কবি, লেখক, শিক্ষক, প্রফেশানেলদের ব্যক্তিত্ব থাকতে হবে, শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব: আকাশের মতো উদার, হীরকের মতো স্বচ্ছ।
ব্যক্তিত্বের ডেফিনেশন একটু কমপ্লেক্স, কিন্তু সংক্ষেপে বলা সম্ভব, ইহা একজন মানুষের সামাজিক প্রোফাইল; যেমন কবি শামসুর রহমান'এর নাম বলার সাথে সাথে যেই ধরণের একজন মানুষের প্রোফাইল ভেসে উঠবে, সেটাই উনার ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তিত্ব হলো: একজন মানুষের সকল চারিত্রিক গুণাগুণের সমাহার, যা সেই ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে একটি পুর্ণ ধারণার সৃষ্টি করে। একজন ব্যক্তিকে তার কর্মের মাঝ দিয়ে যত বেশী জানা যায়, তার ব্যক্তিত্ব ততবেশী পরিস্কার হয়ে উঠে।
ড: মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সাহেব (১৮৮৫-১৯৬৯) একজন শিক্ষক (বিশ্ব বিদ্যালয়) ছিলেন: তিনি বাংলা, সংস্কৃত, আরবী ও ফ্রেন্স ভাষা পড়াতেন, তিনি একজন প্রবন্ধকারও ছিলেন। তিনি ভারতীয় মুসলিমদের মাঝে সর্বপ্রথম ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছিলেন ও বহু ভাষায় কথা বলতে পারতেন। আজকের জেনারেশন উনাকে কতটুকু জানেন, আমার তেমন ধারণা নেই! ১৯৬৪ সালে তিনি আমাদের এলাকায় নিজ আত্মীয় বাড়ীতে বেড়াতে আসেন; স্হানীয় লোকজন উনার সাথে দেখা করতে যান, লোকজনের সাথে আমিও উনাকে দেখতে যাই; পড়ন্ত বিকেলে, বাড়ীর আংগিনায় সবার সাথে তিনি চা খেলেন, কথাবার্তা বললেন; আমার মনে উনার প্রোফাইল তৈরি হয়েছিল সেইক্ষণে; তারপর, উনার সম্পর্কে ক্রমে আরো জানলাম, উনার একটা বিশাল ব্যক্তিত্ব ছিলো, এবং আজো আছে।
আমেরিকা সাহিত্যের দেশ, এখানে লেখক, কবির সংখ্যা অনেক অনেক; এঁদের মাঝে এক বিশেষ ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন গল্পকার ও উপন্যাসিক 'মার্ক টোয়েন (১৮৩৫-১৯১০); এটি উনার নিক নেম, আসল নাম হচ্ছে, স্যামুয়েল ল্যাংহাম ক্লেমেনস; আমেরিকার হাজার হাজার সুপরিচিত লেখকদের মাঝে মার্ক টোয়েন এক উজ্বল তারকা, একটি বিশেষ ব্যক্তিত্বের মানুষ। মার্ক টোয়েন ৫ম শ্রেণীতে পড়ার সময়, উনার পিতার মৃত্যু হয়, তিনি পরিবারকে সাহায্য করার জন্য প্রিন্টিংশপে কাজ নেন। তিনি শারীরিক কাজ পছন্দ করতেন, জীবনে মিসিসিপি নদীর ষ্টিম-ষ্টিমারের পাইলট হতে চেয়েছিলেন, সেটাই হয়েছিলেন; ততকালীন ষ্টিম-ষ্টিমারে নদীর ২ পার থেকে তুলা পরিবহন করতো, তুলার বোঝা বহনের জন্য আফ্রিকান আমেরিকানদের রাখা হতো ষ্টিমারে, তিনি তাদের সাথে তুলার বোঝা তুলতেন, নামাতেন।
বৃটিশরা নিজেরা শিক্ষিত ছিলো, বিশ্বকে শিক্ষিত করার চেষ্টা করেছে সীমিত পরিসরে; বিশ্বে বৃটিশেরা অনেক চরিত্র, অনেক ব্যক্তিত্বের জন্ম দিয়েছে; আমার চোখে সবচেয়ে বড় ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন, বারট্রান্ড রাসেল( ১৮৭২-১৯৭০ ); রাসেলের বড় পরিচয় হলো: অংকবিদ, লজিকবিদ, ফিলোসোফার, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক, বক্তা। তাঁর কথা ও কাজে মিল থাকার কারণে ইতিহাস উনাকে সর্বযুগের এক বলিষ্ট ব্যক্তিত্বের লোক হিসেবে সন্মানিত করেছে। যদিও তিনি ছিলেন মুলত: অংকবিদ ও ফিলোসোফার, উনি সাহিত্যে নিজের স্বাক্ষর রেখে গেছেন; সাহিত্যে তিনি নোবেল পুরস্কারও পেয়েছিলেন ১৯৫০ সালে। তিনি মানুষের স্বাধীনতার উপর কথা বলতেন; শেষ বয়সে তিনি প্রায় প্রতিদিন ট্রাফালগার স্কয়ারেের এক কোণে দাঁড়ি্যে বক্তৃতা দিতেন; দেশের রাণী তাঁর প্রতিদিনের বক্তব্য নোট করার জন্য লোক নিয়োজিত করেছিলেন।
ব্লগারেরা আগামীদিনের কবি, লেখক, শিক্ষক, প্রফেশানেল, তাঁদেরকে শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হব।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৯ ভোর ৫:০০