somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুলিশকে, পুলিশ হিসাবে দেখতে চায় জনগন ও পুলিশ

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে কোন সরকারে শেষ সময় সবচেয়ে বেশী আলোচিত-সমালোচিত নাম পুলিশ। ক্ষমতাসীন সরকারের জুলুম নির্যাতনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার -পাশাপাশি পুলিশেরও কিছু উৎসাহী কর্মকর্তার কারনে আলোচনায় উপরে উঠে আসার কারণ বলে বারবার প্রতীভাত। এই বিতর্কিত ভুমিকার কারনে দেশ-জাতি বিনির্মানে তাদের গৌরবোজ্জল ইতিহাস আজ ম্লান এর পথে। ছোটবেলা আমার এক সহপাঠীর সাথে থানায় গিয়েছিলাম তার বাবার (থানার ওসি) সাথে দেখা করতে। তার রুমে দেয়ালে টানানো বাধাই করা পুলিশের নামের ব্যাখ্যা আজও ভুলতে পারিনি। যতদূর মনে পড়ে সেখানে লেখা ছিল, P=Polite, O=Obedient, L=Loyal, I=Intellectual, C=Courageous, E=Efficient
তার আপ্যায়িত বিস্কুট না খেয়ে হা করে তাকিয়ে লেখাটি দেখছিলাম এবং এক নি:শ্বাসে মুখস্ত ও করে ফেলছিলাম। আমার হা অবস্থা দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, লেখাটা খুব ভাল লেগেছে? পুলিশ হবে? সেদিন আমি লজ্জায় কাচুমুচু হয়ে অবনত মস্তকে বসে ছিলাম। আর মনে মনে বলতেছিলাম, বাপরে পুলিশ হতে এত গুন লাগে ! আমার তো এত গুন নেই, তাহলে আমিতো আর পুলিশ হতে পারবনা! গ্রামের সাথে সংশ্লিষ্ট যে কেউ জানবেন, এক সময় আমাদের দেশে থানার দারোগাকে সম্মানের সাথে ”দারোগা বাবু” , সেপাইকে ”সেপাই মশাই” বলা হত। এখনও অনেক এলাকার নাম রয়েছে দারোগা বাড়ী, কিংবা দারোগা পাড়া। বর্তমানে যেরকম মাজারে পীরদের বাড়ীতে নজরানা দেওয়া হয়, অতীতে এক সময় দারোগাবাবু বা বড় কর্তার বাড়ীতেও বাড়ীর নতুন গাছের নতুন ফল দেয়া হত ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে। এটা বেশী দূরের কথা নয়। সাধারনত থানার কর্তা বাবুর আর গ্রামের পন্ডিতের আর্থিক অবস্থা তখন তেমন বেশী ভাল না থাকলেও সমাজে প্রভাব এর দিক থেকে তারা ছিল অগ্রগামী। পুলিশের ছেলে বা মেয়েদের এমনকি তাদের আত্মীয়ের সাথে আত্মীয়তা করা ছিল সোনার হরিনের মত। আজ এগুলো সবই নিকট অতীতের গল্প ।

আমার এক সহপাঠী আজ পুলিশের অনেক বড় কর্মকর্তা। সেদিন দুজনে অনেক গল্প হচ্ছিল, জিজ্ঞাসা করলাম, তোর ছেলে বা মেয়ে কাউকে পুলিশে আনবিনা? উত্তরে বলল, প্রশ্নই আসেনা , বাদ দে সে কথা। আমি এমনও বিব্রতকর পরিবেশ এর স্বাক্ষী, যেখানে মেয়ের বাবা পুলিশ হবার কারনে ছেলে পক্ষ বিয়ের প্রস্তাব মেনে নেয়নি। কিন্তু এমনতো হবার কথা ছিলনা। এ অবস্থার জন্য ক্ষমতাসীনরা কত দায়ী আজ প্রকাশিত একটি সংবাদ বিশ্লেষন করলে যে কেউ বুঝতে পারবেন। যেখানে তাদের অসহায়ত্ব ব্যাপকভাবে ফুটে উঠেছে।
Click This Link
সংবাদটিতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশের চাকরী ছাড়ার জন্য কর্মকর্তার বাবা, আত্মীয়স্বজন, এমনকি স্ত্রী পর্যন্ত বারবার অনুরোধ করছে। স্ত্রী এর বক্তব্য তুলে না ধরলেই নয়,”আমাকে একবেলা খাবার দিলেও হবে, তবু তুমি আর পুলিশের চাকরী করোনা।” সবসময় এমন পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হয়, তারও সুন্দর এক ব্যাখ্যা দিয়েছেন এক কনষ্টবল, ”উপরের মহল থেকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে কোন মিছিল করতে দেয়া হবেনা।”- আর এই উপরের মহল এর সংজ্ঞা আমরা সবাই জানি। দূর্ভাগ্য, পুলিশের কিছু উৎসাহী লোক আবার এই মহলের আশীর্বাদপূষ্ট হবার জন্য নির্দেশ ছাড়াও একটু আলাদা ক্রেডিট নিতে চান।
পুলিশের এই হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করতে হলে পুলিশকেই পদক্ষেপ নিতে হবে, তাদেরকে জনগনের সেবক হিসাবে জনগনের ভাষা বুঝতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই ইতিহাস থেকে শিখতে হবে, সেবকের পোশাক পড়ে , সামান্য লাভের আশায় যারা জনগনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন , তারা সর্বদাই উভয় পক্ষের কাছ থেকেই নিগৃহিত হয়ে আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হন।
সমসাময়িক সময়ে, জামাত-শিবিরের ব্যাপারে পুলিশের ইউটার্ন আচরন , যে যেভাবেই দেখুক না কেন অবশ্যই পুলিশের সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে , পানি অনেক ঘোলা হয়ে গেছে। তাদের এই বোধোদয় নিশ্চয়ই প্রশংসার যে, যে কোন আদর্শের বিরুদ্ধে (হোক সে ভাল বা খারাপ) নির্যাতন তাদের আন্দোলনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, কখনও অবনমিত হয়না। কিন্তু দূর্ভাগ্য, ইতিহাসের চরম শিক্ষা হচ্ছে, মানুষ ইতিহাস থেকে শেখেনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×