যখন ভোরের আলো ফুটছিলো, পুরো এক ঘন্টা আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। যদিও আকাশের সেই আগের মতো সম্মোহন নেই। হুড়োহুড়ি করছে মেঘেরা। তবু তাকিয়েছিলাম। ঘন ঘন বদলে যাচ্ছিলো আকাশের রঙ। ঠিক যেরকম লহমায় লহমায়, একদিন বদলে গিয়েছিলো আমার শরীর।
করতলে কেউ এঁকে দিলো আনন্দিত পৃথিবীর ম্যাপ, সন্ধ্যার অন্ধকার। আমরা বিচালি হাটির কাঁদা বাঁচিয়ে, আমাদের কম্পমান পা ফেলে ফেলে হাঁটছিলাম! একটা গরুর গাড়ি জুড়ে রেখেছিলো কেউ। কার বাড়িতে নায়রী এসেছে, গরুর গাড়ির ছইয়ের মুখে একটা নীলাম্বরী শাড়ির পর্দা টানা।
নীলাম্বরীর বুনটে বুনটে ফর্মা ফর্মা গল্প ঠাসা।
সোনার কারুকাজ করা সেই দরোজা, যেদিন যেদিন রাতের ঘুম গাঢ় হতো চুপিসাড়ে খুলে যেতো সেই কল্পলোকের দরজা, একটা দড়ির খাটিয়ায় বসে মেয়েটি। পরনে নীলাম্বরী। অপেক্ষা করতো ছেলেটির জন্য।
আমাদের দেখে গাড়োয়ান গোঁফের ফাঁকে মিটিমিটি হাসছিলো দেখে, খেয়াল হলো আমার হাতের তালুতে সাপলুডু পেতে সে বড় বড় সাপের সাথে লড়াই করছে। স্বপ্নখেকো সাপগুলোকে আমি থাবড়া দিয়ে ফেলে দিলাম।
-কেনো?
-ভাল্লাগে না
-কি ভাল্লাগে?
-গরুর গাড়িতে চড়ে অনেক দূরে যাওয়া,
সে গাড়োয়ানকে বললো
-যাবে? গাড়োয়ানের মুখে সেই মিটিমিটি হাসি, যেন সে একটা মিটিমিটি হাসির মাস্ক পরেছে।
-কুণ্ঠে যাইবেন?
-অনেক দূর
-ম্যালা দূরতো মুই চেনো না, হামরা যামো দশ মাইল। সে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো
-যাবে দশমাইল?
-যে দূরত্ব সংখ্যাতে আঁটে তাকে কি অনেক দূর বলে?
-গরুর গাড়িতে সংখ্যাতীত দূরত্বে যাওয়া যায় না। শুনে বিচালি হাটি গাল ফুলালো। ছেলেটি আবার হাত নিলো হাতে,
অনেক সময় নিয়ে সেখানে লিখলো
-প্রতিশ্রুতি
শব্দটি লিখতে তার অনেক সময় লাগলো।
এখনকার মতো তখন তো আর মোস্তফা জব্বার ছিলো না! ছিলো না বিজয়, অভ্র, ইউনিকোড। ভারি ভারি কালো মেঘ এসে ঢেকে দিলো তাকে। অঝোর বৃষ্টিতে ধুয়ে ধুয়ে যাচ্ছিলো আনন্দিত ম্যাপের রেখা। দড়ির খাটিয়ায় বসে নীলাম্বরী জড়ানো। লহমায় লহমায় বদলে যাওয়া শরীর, শুধু অপেক্ষা থেকে সংখ্যাতীত দূরত্বে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:৪২