somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষা দিবস আর কিছু উপলব্ধি

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিন কোন না কোন দিবসই থাকে, আমরা কয়টিই বা খেয়াল করি। খবরের কাগজ, টেলিভিশনে এগুলোর আনুষ্ঠানিকতায় একটু চোখ রেখেই কাগজের পাতা উল্টে ফেলি অথবা টিভি’র চ্যানেল পরিবর্তন করে দিই। গতকাল ১৭ই সেপ্টেম্বর ছিল আমাদের ‘শিক্ষা দিবস’। এর প্রেক্ষাপট আমার জানা ছিল না তাই আমার মত যারা আছেন তাদের একটু জানিয়ে দিই- ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে এই দিনটিকে আমাদের দেশে শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৫৯ সালে প্রেসিডেন্ট ও সামরিক শাসক আইয়ুব খান তৎকালীন শিক্ষাসচিব এস এম শরীফকে চেয়ারম্যান করে ১১ সদস্যের ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’ গঠন করে যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষাকে ব্যয়বহুল পণ্যের মত শুধু উচ্চবিত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, সাধারণ মানুষকে শিক্ষার সুযোগ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা, অবৈতনিক শিক্ষার ধারনাকে অবাস্তব বলে উল্লেখ করে শিক্ষাব্যয়কে পুঁজিবিনিয়োগ হিসেবে দেখে শিক্ষার্থীদের তা বহন করা, উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে পরিণত করা সহ আরো নানা চক্রান্ত। এরকম চক্রান্তের বিরদ্ধে সোচ্চার হয় তৎকালীন ছাত্রসমাজ ও সচেতন মহল। ১৯৬২ সালে চাপিয়ে দেয়া জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিল করবার জন্য অন্দোলন গড়ে তোলে বাংলার জনগণ। ১৭ই সেপ্টেম্বর সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ সারা দেশে হরতাল ঘোষণা করে; রাজপথে চলে বিক্ষোভ মিছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে ছাত্রদের একটি বিক্ষুব্ধ মিছিল আব্দুল গনি রোড হয়ে অগ্রসর হলে পুলিশ পেছন থেকে অতর্কিতে তাদের উপর গুলি বর্ষণ করে। এতে শহীদ হন বাবুল, মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহ। সারা দেশে আহত হন আরও অনেকেই। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ১৭ই সেপ্টেম্বরকে শিক্ষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং প্রণয়ন করা হয় নতুন শিক্ষানীতি।


সংক্ষেপে এই ছিল পটভূমি। কিন্তু আমাদের দেশে এখন যা দেখছি তাতে তো মনে হচ্ছে সেই আইয়ুব খান আমলেই ফিরে গেছি আমরা। সারি সারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং ঢাকার ভেতরের নামকরা বাংলা মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করা হচ্ছে মোটা টাকার অঙ্কের জোরে- এটি এখন একটি ওপেন সেক্রেট। মতিঝিলের নামকরা কিছু স্কুলে “ডোনেশান কোটা” চালু আছে। টাকার অঙ্কটা যত বড় কিংবা পিতা/মামা’র ক্ষমতা যার যত বেশি তার/তাদের সন্তানেরাই চান্স পাচ্ছে সেসব স্কুলে। ঐসব স্কুলে পড়ালেখার সুযোগ শুধু বিত্তশালীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। এর জন্যই কী বাবুল, মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহ’রা ঐদিন রাজপথে শহীদ হয়েছিলেন? আমার বিত্তশালীদের উপর কোনো আক্ষেপ নেই; কোন আক্ষেপ নেই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং ঢাকার ভেতরের নামকরা বাংলা মিডিয়াম স্কুলের উপরেও; আমার আফসোস আর আক্ষেপ হয় তখনই যখন দেখি ইংলিশ মিডিয়ামের ও-লেভেল(বাংলা মিডিয়ামের এস এস সি সমমান ধরা যেতে পারে) এমনকি এ-লেভেল(বাংলা মিডিয়ামের এইচ এস সি সমমান ধরা যেতে পারে)পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বাংলা পড়তে পারে না, লিখতে পারে না। ভাগ্য ভালো থাকলে আপনি তাদের মধ্যে দু-একজনকে পেতে পারেন যারা হয় ভালো পড়তে ও লিখতে পারে। এই বাংলা লিখতে এবং পড়তে না পারা তরুন সমাজের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিদেশি আকাশ সংস্কৃতি আর ফিফটি সেন্টস কিংবা দেশি এম সি-এর র্যা প মিউজিক তাদের বেশি আকর্ষন করে। আমাদের দেশের লালন, ভাটিয়ালি কিংবা দেশ্বাত্তবোধক গান শুনে তাদেরকে বিরূপ মন্তব্য করতে শুনেছি। পছন্দ ব্যাপারটা ব্যাক্তি নির্ভর কিন্তু তাদের মনের ভেতর যে বাংলা ভীতি বা বাংলা বিদ্বেষ সেটাই আমার কাছে পীড়াদায়ক।


ঐসব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ২১শে ফেব্রুয়ারী কিংবা ১৬ই ডিসেম্বরের মত দিনে Essay competition on ‘International Mother Language Day’ কিংবা ‘Independence Day’ - এর মত রচনা প্রতি্যোগিতার আয়োজন করা হয় কিন্তু বাংলার বালাই থাকে না। হায়রে বাংলা ভাষা। ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের কাছে ‘বাংলা’ একটি মূর্তিমান আঁতঙ্ক। এতে আমি ঐ শিক্ষার্থীদের দোষ দেখি না; তাদের যা শেখানো হবে তাই’তো তারা শিখবে। যারা এরকম স্কুল চালান তারাও হয়ত বলবেন- “বাংলা শিখে কে কবে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরী করেছে?” কিছু কিছু নব্য সভ্য অভিভাবকদের মুখেও এরকম কথা শোনা যায়। তারা গর্ব করে বলেন-“আমার ছেলে তো ইংরেজি ছাড়া কথাই বলতে পারে না” । মনে মনে ভেবেছি রফিক, সালাম, জব্বার, বরকর, বাবুল, মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দিও ভাই, তোমরা শুধু শুধুই কষ্ট করলে। এই ব্যাপারটা যে অতূক্তি না তা আপানারা সহজেই পরখ করে দেখতে পারেন। ব্যাঙ্গের ছাতার মত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গড়ে উঠছে কিন্তু তাদের পাঠ্যক্রম, শিক্ষামান যাচাই করার মত গুরূত্বপূর্ণ কাজটা কী কেউ করছে? আর করলেও তা কতটুকু সক্রিয় তা আবশ্যই প্রশ্নের দাবি রাখে। আশ্চর্যজনক বিষয় হল আমাদের দেশে নীতি নির্ধারকরাও এ ব্যাপারে বেশ উদাসীন। কোথায় যেন একটা টি-শার্ট দেখেছিলাম তার উপর লেখা ছিল-“এন্টেনার উপর একটি কাঁক...বাংলা গান খাচ্ছে খাক”; আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য দেখে আমার একই কথা মনে হয় ।


বাংলাদেশি নাগরিক হয়েও বাংলা জানবে না, পড়তে পারবে না, লিখতে পারবে না এটা কি আমাদের জাতির জন্য লজ্জাজনক নয়? আমরা মাঝে মাঝে বোধহয় ভুলে যাই আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখনকার সভ্যসমাজের একেবারে ছোট ক্লাসে হরেক রকমের ফেরী টেইলসের বই পাঠ্য করা হয়। আমাদের ঠাকুরমা’র ঝুলি, আরব্য উপন্যাস কিংবা ঈশপের গল্পের আর ঠাঁই নেই। এখন আলাদিন,সিন্দাবাদ আরব্য উপন্যাসের নায়ক নয়- ফেরী টেইলস অথবা ওয়াল্ট ডিজনী’র হিরো। ছোটবেলা থেকেই এদেরকে বাংলা বিমুখ করে ফেলা হচ্ছে। সবাইকে যে বাংলা সাহিত্য চর্চায় অংশ নিতে হবে কবিতা গল্প লিখতে হবে তা নয় কিন্তু কম করে হলেও বাংলা পড়তে আর লিখতে তো পারা উচিৎ। আর তাও যদি না হয় অন্ততঃ বাংলা ভাষার উপর শ্রদ্ধাবোধ তো থাকা দরকার।


লিখতে লিখতে অনেক লিখে ফেললাম যদিও মনে হচ্ছে আর অনেক আছে বলার। আমি যেহেতু ঢাকায় থাকি এবং এখানেই বাংলা এবং ইংরেজি উভয় মাধ্যমেই আমি কিছুদুর পড়াশুনা করেছি; ছোট ভাই-বোনেরাও করছে তাই আমার লেখার পরিধিও সীমিত। মনের কোনে জমে থাকা চাপা এই বেদনাগুলোকে সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিজেকে একটু হাল্কা করার চেষ্টা করলাম আর কি...

১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×