somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সাহিত্যচর্চা ১

০২ রা জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাস টেন হতে ভার্সিটি পর্যন্ত সময়টা আমার জন্য ফলন্ত ছিল।পরিমাণে কম হলেও কিছু কিছু লিখেছি নিয়মিত।তার পরের সময়টা বন্ধ্যাকাল।সুদীর্ঘ অনেকটি বছর পার করেছি কিছু না লিখেই।

ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় (সময়কাল ৯৩ থেকে ৯৫) আমরা পাঁচজন মিলে হাতে লেখা সাহিত্য পত্রিকা বের করেছিলাম। আমি, তানভীর ভাই, পাপ্পু ভাই, অপু আর আজাদ। তখনকার দিনে আজকালকার মত কম্পিউটার, ইন্টারনেট এত সহজলভ্য ছিল না। আমিতো তখনো কম্পিউটার ব্যবহার দূরে থাকুক চোখেও দেখিনি। ফলে কার্বন পেপার আর কাগজ কলমই ছিল ভরসা। প্রতিমাসে আমরা সম্পাদকের কাছে (তানভীর ভাই) লেখা জমা দিতাম। তারপর একজনের উপর দায়িত্ব পড়ত লেখাগুলো কপি করার। কাজটি কষ্টকর হলেও আমাদের উৎসাহের কমতি ছিল না। আমরা লেখক, আমরাই পাঠক। সাহিত্য পত্রিকার বিষয়বৈচিত্র্যও ছিল নজরে পড়ার মত। আমি কবিতা, অনুবাদ, প্যারোডি, অপু আর পাপ্পু ভাই গল্প,তানভীর ভাই প্রবন্ধ আর আজাদ রহস্য উপন্যাস। তানভীর ভাই আর পাপ্পু ভাই তখন বামঘেষা দর্শনের সাথে একাত্ম। তাদের লেখা প্রবন্ধ কবিতায় সেই ছাপটি স্পষ্ট।

একাজের সুবাদে আমাদের এলাকায় যখন বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সাহিত্য স্মারক বের হবে তার সম্পাদনার কাজ আমরা পেলাম। আমার লেখা ছড়া কবিতাগুলো সেইবারই প্রথম ছাপার অক্ষরে বের হলো। লেখক হিসাবে আমি ছিলাম নিভৃতচারী। যদিও আমার ছড়া কবিতার মান নিয়ে আমার নিজের মনে কোনো সন্দেহ ছিল না, তবু তা ছাপতে দেওয়ার ব্যাপারে আমার ছিল বরাবরের অনীহা।

এখন থেকে ভাবছি ব্লগে লিখব। একসাথে এতজন সমঝদার পাঠক পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে এতখানি সহজ-সাবলীল ও উন্নত করে দিয়েছে তা অনুভবের বিষয়।

বিজয় দিবস স্মারকে স্হান পাওয়া আমার কয়েকটি ছড়া ও কবিতা আপনাদের সাথে এখানে শেয়ার করলাম।

কোন সে দেশে

কোন সে দেশে মেঘের ভেলা,
আকাশ গাঙে করে খেলা,
হরেক রঙের ফুলের মেলা
চোখ জুড়িয়ে দেয়?

কোন সে দেশে সুনীল আকাশ,
বীজন করে শীতল বাতাস,
ছড়িয়ে কুসুম মধুর সুবাস
প্রাণ হরিয়ে নেয়?

কোন সে দেশের মাঠের পরে,
কাজল ভ্রমর খেলা করে,
কোন সে দেশে বৃষ্টি ঝরে
তপ্ত হৃদয় মাতায়?

কোন সে দেশের মাঠের পরে,
ফসল ফলে থরে থরে,
কোন সে দেশে শিশির ঝরে
গাছের পাতায় পাতায়?

কোন সে দেশের গগণ তলে,
লক্ষ শত প্রদীপ জ্বলে,
আঁধার রাতে জোনাক খোলে
আলোক-পেখম তার?

কোন সে দেশের দীঘির জলে,
শাপলা শালুক কমল দোলে,
রূপের আভায় হৃদয় ভোলে
দুঃখ-ব্যথা ভার?


কিচির মিচির

ভোরের পাখির কিচির মিচির
শুনে পুলক জাগে,
ছোট্ট শিশুর কলরবও
তেমন মধুর লাগে।

তরু লতার ডালে ডালে
যেমন পাখি নাচে,
সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে
মিষ্টি রোদের আঁচে।

সব শিশুরা তেমনি ভোরে
বসে মায়ের কোলে,
শান্ত নিরব নিথর ধরা
মুখর করে তোলে।

সবাই মিলে শোনায় তারা
শান্তি সুখের কথা,
ভোরের হাওয়ায় যায় যে মিশে
তাদের আকুলতা।

শিশুর ঠোঁটে মধুর হাসি
পাখির গলায় গান,
দেয় ছড়িয়ে হাসি গানের
সুধা অফুরান।

পাখি শোনায় সুখের বাণী
শিশু জাগায় আশা,
পাখি-শিশু, দুয়ের বুকে
গভীর ভালবাসা।


আমরা শিশু

আমরা শিশু আমরা কিশোর,
নিরব ধরায় তুলব যে শোর,
সবুজ কুঁড়ি আমরা তরুর,
বীণার গলায় মোহন সুর।

আমরা সতেজ কুসুম কুঁড়ি,
নেইক মোদের রূপের জুড়ি,
চপল বিহগ যায় যে উড়ি,
গায় মেখে নেয় সুবাস মধুর।

আমরা হীরা আমরা মানিক,
মেঘের ফাঁকে রোদের ঝিলিক,
আমরা দোয়েল, আমরা পিক,
করব সজীব ধূলো মরুর।

আমরা চটুল কাজল ভ্রমর,
গিরির গায়ে ফুল্ল নহর,
গগণ তলে চাঁদ যে অ-ধর,
আধার রাতে আলোক-নুর।

আমরা যুবা আমরা তরুণ,
নিশার শেষে ঊষার অরুণ,
ঘুঁচিয়ে মোরা আঁধার করুণ
আনব ধরায় নতুন ভোর।

দূর করে ঘোর অমানিশা,
আনব মোরা পথের দিশা,
কন্ঠে মোদের অপার তৃষা,
নতুন দিনের প্রভাত-আলোর।


এক অনেক ও সমৃদ্ধি

একটি সীমের বীজ,
একটি ধানের শীষ আর
একটি লাউয়ের কচি ডগা,
কি-ই বা এমন অমূল্য ধন?
কিন্তু একবার চাষী বুনে দিল ক্ষেতে।

কিছুদিন পর জন্ম নিল-
একটি সীমের বীজ হতে একটি চারা,
ধানের শীষ হল কয়েকটি গাছ,
লাউয়ের কচি ডগা হতে আরো অনেক ডগা।
বছর ঘুরে গেল,
নতুন বছর এলো ফিরে,
চাষীর মনে হাসি এলো ফের।

সেই সীমের বীজটি হারিয়ে গেল অনেক বীজের স্তুপে,
লাউয়ের কচি ডগা বয়সের ভারে গেল শুকিয়ে,
সেই ধানের শীষ আর খুঁজে পাওয়া গেল না গোলায়।

একটি সীমের বীজ,
একটি ধানের শীষ আর
একটি লাউয়ের কচি ডগা,
দিয়ে গেল নতুন সমৃদ্ধির আশ্বাস।


সময় ও স্মৃতিরা

সময়ের নদী চলছিল দুকূলে প্লাবন সৃষ্টি করে।
সরে গেলে পানি দেখলাম জমে আছে
একরাশ স্মৃতির পলিমাটি।
কখনো কখনো মাঝনদীতেও জেগে ওঠে চর
তার দুপাশ দিয়ে বয়ে চলে নদী
দিগন্ত বিস্তৃত পথে।
শুধু জেগে থাকে পলি-স্মৃতি চর।

কখনো কখনো দেখি রুক্ষ ধূলি উড়ছে সেখানে
ঝড়ো বাতাসের ঝাপটায়।
কখনোবা খুঁজে পাই হারানো ফুলের সৌরভ
কখনোবা নিজেই হারিয়ে যাই, হারিয়ে যেতে চাই
অচেনা নদীর চিরচেনা বাঁকে।


একটি কবিতা

একটি কবিতা লিখব ভেবেছিলাম- দীর্ঘ ধ্রুপদী
জীবনেতিহাস জাগ্রত হবে
সরস ভঙ্গিমায়।
আঁখির পাতা দুটো স্হির হয়ে যাবে যখন
শেষবারের মত কেঁপে ওঠে
ললাটের কুঞ্চন ক্ষীণ হতে হতে মসৃণ হবে
হৃদয়য্ন্ত্র যখন ক্লান্তিতে হৃদয়হীন হয়ে পড়বে
তখন সেই কবিতা হবে আমার
অস্তিত্বের স্বাক্ষর।

যখন শিউলি ফোঁটানো ভোর
ঝিঁঝি ডাকা অলস দুপুর
আর নিমের ডালে টুনটুনি চড়ুইয়ের আনন্দ হিল্লোল
অনুভূতি জাগাবে না।
হাস্নাহেনার আকুল সুবাসে মুগ্ধ হয়ে সাপ
আসলে্ আসতেও পারে আঙিনায়- কেউ জানবেও না হয়ত।

আকাশের ঘন নীল জমাট অন্ধকার হয়ে
দুলে উঠবে কালো পর্দার মত
বাতাসের ছন্দ শিহরণ, দ্বাদশীর পূর্ণ চাদ আর
তারকার মৃদু আলোক বিচ্ছুরণ সব এক হয়ে যাবে।
তখন আমার সেই ধ্রুপদী কবিতা হবে উজ্জ্বল ধ্রুবতারা।

সুর আর অসুরের মিলিত স্রোতে ঢেকে যাবে
কালের সীমানা।
সব হাসি বাসি হয়ে বিলীন হয়ে যাবে
কান্নার আদিমতায়।
আকাশ কালো করে নামবে ঘোর বর্ষা আর
মাঝে মাঝে ঝলসে উঠবে বিদ্যুত ঝলক।

একটি কবিতা লিখব ভেবেছিলাম- দীর্ঘ ধ্রুপদী
বুলবুলিদের কন্ঠে যেমন একটি শিষ
শিউলি ফুলের কপোল ছুঁয়ে স্নেহের আশিষ,
সেই কবিতায় থাকবে জেগে ফুলবাগান।

জবার মোচড়ানো কান্ড্টা একটু একটু করে
উপরে উঠে গেছে। কচি পাতার শিরাবিন্যাসে
রোদ ঝিলিক দেয়, দুলে উঠে বাতাসের সাথে।
আমার সেই কবিতা হয়ত হবে
একটু বাতাসে দুলে ওঠা রক্তজবার শাখা।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:০০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×