বাংগালীরা প্রজাতন্ত্রের নাগরিক হিসেবে, প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলেন পাকিস্তান রাষ্ট্রে; বৃটিশ কলোনী থেকে মুক্ত-হওয়া মানুষের বিশ্বাস ছিলো যে, এবার তাঁরা ইংরেজদের মতো সুখী হতে পারবেন; নিজদেশে, নিজেদের শাসন ব্যবস্হায়, দারিদ্রমুক্ত হতে পারবেন। ১৯৪৭ সালে , শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ অতি দরিদ্র ছিলেন। কিন্তু মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খান, মোহামুদ আলী প্রমুখদের কোন দক্ষতা ছিলো না, এরা নতুন জাতির মুল সমস্যা বুঝতে ব্যর্থ হন; জাতির দরকার ছিলো, দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের মাধ্যমে আয়ের পথ বের করা; ওদের মাথায় সেই ভাবনা ছিলো না, তারা ভাষা, তমদ্দুন, হাউকাউ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, দেশে অরাজকতা দেখা দিলো।
নতুন দেশে, সরকারের মাঝে যেই অরাজকতা ছিলো, সেটাকে পুঁজি করে ততকালীন পাকিস্তানী মিলিটারী দেশের ক্ষমতা দখল করে নেয়, পাকিস্তানকে কক্ষচ্যুত করে দেয়। আইয়ুব খান তার পুর্ববর্তী সরকারগুলো থেকে কিছুটা উন্নত অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেন; কিন্তু সমস্যা দেখা দেয়, উনি যেই পরিমাণ সীমিত সুযোগের সৃষ্টি করেন, তাতে বাংগালীদের জন্য কিছুই ছিলো না; তিনি পাকিস্তানে শিল্পায়ন শুরু করেন; কিন্তু মালিকানা চলে যায় উর্দুভাষীদের হাতে; আইয়ুব খান বাংগালীদের কোন ধরণের সুযোগ দেননি, পুর্ব পাকিস্তানে যতটুকু শিল্প গড়ে উঠে, পুরোটার মালিকানা ও ম্যানেজমেন্টে ছিলো উর্দুভাষীরা; একটা মাত্র ব্যতিক্রম ছিলো, বাংগালী ব্যবসায়ী একে খান নিজ চেষ্টায় কিছু কলকারখানা করেন, কিছু বাংগালী তাতে সামান্য সুযোগ পান।
ইহার ফলাফল ছিলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ; মুক্তিযুদ্ধে বিজয় বাংগালী জাতিকে কি পরিমাণ উৎসাহী জাতিতে পরিণত করেছিলো, আজকের শতকরা ৯০ ভাগ বাংগালী উহা অনুমানও করতে পারবেন না; অবশেষে আমরা নিজ দেশের মালিক, আমরা আমাদের দেশ চালাবো, সবাই সমান সুযোগ পাবেন, সবার জন্য দরকারী পরিমাণ সম্পদ আছে, আমরা একজাতি, একভাষা, এক আশা, সুখ শান্তির অভাব হবে না।
কিন্তু বছর না ঘুরতেই বুঝা গেলো যে, আমাদের নতুন সরকার ও আগের পাকিস্তান সরকারের মাঝে কোন পার্থক্য নেই; শুধু একটা পার্থক্য, সরকার ও প্রশাসনের সবাই বাংলায় কথা বলেন। শেখ সাহবে ও তাজুউদ্দিন সাহেব এই নতুন জাতিকে কি করে পরিচালনা করবেন, আমাদের উদ্দেশ্য, আদর্শ, রোডম্যাপ কিছুই নেই; উনারা এত অদক্ষ ছিলেন যে, ভাবতেও কষ্ট লাগে। উনারা ২ জন কি করছিলেন, মানুষ কিছুই জানতেন না; ঠিক আজকের করোনার মাঝে শেখ হাসিনা ও বর্তমান প্রশাসন কি করছে, যেমনভাবে কেহ জানে না, কারো কোন হাত নেই, ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সালের অবস্হা এর থেকেও ভয়ংকর ছিলো। মানুষ কি পরিমাণ নিরাশ ও হতাশ হয়েছিলেন শেখ সাহেব ও তাজউদ্দিন সাহেব কোনদিন বুঝতে পারেননি; মানুষের দরকার ছিলো কাজ, চাকুরী, ঠিক উনাাদের ২ জন যেভাবে চাকুরী করছেন, যোগ্যতা অনুসারে সামান্য চাকুরী; উনারা ২ জন যেভাবে মাসের শেষে বেতন পেতেন, সেই রকম বেতনসহ একটা কাজ; সেটার ব্যবস্হা এই ২ জন লোক করতে পারেননি।
আপনারা কি কিছু একটা ভেবে বের করতে পারবেন, যা সব বাংগালীকে কাজ দেবে, দিনে ৮ ঘন্টা কাজ করে, পরিবারের সাথে থেকে মানুষের মতো জীবন যাপন করতে পারবেন, মানুষ বেকার থাকবেন না; মানুষকে স্ত্রী-পরিবার পেছনে ফেলে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে না; কেহ আমেরিকা, কানাডা, বৃটেন, অষ্ট্রেলিয়া, আরব দেশে যেতে চাইবেন না? এই রকম কোন ভাবনা আছে মাথায়?