১৯৮১ সালের ১৭ই মে, দিনটি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য আরেকটা সাধারণ দিনের মতো হলেও, জেনারেল জিয়া, ততকালীন বাংলাদেশ মিলিটারী ও পাকিস্তানী মিলিটারীর জন্য এইদিনটি ঠিক একটা সাধারণ দিন ছিলো না; আসলে, জেনারেল জিয়ার জন্য এই দিনটি ছিল ভয়ংকর দু:স্বপ্নের দিন। ৬ বছর জেনারেল জিয়া শেখ হাসিনার বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তনের পথকে ধ্বংস করে আসছিলেন; কিন্তু এক সময় উহা উনার ক্ষমতার বাহিরে চলে যায়, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। জিয়া নিশ্চয় জানতেন, এখন থেকে উনাকে টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত হতে হবে।
শেখ সাহেবের হত্যার খবর পেয়ে কারা খুশীতে আত্মহারা হয়ে উঠেছিলো? তারা ছিলো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি; এতে ছিলো অনেক বাংগালী ও পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনী। শেখের মৃত্যুতে মুক্তিযুদ্ধের অর্জন শুধু হারিয়ে যায়নি, উহা অনেকটা অপরাধের মতো গণ্য হচ্ছিলো। আবার, মুক্তিযুদ্ধের অর্জন যেহেতু ১৯৭৫ সাল অবধি সারারণ মানুষের ঘরে পৌঁছায়নি, তাঁরা কি হারায়েছিলেন, সেটাও তাঁরা ঠিক মতো জানতেন না; অনেকটা ভার্চুয়াল ক্ষতি, যা পাওয়া যায়নি, সেটা হারানো, তেমন কষ্টের বিষয় নয়!
জেনারেল জিয়া পাকিস্তানের যেকোন জেনারেলের মতো, বার্মার জেনারেলের মতো, মিশরের সৈন্য বাহিনীর জেনারেলদের মতো, চিলির পিনোচেটের মতো একজন জেনারেল ছিলেন; কিন্তু অনেক অনেক বাংগালী উনাকে বাংগালী জাতির নতুন নেতা হিসেবে প্রতিষ্টিত করার কাজে লেগে গেলো; এরা কারা? এরা ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি!
রাজনীতির 'র' না জেনে, নিতান্ত একজন গৃহবধু হয়ে, এক শক্ত মিলিটারী শক্তির বিপক্ষ হয়ে শেখ হাসিনার বাংলায় প্রবেশ ছিলো সীমাহীন সাহসের পরিচয়। বাংলার মানুষ, যাঁরা আইয়ুব খান ও ইয়াহিয়া খানের পর, জেনারেল জিয়ার মিলিটারী শাসনের বিপক্ষে ছিলেন, তাঁদের জন্য ছিলো এক নতুন আশার আলো।
জেনারেল জিয়া উনার মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে কাজে লাগিয়ে অনেক মানুষকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন; এসব বিভ্রান্ত মানুষরা রাজনীতি বুঝতেন না, নিজের নাগরিক অধিকার বুঝতেন না; তারা উর্দুভাষী জেনারেলের বিপক্ষে যুদ্ধ করার পর, বাংলাভাষী জেনারেলকে পরিত্রাণের ত্রাতা হিসেবে দেখছিলেন, জেনারেল জিয়া ও ততকালীন মিলিটারী এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছে, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছিলো ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি।
১৯৮১ সালের ১৭ই মে, জেনারেল জিয়ার মিলিটারী জীবনের ইতিহাসে একটি দু:স্বপ্নের দিন ছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৫