somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবিশ্বাস আর সন্দেহ, বিয়ে বিচ্ছেদ বাড়ছে

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কাচের টুকরোর মতো ভেঙে যাচ্ছে সংসার। অথচ সুখ-স্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস আর অবিচ্ছিন্নভাবে অনন্তকাল থাকার অঙ্গীকার নিয়ে সামাজিক বন্ধনের শুরু হয়েছিল। দাম্পত্য জীবনে অবিশ্বাস সন্দেহ আর স্বার্থপরতা সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে।
ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত ১ বছরে প্রায় ৫ হাজার বিয়ে ভেঙেছে। সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন সালিশি পরিষদের মাধ্যমে গত ৪ বছরে ১৫ হাজারেরও বেশি বিয়ে ভেঙেছে। বিয়ে বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারীদের আগ্রহই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ৮ মাসে অঞ্চল ৫-এ ৪৮৯টি তালাকের নোটিশ এসেছে। এর মধ্যে স্ত্রী তালাক দিয়েছেন ৩৩১ জনকে। স্বামী তালাক দিয়েছেন ১৫৮ জনকে। ৮ মাসে এ অঞ্চলে ২৯৫টি মামলা নিষ্পন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে আপস নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২টি। আগস্ট মাসেই এ অঞ্চলে এসেছে ৫১টি অভিযোগ। এর মধ্যে স্ত্রীর মাধ্যমে তালাক দেয়া হয়েছে ৩৮ জনকে। স্বামীর মাধ্যমে তালাক দেয়া হয়েছে ১৩ জনকে। গত ৪ বছরে অঞ্চল ৩-এ ১২২১টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে স্বামীর পক্ষ থেকে তালাক দেয়া হয়েছে ৪১১ জনকে। স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক দেয়া হয়েছে ৮০০ জনকে। গত ৩ মাসে এ অঞ্চলে তালাকের অভিযোগ এসেছে ৫৫টি। এর মধ্যে স্ত্রীরা তালাক দিয়েছেন ৩১ জন স্বামীকে। স্বামীরা তালাক দিয়েছেন ২৪ জন স্ত্রীকে। সালিশের মাধ্যমে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিচ্ছেদ ঘটেছে। অঞ্চল ৩-এ আসা ১২১১টি নোটিশের মধ্যে আপস হয়েছে মাত্র ২৮টি। ২০০৩ সালে ডিসিসিতে তালাকের নোটিশের মোট সংখ্যা ছিল ৩২০২টি। এর মধ্যে তালাক কার্যকর করা হয়েছে ২৯৬১টি। ২০০৪ সালে তালাকের নোটিশের সংখ্যা ছিল ৩৩৩৮। তার মধ্যে কার্যকর করা হয়েছে ২৮১৪টি।
স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের অভিন্ন অভিযোগ পরকীয়া এবং শারীরিক নির্যাতন। তবে নারীরা ভরণ-পোষণ না দেয়া, যৌতুক ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনের কথাও উল্লেখ করেছেন তালাক নোটিশে। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে-সামাজিক অস্থিরতা, মাদকাসক্তের প্রভাব, জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি, একে অপরের বোঝাপড়ার অভাব, সামাজিক দায়বদ্ধতার অভাব। মালিবাগ এলাকার এক ব্যবসায়ী। ২৬ বছর কেটে গেছে দাম্পত্য জীবনের। মেয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছেন। হঠাৎ করেই ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে তার স্ত্রী তালাকের নোটিশ পাঠান তার নামে। কারণ হিসেবে নোটিশে শারীরিক নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেন। ডিসিসি’র সালিশি পরিষদ উভয়পক্ষকে ডাকে। বেরিয়ে আসে আসল কাহিনী। স্ত্রী ২০০৮ সালে ডিভি লটারি পান। সেজন্যে তিনি যে পাসপোর্ট তৈরি করেন সেখানে অবিবাহিত লেখা। কিন্তু ডিভি লটারির তদন্তে তা ধরা পড়ে। আমেরিকা যেতে পারবেন না ভয়ে তিনি স্বামীকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সালিশি পরিষদে স্ত্রীর কাছে স্বামী জানতে চান, তিনি কোনদিন স্ত্রীকে নির্যাতন করা তো দূরের কথা কোনদিন কটু কথা বলেছেন কিনা। এ সময় স্ত্রী না-বোধক উত্তর দিয়ে সালিশি পরিষদে জানান, আমি স্বামী, সন্তান চাই না, ডিভোর্স চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়ে বাবা-মাকে বারবার অনুরোধ করেন সামাজিক মর্যাদা ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে যেন তালাক কার্যকর না করেন। মায়ের জন্যই তালাক কার্যকর করতে বাধ্য হয় সালিশি পরিষদ। আমিরুল ইসলামের সঙ্গে নাজমা ওরফে অন্তরার বিয়ে হয় চলতি বছরের ১লা মে। তারা থাকেন কোতোয়ালি এলাকায়। অন্তরার বাড়ি শরীয়তপুরে। স্বামী আমিরুলের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই অন্তরা বেপরোয়া চলাচল করছে। স্বামীর কথা শুনছে না। এসব কারণে বনিবনা না হওয়ার অভিযোগ তুলে গত ২রা সেপ্টেম্বর অন্তরাকে তালাক দিয়েছে আমিরুল। এ তালাকের নোটশটি গত ২৫শে আগস্ট ডিসিসিতে এসেছে। কাইয়ুম খানকে বিয়ে করে মুন্সীগঞ্জের সাহারা আক্তার নবাবগঞ্জে বসবাস করছেন ১৯৯৯ সালের ৩রা ডিসেম্বর থেকে। সাহারার অভিযোগ স্বামী কাইয়ুম নেশা করে। তাদের মধ্যে বনিবনা নেই। স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ দেয় না। যৌতুক দাবি করে। এসব অভিযোগে গত ২৪শে জুন সাহারা তালাক দিয়েছে স্বামীকে। অভিযোগটি ২রা সেপ্টেম্বর ডিসিসিতে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী জানান, মানুষের ধৈর্য কমে গেছে। সংসার টিকিয়ে রাখার জন্যে প্রয়োজন পারস্পরিক সহানুভূতি। আজকাল ছেলে-মেয়েরা অনেক বেশি ফ্রি। মেয়েরা চাকরি করায় অনেক ছেলেদের সঙ্গে মিশতে পারছে। আগে মেয়েরা লেখাপড়া করলেও চাকরি করতো না। নারী নির্যাতন ও যৌতুক আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। অর্থনৈতিক টানাপড়েনসহ নানা কারণে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে তারা আলাদা হতে বাধ্য হয়। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সন্তানদের ভবিষ্যতের ওপর। নতুন স্বামী বা স্ত্রী আগের সন্তানদের সহজভাবে মেনে নেয় না। ফলে তারা নানা অন্যায় কাজে যুক্ত হচ্ছে। পারিবারিক অশান্তির কারণে বাড়ছে সন্ত্রাস। নতুন প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পারিবারিক বন্ধন টিকিয়ে রাখার জন্য সারা বিশ্বে কাউন্সিলিং চলছে। আমাদের দেশেও এটা প্রয়োজন। দরকার সরকারি উদ্যোগ।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. শামীম ফেরদৌস করিম বলেন, এ সমস্যা সমাজে প্রকট আকার ধারণ করেছে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে সহ্য-শক্তি কমে গেছে। কেউ কাউকে মানতে চান না। এটা রোধে কেবল কাউন্সিলিংই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মত প্রশিক্ষণ। যাতে নিজেরা নিজেকে চিনতে পারেন। বুঝতে পারেন। ব্যবহার পরিবর্তন করতে পারেন। জোর করে কিছু চাপিয়ে দিলে চলবে না। তিনি জানান, যেখানে বিচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে সেখানে বিচ্ছেদ ঘটাতেই হবে।
জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট সালমা আলী জানান, উন্নত প্রযুক্তির যুগে সুস্থ ধারার সংস্কৃতি না থাকায় মানুষ নৈতিকতাবোধ হারিয়ে পরকীয়া বা নেশার দিকে ঝুঁকছে। মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিকৃত রুচিবোধ। বাসা ও কর্মস্থলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না অনেকে। ফলে তারা একটিকে বেছে নেয়। ভালভাবে যাচাই-বাছাই না করেই আজকাল বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। টাকার জন্য অনেকে বিয়ে করে। বেতন পাওয়ার পরই স্বামী তার স্ত্রীর কাছ থেকে বেতনের টাকা বুঝে নিচ্ছে। চলছে নির্যাতন। আগে মেয়েরা এসব মুখ বুজে সহ্য করতো। এখন তারা সহ্য করে না। তিনি জানান, বিবাহ বিচ্ছেদের এ প্রবণতা শুভ লক্ষণ নয়। বিচ্ছেদের পর যে নতুন জীবন শুরু হয় তা-ও ভাল হয় না। এর প্রভাবে সন্তানরা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে। এর চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, পতিতাবৃত্তিসহ নানা অপরাধকাজে জড়িয়ে পড়ছে। পাচারও হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ রোধে প্রয়োজন নতুন আইন।
মুল লিংক

৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×