আসলে, ছোট ছোট ভুল পদক্ষেপ নয়, আফগানদের বড় বড় ভুল পদক্ষেপই সেই দেশের মাটিকে নিজেদের রক্ত দিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছে নিজেরাই। আজকের আফগানিস্তানে সাড়ে ৩ কোটি আফগান বসবাস করেন, আয়তনে দেশটি ৬ লাখ ৫২ হাজার বর্গ কিলোমিটার; ২০০১ সালে শুরু হওয়া যুদ্ধ এখনো চলছে। কমপক্ষে ১ কোটী পালিয়ে-আসা আফগান পাকিস্তানে খুবই দরিদ্র জীবন যাপন করছে।
মধ্যযুগে আফগানরা পারসিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ ছিলো; ১৭০৯ সালে, পাঠানদের এক গোত্র-প্রধান পারসিকদের থেকে কান্দাহার দখল করে নেয়; এটাই আফগানদের নিজস্ব রাজত্বের শুরু। ১৭৪৭ সালে, আহমেদ শাহ দুররাণী নামে এক পাঠান সমরনায়ক পাঠানদের জন্য আফগানিস্তান দেশ গঠন করেন। তিনি ১৮০৯ সালে, ভারতের মালিক ইংরেজদের সাথে বন্ধুত্বের চুক্তি করেন, যাতে ইংরেজরা আফগানিস্তান দখলের চেষ্টা না করে।
কিন্তু চুক্তি ভেংগে যায় ১৮৩৯ সালে, ইংরেজরা আফগানদের কোয়েটা দখল করে নয়; যুদ্ধ চলে ৩ বছর; পুর্ব এলাকায় দখল, বেদখল চলতে থাকে; কিন্তু ইংরেজরা মুলভুখন্ড দখল করতে পারেনি; ইহা ১ম ইংরেজ-আফগান যুদ্ধ। এরপর, আবারো যুদ্ধ বাঁধে ইংরেজদের সাথে ১৮৭৮, ১৮৭৯ সালে; এবার কিছুটা ইংরেজদের বৈশ্যতা স্বীকার করে আফগানরা; তবে, দেশ হারায়নি; উল্টো, ইংরেজরা নিজেদের উদ্দেশ্য, আফগানিস্তান দখলে সফল হয়নি। ১৯১৯ সালে, ইংরেজ বৈশ্যতা অস্বীকার করতে গিয়ে, আফগানরা ইনরেজদের আক্রমণ করে, এবং পুর্বান্চল থেকে ইংরেজদের বিতাড়িত করে; ইহা ইংরেজদের সাথে ৩য় আফগান যুদ্ধ।
১৯৩৩ সাল অবধি, অনেক রাজা ক্ষমতায় আসেন, প্রায় সবাই নিহত হন আভ্যন্তরীণ গোলযোগে; সেই বছর, নিহত জেনারেল ও সম্রাট নাদির শাহের সন্তান জহির শাহ সম্রাট হিসেবে ক্ষমতা লাভ করেন; এই ব্যক্তিই আজকের আফগানিস্তানের জনক হিসেবে গণ্য হন, এবং সর্বকালের বুদ্ধিমান আফগান হিসেবে পরিচিতি পান বিশ্বে।
জহির শাহ মাত্র ১৯ বছর বয়সে আফগানিস্তানের রাজা হন, কিন্তু তিনি গত শতাব্দীর প্রথমভাগের প্রতিকুল পরিবেশের মাঝে আফগানিস্হানে শৃংখলা ফিরিয়ে আনেন; ইংরেজরা যাতে দেশ দখল করতে না পারে, সেজন্য ইংরেজদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন, এবং দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য ক্রমাগতভাবে ডেমোক্রেটিক পদক্ষেপ নিতে থাকেন। শাসনতান্ত্রিকভাবে দেশ রাজতান্ত্রিক হলেও তিনি দেশকে গণতন্ত্রের দিকে নিয়ে যান। ১৯৬৪ সালে তিনি দেশের শাসনতন্ত্র বদলায়ে দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চালু করেন। তিনি প্রতিবেশী সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে মিলে, দেশের মেয়েদের ইউনিভার্সিটিতে পড়ানোর ব্যবস্হা নেন ও পুরুষের পাশাপাশি দেশের সরকারী ও বেসরকারী সংস্হায় চাকুরীর ব্যবস্হা করেন।
সময়ের সাথে আফগানিস্তানকে রিপাবলিক ঘোষণার কথা তিনি বলেছিলেন; তার আগে, তিনি মানুষকে সেজন্য প্রস্তুত করছিলেন; আসলে, ৬০ শতকে আফগানিস্তানের মানুষ, ততকালীন পাকিস্তান কিংবা ইরানের মানুষ থেকে সুখে শান্তিতে ছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৯ সকাল ৭:৪০