মন্টু মামা এবারো নতুন জামা নিয়ে আসবে। মা একথাটা বলার পর করিমের আনন্দের সীমা ছিলো না। কমলাপুর বস্তির রহিম মিয়ার ছেলে করিম। স্কুলে পড়ার পাশাপাশি স্টেশনে বাদাম বিক্রি করে । মা এলাকায় ঝিয়ের কাজ করেন। রহিম মিয়া বহুকাল আগে গত হয়েছে।
বাবা মারা যাওয়ার পর এই মামাই করিমদের দেখাশোনা করে। খুলনায় কাজ করে। মামাটা কিভাবে খুলনায় গেল তা করিম জানে না। সবকথা জানতে নেই। মামা মাস শেষে টাকা পাঠায়। এই টাকাতেই করিমের পড়ালেখা হয়।
ঈদের আগের দিন। খুলনা রেলস্টেশন। ঢাকার ট্রেন রাত নয়টায়। লেট থাকার কারনে সেটা ১১টা হয়ে গেল। টিকিট কাটার সামর্থ্য মন্টুর নেই। তাই সে ট্রেনের ছাদে উঠলো। মানুষে গিজগিজ। এককোনায় বসে পড়লো। ছাদেও নিচের বগির মতোই পানীয়সহ নানান জিনিস ফেরি হয়। সে এক বোতল পানি কিনলো। দাম যতো তার থেকে কয়েকটাকা বেশি। দেশে কোনো উপলক্ষ পেলেই দাম হুহু করে বেড়ে যায়। কিন্তু জনগণ নিরুপায়।
রাত হওয়ায় রোদের ভয় নেই। তবে গভীর রাতে ছিনতাইয়ের ভয় শতগুণ। রাত ৩টায় মন্টুর পাশের জনকে এরকমই কয়েকজন ধরে। অতঃপর ধস্তাধস্তি। এরই কোনো এক মুহূর্তে মন্টু পড়ে যায় ছাদ থেকে। ট্রেনের ছাদেই পড়ে থাকে নতুন জামা। ঈদের সময় এমন বহু মানুষ ছাদ থেকে পড়ে চিরতরে হারিয়ে যায়। তবে এই সভ্য নামের সমাজে তার ছিটেফোঁটাই পত্রিকায় আসে।
মন্টু মামা ঈদের সকালে আসবে। প্রতিবারই এমন আসে। এটা করিমের মুখস্থ। তবে আজ যখন ঈদের নামাজ শেষ হয়ে গেল, তবুও মামা এলো না। করিমের ঈদের আনন্দ সেখানেই ধুলোয় মিশে গেল। সারাটা দিন মামার জন্য অপেক্ষায় রইলো। কিন্তু সব অপেক্ষার বোধহয় শেষ নেই !!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১১:০২