somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেলোয়ার ভাই আপনিই পারবেন!! ‘নিখিল বঙ্গ গঞ্জিকা পার্টি’!!!!!!

১৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্বসূত্র (Recap):

দেলোয়ার ভাই এক অদ্ভুত চরিত্র, চেহারা মাশাল্লা শুধু মুখটা একটু খারাপ। একটু খারাপ মানে বুঝিয়ে বলি। তাকে নিয়ে অনায়াসে কোন নাটক এমনকি সিনেমাও তৈরী করা যাবে, সমস্যা হল পুরা ছবি জুড়েই ডায়লগের জায়গায় টুট.টুট.টুট জাতীয় সেন্সর শব্দ যোগ করতে হবে। এই দেলোয়ার ভাই দমবার পাত্র নয়।যতই বোঝাতে চেষ্টা করি, ভাই কানাডা থেকে আমি ভিসা পাঠাতে পারিনা, তাছাড়া আমিও তো নতুন!

-মোসাদ্দেক (টুট.টুট.টুট) সৌদিআরব দিয়া ভিসা পাঠাইতে পারলে তুই পারবি না কেন? তোরে আমি আপন ছোটভাইয়ের মত...

বুঝলাম, একে এই পথে বোঝানো কঠিন হবে।সৌদি হলে নাহয় শিরোচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে নিবৃত্ত করা যেত, কিন্তু কানাডাতে তো ঠান্ডা ছাড়া আর কোন ভয় দেখানোর উপায় নাই। দেলোয়ার ভাইকে ঠান্ডার ভয় দিয়ে লাভ নাই।মাঘ মাসের রাতে ৮ কিলোমিটার হেঁটে ‘আলোমতি রূপকুমার’ দেখা চিজ সে।তার উপরে, হলিউডের ছবির বদৌলতে আমেরিকা-কানাডা মানে চাইলেই সব পাওয়ার দেশ। ডলার, গাড়ী, বাড়ী, চাকরী, আর নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশা, না জানি সে আরও কত কি আগাম চিন্তা করে রেখেছে।তবে সে বারে কোনমতে নিবৃত্ত করতে পারলেও এবারের অনুরোধটা কিন্তু আমাকে যথেষ্ট ভাবিয়ে তুলেছে।পলিটিক্সে নামছে দেলোয়ার ভাই।অবশ্য ইতপূর্বে ডেসটিনি, ইউনিপেটুইউ, ওয়েবসাইটে ক্লিক করা, হাতের বালা, যুবক, আর নামসর্বস্ব ইন্সুরেন্স কোম্পানীর এমন কোন প্রজেক্ট নাই যার পিন্ডি চটকাননি। এমনকি কয়েকবছর আগে দেখেছিলাম উনি ‘পিলার’ এর ব্যবসায় নেমেছেন। নাহ খাম্বা না, বৃটিশ আমলের পোতা সীমানা নির্ধারনকারী চুম্বকজাতীয় বস্তু যা দিয়ে নাকি বহু মূল্যবান বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি তৈরী হয়। একদিন হন্তদন্ত হয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলল:

-শোন, এমনি জিনিসের ব্যবসায় নামছি, এক ডিলে কোটিপতি।কালো বিড়ালের মাথা, অনেক পুরাতন কাঁচের বোতল বা পুরাতন কয়েন থাকলে বলিস।মাল ইন্ডিয়ার বর্ডার ক্রস করার আগে পেমেন্ট।

-ভাই কি কালো যাদু (ব্লাক ম্যাজিক) প্রাকটিস শুরু করেছেন?

আমার মাথায় তখন লুসিফার, মনে দেলোয়ার ভাইয়ের আর একদফা সমূহ বিপদের চিন্তা। সেযাত্রা অবশ্য থানার ওসিকে হাজার বিশেক দিয়ে কোনমতে মানইজ্জতটা বাঁচিয়েছিলেন।

পর্ব ১:
অনেকদিন পরে এই সূদূর প্রবাসে দেলোয়ার ভাইয়ের কল পেয়ে অজানা আশংকায় পেয়ে বসলেও রাজনীতির কথা শুনে আশ্বস্ত হলাম। রাজনীতিতে মানুষ সর্বোচ্চ অকাজ করেও পার পেয়ে যায়। তাছাড়া দেলোয়ার ভাইকে আমি অনেকদিন থেকেই একজন ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে কল্পনা করে এসেছি। রাজনীতিবিদ হবার প্রোফাইলে উনি সাফল্যের সাথে প্রায় সবকিছুই ইতিমধ্যে যোগ করে ফেলেছেন।খুব উৎসাহ নিয়ে শুরু করলেন:

-দলের সবকিছু ঠিকঠাক। গঠনতন্ত্র, সম্ভাব্য নেতা-কর্মী, মেম্বারশীপ ফরম। সামনের ইলেকশানে ইনশাল্লা সব সিটে প্রার্থী দিতে পারব।তুই খালি কয়েকটা জায়গায় আমার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করবি।

-ভাই, একটু বুঝাইয়া বলেন।তাছাড়া আমি কানাডায় বসে আপনাকে হেল্প করব কেমনে?

-বাঙালী জাতির আবেগ বেশী এটা বুঝোস?

-বুঝি।

-ভোটাররা তৃতীয় শক্তি খুঁজতেছে এটা বুঝোস? আওয়ামিলীগের নির্বাচনী ইশতেহার পূরনে ব্যর্থতা আর বিএনপির জামাতপ্রীতিতে মানুষজন খুব অসন্তুষ্ট।এখনই সময় নতুন দল করার।

-বুঝলাম, কিন্তু দলের নাম কি? কে ই বা দলের প্রধান হবেন? বড় দল দিয়া কারও বহিষ্কার হবার খবরও তো শুনিনাই।

-সামনে থাকলে একটা থাপ্পর খাইতি। ভাইরে দেখলে নেতা মনে হয় না? আমারে দিয়া কি হয় এইবার দেখ।

-না ভাই, আপনে পারবেন না এইটা কোন কথা হইলো? বুঝছি, আমাকে আইডিয়া দিয়া হেল্প করতে হবে তাই তো??

দেলোয়ার ভাই গম্ভীর গলায় তাকে দেয়া আমার যাবতীয় ফ্লপ আইডিয়াগুলোর কয়েকটা মনে করিয়ে দিয়ে ভালো করে খেয়াল করে শুনতে বললেন:
-শোন, কানাডায় ‘মারিজুয়ানা পার্টি’ নামে একটা দল আছে। সোজা বাংলায় বললে গাঞ্জা পার্টি।ওই দলের একটা শাখা খুলতে চাই বাংলাদেশে।তুই ওই দলের কারও সাথে যোগাযোগ করে ওদের কনসেন্টটা লিখিত আকারে নিয়ে রাখবি। আর পড়াশুনার চাপ কম থাকলে গঠনতন্ত্রটা একটু একটু করে বাংলা করতে থাকবি।দলের লোগোটাতেও একটু চেঞ্জ আনতে হবে। সবুজ পাতার বদলে শুকনা শুকনা কিছু। এতে দলের প্রতি মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতাটা আরও বাড়বে।যতটা রিয়েল করে তুলে ধরা যায়া আরকি।

-খাইছে আমারে, আপনার মাথা ঠিক আছে? এই দল বাংলাদেশে চলবে? তাছাড়া শুনলেই তো কেমন কেমন লাগে, গাঞ্জা পার্টি!!!!নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন করতে দেবে একটা বিদেশী দলকে?

দেলোয়ার ভাইয়ের ফালতু আলাপকে যে কতটা সিরিয়াসলি নিয়েছি তা বোঝানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রসঙ্গটা একরকম হাসি চেপে রেখেই নিয়ে আসতে হল। বিধি বাম, আসলেই দেলোয়ারভাই দমবার পাত্র না!

-তুই লেখাপড়া অনেক করলেও দেশ সম্পর্কে কিছুই জানিস না। বলছিলাম না বাঙালী আবেগী জাতি? বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যে হুজুগ উঠলে শুধু গাঞ্জা পার্টি না টুট টুট টুট.....পার্টিও সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে।তাছাড়া দেশে প্রচুর লোক নেশা করে, আমার দলে নেশাখোরের মাত্রা অনুসারে সম্পূর্ন গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্কিল লেভেল দেখে নেতা কর্মী নিয়োগ করা হবে। আর নেশা না করলেও দলের জন্য জীবন দেবে এমন অনেক লোক পাওয়া যাবে। দেখিস না, ধর্মকর্মের ধারও ধারেনা অথচ কত লোক ধর্মভিত্তিক দলকেই ভোট দেয়? অনেকে তো জীবনটাই দিয়ে দিতেছে। একবার কোনমতে হুজুগটা উঠাতে পারলেই হইছে।শুনতেছিস???

দেলোয়ার ভাইয়ের ধমকে সম্বিত ফিরে পেলাম। কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে। তার ক্রিয়েটিভিটির লেভেল অতীতের সমস্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

-কিন্তু ভাই, নির্বাচন কমিশন? একটা বিদেশী দল...

-আরে ...টুট টুট..., জামাত ইসলাম কি দেশীয় দল? জামাত ইসলাম নিষিদ্ধ না হলে আমাকেও ‘গাঞ্জা পার্টি বাংলাদেশ’ এর অনুমতি দিতে হবে। দেখিস না, গোলাম আযমের ৯০ বছর জেল হয় আর জামাত ইসলাম পাকিস্তান তার বিরূদ্ধে বিক্ষোভ করে? একসময় আমারও কিছু হলে দেখবি কানাডার মানুষজন তার বিরুদ্ধে রাজধানী টরোন্টোর রাস্তায় গাড়ী ভাংচুর করবে। আমার চোখের সামনে টরোন্টোর চওড়া রাস্তা, কানে বেজে উঠল, ‘দেলোয়ার ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’।

-ভাই কানাডার রাজধানী তো টরোন্টো না অটোয়া।

-তোর খালি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে আগ্রহ বেশী।

গাড়ী ভাঙার প্রসঙ্গটা নিয়ে বাড়তি কথা বলার সাহস হলনা। এমনিতেই পার্টির নাম ‘গাঞ্জা পার্টি বাংলাদেশ’ এর বদলে ‘নিখিল বঙ্গ গঞ্জিকা পার্টি’ প্রস্তাব করে কয়েকজন অতিশয় ভদ্র সাহিত্যিকদের কয়েক জেনারেশন সহ গালি খাইয়েছি। পার্টির মটো ‘আ্ইনসিদ্ধ গাঞ্জা বিপ্লব’ (Legalize Marijuana Revolution) অথবা ‘গাঞ্জার প্রতি কোন পূর্বসংষ্কার নয়’ (No Prejudice to Marijuana) কোনটাই তার পছন্দ হয়নি। তার মতে, দল বিদেশী হলেও এর মটো দেশী হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ বিষয় নিয়ে নাকি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন নামকরা প্রফেসরদের সাথে ডিটেইলস কথা বলে ঠিক করে নিবেন। দেলোয়ার ভাইকে অতিসত্ত্বর সবকিছু জানাবো বলে আশ্বস্ত করে স্কাইপির ক্রস বাটন চাপলাম। ঠিক ধরেছেন, লাইন কাটেনাই, শুধু মিনিমাইজ হইছে।পাগলের কারখানা!

অনুসন্ধিতস্যু পাঠকের জন্য কানাডার ‘মারিজুয়ানা পার্টি’র ওয়েবসাইট দিয়ে দিলাম।

http://www.marijuanaparty.ca/index.en.php3

আরও কিছু ফ্যাক্টস:
১. ২০১৩ নির্বাচনে মারিজুয়ানা পার্টি কানাডা থেকে ২৫০ জনেরও বেশী প্রতিনিধি প্রতিদ্বন্দিতা করেছেন।
২. ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দলটি ২০০১ সালের প্রভিন্সিয়াল ইলেকশানে ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় ৩% ভোট পায়।
৩. Marc-Boris St-Maurice এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা।

(চলবে)
[দেলোয়ার ভাইয়ের কল পাওয়া সাপেক্ষে]



৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×