অনুবাদঃ মুহাম্মাদ ইব্রাহীম
পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি।
হে (পাঠক!) আল্লাহ্ তোমার উপর অনুগ্রহ বর্ষণ করুন!
অবহিত হও যে,
চারটি বিষযে জ্ঞানলাভ করা আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্যঃ
(এক) বিদ্যাঃ এমন বিদ্যা যার সাহয্যে দলীল প্রমাণ সহ আল্লাহ, তাঁর নাবী এবং দ্বীন-ইসলাম সম্পর্কে সম্যক পরিচয় লাভ করা যায়।
(দুই) ঐ বিদ্যার বাস্তব রুপায়ণ।
(তিন) তার দিকে (মানুষকে) আহবান করা।
(চার) এই কর্তব্য পালনে সম্ভাব্য কষ্ট ও বিপদ-বিপর্যয়ে ধৈর্য ধারণ।
উপরোক্ত কথার প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর বাণীঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
وَالْعَصْرِ. إنَّ الْإنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ. إلاَّ الَّذيْنَ أمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّلِحاتِ وتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتواَصَوْا بِالصَّبْر.
অর্থঃ পরম করুণাময় আল্লাহর নামে।(সূরা আল-আর্স)
“আবহমান কালের সাক্ষ্য সকল মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজগুলি সম্পাদন করেছে, আর যারা পরস্পরকে সত্য-নিষ্ঠা ও ধৈর্য ধারণের নিরন্তর উপদেশ দিয়ে থাকে (শুধুমাত্র তারা ছাড়া)।”
উপরে বর্ণিত সূরা সম্পর্কে ইমাম শাফে‘য়ী (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি) এই অভিমত পেশ করেছেনঃ “যদি আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে এই সূরা ছাড়া অন্য কোন অকাট্য ও শাণিত যুত্তি অবতীর্ণ না করতেন, তাহলে এ সূরাই তাদের জন্য সব দিক দিয়ে যথেষ্ট হতো।”
ইমাম বুখারী রাহমাতুল্লাহ আলায়হি তার সংকলিত সহীহ বুখারীর একটি অধ্যায়ের শিরোমান দিয়েছেন: বিদ্যার স্থান হচ্ছে কথা ও কাজের পূর্বে।
এর সমর্থনে কুরআনের ঘোষণাঃ
"فَاعْلَمْ أَنَّهُ لآ إلَهَ إِلاَّ اللهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ"
আয়াতের অর্থঃ
“কাজেই জেনে রাখো, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনই ইলাহ নেই। আর (হে রাসূল) নিজের (এবং সকল মুসলিম নর-নারীর) ভুল-ত্র“টির জন্য আল্লাহর নিকট মার্জনা ভিক্ষা কর।” (সূরা মুহাম্মাদঃ ১৯)
এখানে কথা ও কাজের পূর্বে জ্ঞান ও বিদ্যার কথাই আল্লহ প্রথমে উল্লেখ করেছেন। জেনে রাখো, আল্লাহ তোমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর নিন্মোক্ত তিনটি বিষয়ে জ্ঞানলাভ এবং সেই মতে কাজ করা অবশ্য কর্তব্য।
উক্ত তিনটি বিষয় এইঃ
এক ঃ আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, জীবিকা প্রদান করেছেন এবং তিনি আমাদেরকে কোন দায়িত্ব না দিয়ে এমনিই ছেড়ে দেননি। (বরং হেদায়াতের জন্য) তিনি আমাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছেন। যে ব্যক্তি তাঁর আদেশ পালন করবে তার বাসস্থান হবে জান্নাত এবং যে ব্যক্তি তাঁর আদেশ অমান্য করবে তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম্, এর সমর্থনে কুরআনের দলীল হচ্ছেঃ
إِنَّا أَرْسَلْنَآ إِلَيْكُمْ رِسُوْلاً شَاهِداً علَيْكُمْ كَمَآ أَرْسَلْنَا إِلَى فِرْعَوْنَ رَسوْلاً. فَعَصى فِرْعَوْنُ الرَّسُولَ فَأَخَذْناهُ أَخْذاً وَّبِيْلاً.
আয়াতের অর্থঃ
“নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের উপর সাক্ষী স্বরূপ, যেমন পাঠিয়েছিলাম একজন রাসূল ফেরআউনের প্রতি। কিন্তুু ফেরআউন সেই রাসূলের বিরূদ্ধাচরণ করলো। ফলে তাকে পাকড়াও করলাম অত্যান্ত কঠোর ভাবে।”
(সূরা আল-মুয্যাম্মেলঃ ১৫-১৬)
দুইঃ ব¯ত্তত ঃ ইবাদত বন্দেগীর ক্ষেত্রেও আল্লাহ কাউকেই তাঁর অংশীদার বা শরীক হিসেবে পছন্দ করেন না- চাই তিনি কোন নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা হোন কিংবা কোন প্রেরিত রাসূলই হোন না কেন। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনের দলীল এইঃ
وَأَنَّ الْمساجِدَ لِلهِ فَلاَ تَدْعُوْا مَعَ اللهِ أَحَداً.
আয়াতের অর্থঃ
“নিশ্চয়ই সিজদার স্থান সমূহ কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য, অতএব আল্লাহর সহিত অন্য কাউকে আহ্বান করো না।
(সূরা আল-জিনঃ১৮)
তিনঃ যারা নবীর আনুগত্য বরণ করেন এবং আল্লাহর অদ্বিতীয় সত্তাকে (কথায় ও কাজে) মেনে নেন, তাঁদের পক্ষে এমন লোকদের সংগে বন্ধুত্ব করা মোটেই বৈধ নয়, যারা আল্লাহ ও রাসূলের বিরূদ্ধাচরণকারী। ঐ লোকেরা যদি ঘনিষ্ঠ আতœীয়ও হয়, তথাপিও নয়।
এর সমর্থনে কুরআনের প্রমাণ হচ্ছেঃ
لاَ تَجَدُ قَوْماً يُّؤْمِنُوْنَ بَاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ يُوَآدُّوْنَ مَنْ حَآدَّ الله وَرَسُوْلَهُ وَلَوْ كَانُوْا آبائَهُمْ أَوْ أبْنَآءَهُمْ أَوْ إِخْوانَهُمْ أَوْ عَشِيْرَتَهُمْ أُولئكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الإيْمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوْحٍ مُّنْهُ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِها الْأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ أُولئكَ حِزْبُ اللهِ أَلَآ إِنَّ حِزْبَ اللهِ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.
আয়াতের অর্থঃ
“আল্লাহ ও আখেরাতের উপরে বিশ্বাস স্থাপনকারী এমন কোন স¤প্রদায়কে আপনি পাবেন না। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারীদের সংগে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে পারে। হোক না কেন তারা বিশ্বাসীদের পিতা, পুত্র বা ভ্রাতা কিংবা গোত্র গোষ্ঠী। আল্লাহ এদের হ্রদয়ে ঈমানকে শক্তিশালী করে রেখেছেন এবং তাঁর পক্ষ হতে প্রেরিত (ফেরেশতা তথা) আতিœক শক্তি দ্বারা তাদেরক সাহায্য করেছেন। এবং তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করে দেবেন যার নিুদেশ দিয়ে বয়ে চলেছে স্রোতস্বিনী, সেখানে তারা অবস্থান করবে চিরকাল। আল্লাহ সšত্তষ্ট হয়েছেন তাদের উপর এবং তারাও সšত্তষ্ট আল্লাহর উপর। ব¯ত্ততঃ এরাই হচ্ছে আল্লাহর সেনাদল। জেনে রাখো, আল্লাহর এই সেনাদলই হবে পরিণামে সফলকাম।” সূরা আল-মুজাদেলাহ্ঃ ২২)
জেনে রাখো- (আল্লাহ তাঁর আনূগত্য বরণ ও আদেশ পালনের জন্যে তোমাকে পথ প্রদর্শন করুন) নিশ্চয়ই একনিষ্ঠ আনুগত্যই হল মিল্লাতে ইবরাহীমের মূলকথা। উহা এই যে তুমি কেবলমাত্র আল্লাহর দাসত্ব বরণ করবে এবং কেবলমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে খালেস করবে। আর (মূলতঃ) আল্লাহ সমগ্র মানব জাতিকে এরই আদেশ দিয়েছেন এবং এ উদ্দেশ্যেই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।
যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ
وَمَا خَلَقْتُ الجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُوْنِ.
আয়াতের অর্থঃ
“আমি জ্বিন ও মানব জাতিকে কেবল এ জন্যই পয়দা করেছি যে, তারা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে।”(সূরা আল যারীয়াতঃ ৫৬)
‘তারা আমারই ইবাদত করবে’-এর অর্থ তারা আমাকে এক ও একক বলে জানবে। মূলকথা আল্লাহর শ্রেষ্ঠ আদেশ হচ্ছে ‘তাওহীদ’। এর অর্থ সর্বপ্রকারের আনূগত্য এককভাবে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট করা। পক্ষান্তরে তাঁর প্রধানতম নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে শির্ক। তার অর্থ আল্লাহর সংগে অন্য কাউকে আহবান করা। পবিত্র কুরআন থেকে এর প্রমাণ হচ্ছেঃ
وَاعْبُدُوا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا
আয়াতের অর্থঃ
“এবং তোমরা কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে, আর অন্য কোন কিছুকেই তাঁর সংগে শরীক করবে না।”(সূরা আন নিসাঃ ৩৬)
--------------------- বাকিটুকু পড়তে Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৩:৪৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




