বড় ইমামবাড়া, লক্ষনৌ।
কাবাব ও নবাবদের শহর লক্ষনৌর অন্যতম আকর্ষণ।
সাধারণত ইমামবাড়া বলতে আমরা বুঝি শিয়া অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান বিশেষকরে 'মাতম'র মিলনায়তনকে। সাধারণত এ উদ্দেশ্যেই বাড়িগুলো তৈরি করা হলেও লক্ষনৌর ইতিহাসটা একটু ভিন্ন।
১৮ শতকের শেষদিকে অযোধ্যা যখন দারুণ বেকারত্ব আর দুর্ভিক্ষপীড়িত ছিল তখন জনগণের অন্তত মাথা গোঁজার ঠাই সুনিশ্চিত করতে ১৭৮৫ সালে নির্মিত হয় বড় ইমামবাড়াটি।
অযোধ্যার চতুর্থ নবাব আসাফুদ্দৌলা/আসিফুদ্দৌলা নির্মিত বাড়িটি কাজ শেষ হওয়ার পর থেকেই অর্জন করে আছে লক্ষনৌর গৌরব ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক হওয়ার খেতাব।
দুর্ভিক্ষ পরবর্তী সময়ে নবাবরা লুকোচুরি খেলতে এর অভ্যন্তরে তৈরি করেন গোলকধাঁধার এক জটিল রাজ্য। ভুলভুলাইয়া। অনেকে আবার ইমামবাড়ার পার্শ্ববর্তী সিসি ক্যামেরা খ্যাত 'শাহী বাওলি'কেও ভুলভুলাইয়া নামে অভিহিত করে থাকেন। সিসি ক্যামেরা খ্যাত বলার কারণ এখানে বসে বহিরাগতদের পর্যবেক্ষণ, শত্রু মোকাবেলা নিমিত্তে প্রতিষ্ঠিত ভবণটির মূল আকর্ষণ; মধ্যবর্তী স্থানের আয়না সদৃশ স্বচ্ছ পানির কুয়া। যেখানে ফটকের প্রতিটি অবয়বই উদ্ভাসিত হয় সুস্পষ্টভাবে।
ও হ্যাঁ, একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। ১৭৭৫ সালে নবাব আসাফুদ্দৌলা অযোধ্যার দরবার ফয়জাবাদ থেকে লক্ষনৌতে স্থানান্তর করলেও ভুলভুলাইয়ার গলিতে এমন একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করেন যেটার একদিক গোমতী নদীর তীর আর অন্যদিক ফয়জাবাদ, ইলাহাবাদ, আগ্রা হয়ে দিল্লি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
এতকিছু বলার মূল কারণ, কিছুদিন আগে পরীক্ষার ছুটিতে লক্ষনৌ ভ্রমণ। পরীক্ষার আর ঈদের ছুটি ছাড়া সাধারণত ছুটি মেলে না বললেই চলে। সেই সুযোগে কেনাকাটা থেকে শুরু করে পূরণ করতে হয় সকল প্রয়োজন। ভ্রমণসঙ্গী আর পর্যাপ্ত টাকা হলে হয়ে যায় ছোটখাটো ট্যুরও।
ভারতের প্রধান যাতায়াত মাধ্যম ট্রেন। এর বাইরে লম্বা ভ্রমণ কল্পনাতীত। এবারের ভ্রমণের সিংহভাগজুড়েই ছিল বাসের উপস্থিতি। মাঝে দুইদিনের বিশ্রাম সহ টানা ৮ দিনের ভ্রমণ। আজমগড় থেকে শুরু করে সাহারানপুর, দেওবন্দ, শামেলি, কিরানা, পানিপথ, দিল্লি, বান্ধা, কানপুর, লক্ষনৌ হয়ে আজমগড়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন...
ছবি তোলার স্থানঃ ভুলভুলাইয়া তৃতীয়তলা।
ভ্রমণকালঃ ৬ ডিসেম্বর ১১:৩০(ভারত)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৮ রাত ৩:১৯