somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হায় হিমছড়ি

০৫ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক বছর আগে একবার হিমছড়ি গিয়েছিলাম, সুন্দর ছিল জায়গাটা। ঝর্ণা ছিল, সেই ঝর্ণায় ভেজার অবস্থা ছিল, ঝর্ণার নিচ অনেকখানি পানি ছিল- নিলচে সবুজ রংয়ের। সেসময় ঢুকতে গিয়ে টোল দিয়েছিলাম কিনা মনে নাই, দিলেও মনে হ্য় খুব বেশি না। কিন্তু একটা ঝর্ণা, মাঝারি উচ্চতার কয়েকটা পাহাড়-একপাশে সমুদ্র…আমার মনে আছে। তাই মাসখানেকের জন্য বাংলাদেশে বাংলাদেশে বেড়াতে আসা ইউক্রেইনের বন্ধু জারিনা আব্দল্লাইভা, আমার ছোটবোন মালিহা ওয়াদুদকে বারবার তাড়া দিচ্ছিলাম হোটেলের কাছাকাছি সমুদ্র থেকে ওঠার জন্য। বল্লাম হিমছড়ি চল, ওখানে গিয়ে আবার ভিজিস। রওনা হলাম, সাথে কাপড়ও নিলাম- যদি পাল্টাতে হয়।

ঢোকার মুখেই ত্রিশ টাকার টোল, আর বিদেশিদের জন্য ৩ ডলার সমপরিমান দিয়ে ভেতরে ঢুকে আমি তো…ঢুকেই মনে হবে বীচের পাশের মার্কেটে এসেছি। দু-এক রকম ঝিনুকের মালা-কানের দুল, আর সব প্লাস্টিকের চাইনিজ জিনিস। জারিনা আর আমি চীনে এক-ঘরে থাকি, ও আমার রুমমেট। প্রায় দুইবছরের অভ্যস্ত চোখে আমাদের কাছে চীনা জিনিসকে বাংলাদেশের ঐতিহ্য বলে চালানোর চেষ্টা করা বৃথা।খারাপ লাগল, এখানেও!

পাহাড়ের চূড়ায় উঠছি, পুরোটা পথ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে চিপ্স, চানাচুরের প্যাকেট, পাহাড়ের ঢালে প্লাস্টিকের পানির বোতল…আমরা স্মার্ট হচ্ছি, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই ফ্লাস্কে পানি আর টিফিন বক্সে ঘরের খাবার বয়ে বেড়াই না। চানাচুর থেকে শুরু করে মটর ভাজা- সব বাতাসরুদ্ধ প্যাকেটে করে বাজারে পাওয়া যায়, সেই সব প্যাকেট আমাদের আধুনিকতা, সভ্যতা আর ক্রয়ক্ষমতার প্রমাণ হয়ে পড়ে আছে এদিক-ওদিক। আর যারা হিমছড়ির ছয়লাখ টাকার গেট এবছর দেড়কোটি টাকা দিয়ে নিলাম করে পেয়েছে- তারা পাহাড়ের চূড়ায় ক্যান্টিন বানিয়েছে- সেই ক্যান্টিনে ১৫ টাকার পানির বোতল ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। ওদের রান্নাঘরের বর্জ্য ফেলবার সহজতম জায়গা হল পাহাড়ের ঢাল। কেউ কিচ্ছু বলবার নেই। কেউ থামায় না। যেই পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে ২০ মিনিটও লাগে না, সেখানে কেন দোকানে দোকানে মিনারেল ওয়াটার, চিপ্স-চানাচুর বিক্রি হবে? সুপেয় পানির বড় একটা ট্যাংক-পানি পানের গ্লাস, কল রাখলেই হয়! গেটের বাইরে নোটিশ দেওয়া থাক পর্যটকদের পানি সাথে নিয়ে যাবার জন্য। যে দেশের মানুষ জানে না পাহাড়ে চিপ্সের প্যাকেট ফেলতে নেই- তাদের কাছে সিঙ্গারা-কচুরি বেচলেই হয়। আর ভেতরে ময়লা ফেলার জায়গাও তো নেই। গেট-টোল নিয়ে যারা ঝাড়ু পর্যন্ত দেয়না, তাদের নিয়ম করে দেয়া হোক ভেতরে কী থাকবে, কী বেচবে এসব নিয়ে। তারা খালি বেড়াতে আসা মানুষের কাছ থেকে পয়সাই নিয়ে যাচ্ছে, আর নষ্ট করছে হিমছড়ি। রাষ্ট্র ও ক্ষমতাবানদের মদদ পেয়ে এভাবেই শেষ হয়ে গেছে হিমছড়ি, আমি ‘যাচ্ছে’ বলব না- আর কিছু বাকি নেই।

ঝর্ণার সামনের জলাশয় বলে আর কিছু নেই, ময়লা পানির নালা আছে একটা। ঝর্ণা দিয়ে তিরতির করে পানি পড়ছে…ঐ পানিতে ভিজতে চাওয়া রসিকতা। আমাদের কারো কাপড়-চোপড় ভিজল না। আমি মন খারাপ করে চুপ করে থাকলাম। মালিহা বিরক্ত। জারিনা টিকিটের ছবির দিকে তাকিয়ে বললো- “They cheated us, where is this place?”

আসলেই তো, যারা টোলের টাকা নিয়েছে, নিচ্ছে তারা প্রতারণা করেছে। টিকিটের ছবি আর ভেতরের দৃশ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। ফেরত দিক টিকিটের টাকা। হিমছড়ি যেমন দেখে গেছি, তেমন আর নেই। তারা আমানত নষ্ট করেছে, করছে। কেউ ওদের থামাচ্ছে না। আমরা যাদের বিশ্বাস করেছি, তারা ঐ মোটাবুদ্ধির লোকগুলোর হাতে তুলে দিয়েছে আমাদের পাহাড়, আমাদের সমুদ্র সৈকত। মাস্টার প্ল্যানের গল্প শুনিয়ে কিচ্ছু হবে না, এই টোলের রাজনীতি বন্ধ হোক আগে। যারা পাহাড় নোংরা করে-সে টোল-গেটের মালিক কিংবা পর্যটক যেই হোক- তাদের সঙ্গে সঙ্গে ধরে জরিমানাসহ বাধ্যতামূলক community service করতে দেওয়ার নিয়ম হোক। community service হিসেবে ওরা পরবর্তি তিন দিন পাহাড়ে পড়ে থাকা প্লাস্টিক কুড়াবে, হিমছড়ির পাবলিক টয়লেট পরিস্কার করবে।





হায় হিমছড়ি
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৌলবাদ: ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যর্থ প্রযুক্তি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫১




মজার বিষয়—

আজকের মৌলবাদীরা রোকেয়া বেগমকে মুরতাদ ঘোষণা করে বুক ফুলিয়ে হাঁটে, অথচ নিজেদের অস্তিত্ব টিকেই আছে যাদের ঘৃণা করে— সেই “কাফেরদের” বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে। ইতিহাস পড়লে এদের বুকফুলা হাওয়া বের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতী এখন পুরোপুরিভাবে নেতৃত্বহীন ও বিশৃংখল।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩



শেরে বাংলার নিজস্ব দল ছিলো, কৃষক প্রজা পার্টি; তিনি সেই দলের নেতা ছিলেন। একই সময়ে, তিনি পুরো বাংগালী জাতির নেতা ছিলেন, সব দলের মানুষ উনাকে সন্মান করতেন। মওলানাও জাতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট

লিখেছেন আরোগ্য, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৬



ওসমান হাদী অন্যতম জুলাই যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, স্পষ্টবাদী কণ্ঠ, প্রতিবাদী চেতনা লালনকারী, ঢাকা ৮ নং আসনের নির্বাচন প্রার্থী আজ জুমুআর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×