আমি ভাই খুবি দুধ-ভাত টাইপের মানুষ। কোনো কিছু নিয়েই মাথা ঘামাই না। যেমন ধরুন - এতো প্রত্যাশিত একটি নির্বাচন গেল অথচ আমি ঠিক মত আমাদের নির্বাচনী এলাকা কিংবা প্রার্থীদের নামও জানতাম না। অস্কার ওয়াইল্ডের “হ্যাপি প্রিন্স” গল্পের সেই ছোট্ট পাখিটির মত আমারও মনে হয় “thinking always makes me sleep”। তাই খাই-দাই ঘুমাই - আমার নিজের জীবন এর চেয়ে বেশি কিছু করি বা করেছি বলে মনে হয় না।
আমার সবচেয়ে বড় টাইম-পাস সিনেমা দেখা(আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাহিদের সুবাদে আমার কোনো ডিভিডি কিনতে হয় না তাই ফ্রী মুভি দেখার আনন্দটাই আলাদা) কিন্তু আজ কেন যেনো ভাল লাগছে না। কিছুক্ষণ পরপর টিভির কাছে ছুটে যাচ্ছি- কী হচ্ছে এসব? আমাদের দেশের সেনা বনাম বিডিআর- এটাই কী সমীকরণ? কিছুই যেন মেলাতে পারছি না। খুব সাভাবিকভাবেই কোনো দন্দ হলে মানুষ যা করে আমিও তা-ই করেছি। চিন্তা-ভাবনা করে সে কোনো না কোনো একটি পক্ষকে সমর্থন করে- সেটি বিএনপি-আওয়ামী নির্বাচনের ময়দান হোক, পাক-ভারত ক্রিকেট ম্যাচ হোক আর লিভারপুল-চেলসি ফুটবল ম্যাচই হোক। অনেকেই হয়ত “না” করেবেন; কিন্তু অতন্ত্য সাধারণের কথা যদি বলি তাহলে আমার ধারনা যখন অপশন মাত্র দুইটি থাকে তখন আমরা কোনো না কোনো এক পক্ষকে সমর্থন করি।
প্রাথমিকভাবে আমিও বিডিআর’দের উপর শোষন আর নির্যাতনের কথা শুনে মর্মাহত হই। তারাও তো সৈনিক, তাদেরও পরিবারের সাথে ছুটি ভোগ করার অধিকার আছে, তারাও চায় তাদের সন্তানরা ভাল থাকুক। কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে আতঘাতী এরকম একটি পথ তারা বেছে নেবেন এটি কখনই আশা করি নি। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিডিআর যখন বিএসএফ-এর সাথে লড়াই করে শহীদ হন তখন মনের ভেতর কেমন যেনো একটি দুঃখবোধ জেগে ওঠে। একই অনুভূতি হয় যখন শুনি ইউ এন মিশনে কোনো বাংলাদেশী সিপাহী শহীদ হয়েছেন। চোখের সামনে ভেসে ওঠে তাদের সন্তান আর পরিজনের আহাজারীর চিত্র। বিডিআর’দের দাবিদাওয়া গুলো যুক্তিসংগত হতে পারে তাই বলে আমাদের দেশের সেনাবাহিনীর উপর এরূপ চরম একটি প্রতিশোধ তারা নেবে তা সেনাবাহিনীর চরম শত্রু হয়ত সপ্নেও ভাবেনি।
বিডিআর একটি প্যারামিলিশিয়া বাহিনী; তারা তাদের অত্যাচারের জন্য শতাধিক সেনা কর্মকর্তাদের নির্বিচার হত্যা করতে পারে তাহলে সেই জের ধরে সেনাবাহিনীও যদি একই কাজ করে বসে? অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে বিডিআর-এর সাবেক এবং প্রয়াত ডিজি খুব সুবিধার লোক ছিলেন না। তাই বলে তার সাথে সাথে তার পরিবার এবং আরও শতাধিক সেনা কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের কেন সেই মাশুল টানতে হবে? বিডিআর’রা তো সৈনিক, তারা কেন কাপুরুষের মত আচরণ করবে? এখন পর্যন্ত যতটুকু জেনেছি তাতে এত বড় একটি ঘটনাকে আমি সতঃস্ফূর্ত বলে মেনে নিতে পারছি না। এত বড় একটি ঘটনার পেছনে কারও কি কোনো প্ল্যান ছিল না? কোনো মাস্টার মাইন্ড ছাড়াই এতগুলো মানুষ প্রাণ হারাবে? একটি কথা আমি জোর দিয়ে বলতে চাই- সবার আগে একটি ব্যাক্তির পরিচয় সে একজন মানুষ তারপর সে একজন সেনা কিংবা বিডিআর। শুধু জিম্মি নাটক নয়, লুটতরাজ আর ধ...নের যে খবর পাওয়া গেছে তা যদি সত্য হয় তাহলে তাদের সাথে বিদেশি হামলাকারীদের পার্থক্য থাকল কোথায়? যদি সমস্যা শুধু প্রশাসনিক ব্যাপারে হয়ে থাকে তার কী অন্য কোনো সমাধানের উপায় ছিল না? সেনা কর্মকর্তাদের উপর ব্রাশ ফায়ার, লুটতরাজ আর ধ...নের মত কাজ কীভাবে করা হল আমার তা বোধগম্য হয় না।
যাই...আবার টিভি সেটের সামনে বসি- এই আশায় যে সুয়ারেজ লাইন দিয়ে ভেসে আসা ছাড়া আর কোনো সেনা কর্মকর্তা নিহত হন নি এবং আতসমর্পণের পর বিডিআর’রাও জীবন নিয়ে ফিরে যেতে পারবেন তাদের পরিবারের কাছে। আমার মত গা-ছাড়া টাইপের মানুষের মন আজ হঠাৎ একটু বেশি-ই উদ্বিগ্ন। আমি বারবার একটিই প্রার্থনা করেছি স্রষ্টার কাছে- হে বিধাতা এরা সবাই আমাদের দেশেরই সন্তান, এদের তুমি রক্ষা কর, কিন্তু আজ পার্থক্যটা শুধু এই যে পরস্পরের হাত থেকেই তাদের রক্ষা কর। তাই নিজের কাছেই মনে হচ্ছে আমি “হঠাৎ দেশপ্রেমিক নাকি ছাগলের তিন নং বাচ্চা ???”

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



