somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেনি

০৬ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মামার মাধ্যমেই তার সঙ্গে প্রথম পরিচয়। ডাক নাম জেনি। পুরো নাম জেনি অগাস্টা। বয়স উনিশ কী কুড়ি হবে। দেখতে ভারি সুন্দর। আহা! বঙ্গদেশে এমন সরস যুবতীর সঙ্গে আগে পরিচয় হলো না কেন? বাঙালি মেয়েদের মতোই তার চুলের গড়ন। হাসলে গালে টোল পড়ে। সে সৌন্দর্য বড়ই অদ্ভুত, বড়ই মনোহর। যেনো সে টোলপড়া গালের শৈল্পিক অংশজুড়ে খেলা করে পৃথিবীর সব সাজানো সুন্দর। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। গ্যাজ দাঁতওয়ালাদের হাসি যেমন অদ্ভুত সুন্দর তেমনই গালে টোলপড়া রমণীদের হাসিও। তার ভাঙা ভাঙা বাংলা কথা আমার বেশ লাগে। আমি মুগ্ধ হই,আপ্লুত হই। আমার কাছে মনে হলো সে যেনো এক জীবন্ত গোলাপ; যার জন্মই হয়েছে কেবল সুবাস ছড়ানোর জন্য।

কথা বলতে বলতেই সে মুচকি হাসে। তার সে হাসিজুড়ে ভালোলাগার পরাগরেণু ছড়িয়ে পড়ে। আমি সে দৃশ্যমান পরাগরেণুর সমুদ্রে হাবুডুবু খাই। বৈকালিক ফুরফুরে হাওয়ায় অনুভূতিগুলোকেও আজ বেশ সতেজ মনে হচ্ছে।

আমরা গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটছি। মেয়েটি মাঝেমাঝেই মান্দি ভাষায় কথা বলছে। যখন বুঝতে কষ্ট হয় তখন ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। সে বুঝতে পারে। মুচকি হেসে বাংলা অনুবাদ করে দেয়। বেশ ভালো লাগছে। মাঝে মাঝে রসিকতাও করছে। আমার মনে পড়ে গেল জহির রায়হানের একুশের গল্পে’র তপুর কথা! আমিও তপুর মতো করে কাব্যিকঢঙে বললাম—এই যে আঁকাবাঁকা মেঠোপথ, এ পথের যদি শেষ না হতো, অনন্তকাল ধরে যদি এভাবে পাশাপাশি হেঁটে যেতে পারতাম...। জেনি হাসে। সে হাসির সমুদ্রে একবার অবগান করলে আর ফিরতে ইচ্ছে করে না।

মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে কখন যে আমরা ছোটো টিলার ওপর এসে পড়েছি তা টেরও পাইনি। এ যেনো আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের জীবন্ত উদাহরণ! টিলার চারপাশ জুড়ে আনারসের বাগান। কত কাঁচাপাকা আনারস! যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। সে সবুজের বুকে খেলা করছে কাঁচাপাকা আনারসের সমারোহ। জেনি আরও ওপরে উঠছে। আমাকে মুচকি হেসে বলছে—রি রি থিংরি থিংরি।
আমি কিছু না বুঝে বোকার মতো তাকিয়ে থাকি। সে মায়াময় টোলপড়া হাসি দিয়ে বলল—তাড়াতাড়ি এসো। মুহূর্তেই আমার হাঁটার স্পিড দ্বিগুণ বেড়ে যায়। চূড়াতে উঠতেই হঠাৎ কয়েকজন মুখোশপরা অস্ত্রধারী আমাদের ঘিরে ফেলে। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই কেউ একজন পেছন থেকে সজোরে মাথায় আঘাত করে। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।

যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখি জেনির ক্ষতবিক্ষত দেহের ওপর দিয়ে সূর্য উঠছে।

২০.০৩.২০১৯
কালিগঞ্জ, জকিগঞ্জ, সিলেট
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:১৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×