somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিল-অমিল নেপোলিয়ন-হিটলার (ষষ্ঠ পর্ব- উত্থানের পেছনের কাহিনী)

০৬ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানুষের জীবনে উত্থান-পতন কেমন তর হতে পারে? সাধারণ হার্ট-বিটের মতো নাকি বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের সূচকের মতো? আমার নিজের একটা দর্শণ আছে। সেটা হলো- জীবন অথবা জাতি বা সভ্যতা অনেকটা ফোয়ারার মতো। যদি উপরে উঠে, যত উপরেই উঠুক তা একসময় নিচে নেমে আসেই।

আসুন নেপোলিয়ন আর হিটলার সম্পর্কে বরাবরের মতো কিছু জানি। ঠিক কি নিয়ে আলোচনা সেটা এখনো ঠিক করিনি। লেখা এগুতে এগুতে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে।

নেপোলিয়নঃ


নেপোলিয়নকে বিপ্লবের সন্তান বা 'Child of Revolution' বলা হয়। আসুন খুঁজে দেখা যাক এর কারণ। ১৭৮৯ এ বিপ্লবের পর ফ্রান্সে শুরু হয় অস্থিরতা। সে আগেই বলা হয়েছে। রাজতন্ত্রের অবসানের পর জাতীয় কনভেনশনের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্বাচিত ৭৩৫/৭৫০ জনের জাতীয় পরিষদ গঠিত হয়। জাতীয় পরিষদের মধ্যে রয়েছে 165 Feuillants (constitutional monarchists) ডানপন্থী এবং প্রায় 330 Girondists (liberal republicans) and Jacobins (radical revolutionaries) বামপন্থী এবং প্রায় 250 deputies unaffiliated with either faction। বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠী তে বিভক্ত তিনটি গোষ্ঠী ১৭৯১ থেকে ১৭৯৫ পর্যন্ত শাসন কার্যচালায়। এই সময় তিনটি সংবিধান রচিত হয়।
১. ১৭৯১ সালে সংবিধান রচিত হলো গিরন্ডিন (Girondins) দের হাতে।
২. ১৭৯৩ সালে রচিত হয় জেকোবিন (Jacobins) দের হাতে।
৩. শেষে ১৭৯৫ সালে রচিত হয় তেরমিদরিয় (Thermidorian) দের হাতে।

অবশেষে ১৭৯৫ সালের ১০ অক্টোবর ৫ জন ডাইরেক্টরের (Directorate) দ্বারা দেশ শাসনের নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়।

এই সময়ে যাদের হাতেই দেশের শাসন ভার গেছে তারাই নিজেদের একছত্র প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য খড়গহস্ত হয়েছে বিরোধীদের উপর। এর মধ্যে ১৭৯৩-৯৪ পর্যন্ত সময় কে বলা হয় Reign of Terror। ধারণা করা হয় এই সময়ে গিলোটিন (guillotine) অথবা বিপ্লবের পরবর্তী কার্যকরণের প্রতিহিংসার জের ধরে কমপক্ষে ১৬,৫৯৪ জন মারা যায়। প্রায় ৪০,০০০ এর মতো বন্দী বিনা বিচারে দন্ডপ্রাপ্ত হয় অথবা বিচারে মারা যায়। এর মধ্যে মারা যায় নেপোলিয়নের স্ত্রী জেনোফনের স্বামী।

নেপোলিয়ন প্রজাতন্ত্রীদের উপর আস্থাবান ছিলেন। তিনি রাজনৈতিকভাবে নিজেকে জ্যাকবিনপন্থী বলে পরিচয় দেন। জ্যাকবিন নেতা অগাস্টিন রোবস্পিয়ারের (Augustin Bon Joseph de Robespierre) প্রশংসা করতেন। ফলে তার সুনজরে আসেন এবং দ্রুত উঁচু সামরিক পদ পেতে থাকেন।

কিন্তু ধীরে ধীরে রোবসপিয়ার রাজনৈতিক ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্যক্তি স্বাধীনতাকে হরণ করেন। সংঘর্ষ বাঁধে চার্চের সাথেও। কুসংস্কারের হাত থেকে দরিদ্র মানুষকে রক্ষা করার জন্য সাধারণ মানুষের ধর্মবিশ্বাসের উপর আঘাত হানায় যাদের ভালো করার জন্য তিনি জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তারাই তার বিরূদ্ধে চলে গেল। ১৭৯৪ সালে ২৮ শে জুলাই রোবস্পিয়ারের গলায় নেমে আসে গিলোটিনের ব্লেড। এই সময় ক্ষমতা দখল করে তেরমিদরিয়রা। নেপোলিয়ন প্রকাশ্যে রোবস্পিয়রের নিন্দে ও বিরোধীতা করলেও তার বিরোধীরা ঠিকই মনে রেখেছিলো রোবস্পিয়ারের সমর্থনেই নেপোলিয়ন এত দ্রুত সামরিক বিভাগে জেনারেল পদে উন্নীত হয়েছেন। যে কোনো সময় তার গলায় ও নেমে আসতে পারে গিলোটিন। তবে তাকে গ্রেফতার করে রাখা হলো এনটাইবস দুর্গে। ত্যুলঁর যুদ্ধের চারমাসের মধ্যে ক্যাপটেন থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, আবার ছয় মাসের মধ্যে কারাগার। এই মুহূর্তে সম্মানের শীর্ষে আবার পরমুহূর্তে কপর্দকশুন্য অপমানিত সৈনিক। সেই সরকার বেশিদিন টিকেনি। কারাগার থেকে মুক্ত নেপোলিয়ন। কিন্তু তখন তিনি একজন স্বপ্নদর্শী হতাশ সৈনিক। হতাশ কপর্দকশুন্য নেপোলিয়ন এক সময় নদী তীরে গেলেন আত্মহত্যা করতে। তখনই দেখা হয় এক পুরোনো বন্ধু ডিমাসিস এর সাথে। সে সব শুনে ছয় হাজার ডলার স্বর্ণমুদ্রা দিলে, সাথে সাথে পাঠিয়ে দেন মা'র কাছে।

এমন সময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হলেন নতুন একজন। তিনি ইটালির সীমান্তদেশ সম্পর্কে জানে এমন একজনের খোঁজ করলেন। কেউ একজন নেপোলিয়নের নাম বলতেই ডাক পড়ল। নেপোলিয়ন হাজির হলেন যুদ্ধদপ্তরে। জিজ্ঞাস করা হলে, তিনি ইটালির পথ-ঘাট, পাহাড়-পর্বত, সেখানকার মানুষদের স্বভাবচরিত্র, কথাবার্তা, বিভিন্ন স্থানের আবহাওয়া, ফ্রান্সের উত্তরের কোন কোন পথ দিয়ে সেখানে প্রবেশ করলে কী কী সুবিধা, সেখানকার কোন সময়ের কত তাপমাত্রা, সব এক সাথে ঝেড়ে দিলেন। নেপোলিয়ন কে একটা রিপোর্ট লিখতে বলা হলো। নেপোলিয়ন আধা ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট জমা দেন। রিপোর্ট পড়ে নেপোলিয়নকে যুদ্ধ-দপ্তরের সদস্য করে নেয়া হলো।

একটু বলে রাখা ভালো, ডানপন্থী-বামপন্থী সন্ত্রাস, গিলোটিন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জের ধরে তখন ফ্রান্সের অনেক জেনারেল এবং চৌকস সমর নায়ক আর সামরিক প্রধান মারা যান। ফলে সামরিক বাহিনীতে তৈরি হয় এক ধরনের শূন্যতা। তাছাড়া ডাইরেক্টরি প্রশাসনের নীতি ছিল অভিজাতদের বংশগৌরব নয়, প্রকৃত প্রতিভার স্বীকৃতি। ফ্রান্সের এই পরিবর্তিত নীতির ফলেই নেপোলিয়নের উত্থান। তাই নেপোলিয়ন বিপ্লবের সন্তান।

প্যারীর রাস্তায় আবার পুরাতন পন্থী ও প্রজাতন্ত্রীর মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠে। এই সময় প্যারীর সৈন্য শিবিরের কমান্ডার জেনারেল মেনো (Menou) বিদ্রোহী রাজতন্ত্রীদের সমর্থন করেন। এতে সমস্যা দেখা দেয় যে, বিশ হাজার জাতীয় রক্ষীবাহিনী (National Guard fources) যে কোনো সময় বিরোধীদের পক্ষ নিয়ে নিতে পারে। এ সময় মেনোকে পদচ্যূত করা হয়। তার স্থলে অভিসিক্ত করা হয় বারাস (Baras) কে। এই সময় সকলের নজর ছিলো নেপোলিয়নের দিকে। সে কোন পক্ষে যোগ দেন। বারাস খুব দ্রুত নেপোলিয়নের সাথে যোগাযোগ করে প্রশ্ন করেন- 'তুমি তিন মিনিটের মধ্যে গোলন্দাজ বাহিনীর পূর্ণ দায়িত্ব নিতে রাজী আছো?' নেপোলিয়ন সামান্যতম সুযোগকে কখনো হাতছাড়া করেন নি। এটি ছিলো সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ। তিনি সাথে সাথে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নেপোলিয়নকে 'কমিটি অব পাবলিক সেফটি' (Committee of Public safety) এর সদস্য করে নেয়া হয়। নেপোলিয়ন দৃঢ়তার সাথে এই বিদ্রোহ দমন করেন। বারাস তাকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করার প্রস্তাব করেন সরকারের কাছে। এর এক সপ্তাহ পরে বারাস অভ্যন্তরীন সেনাবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চীফ এর পদ থেকে নিজেই সরে দাড়ান। আর সেই পদে নেপোলিয়নকে বসান। তিনি নেপোলিয়ন কে ভালোই চিনেছিলেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেনঃ 'এই লোকটির পদোন্নতির ব্যবস্থা কর, নইলে সে নিজেই নিজের পদোন্নতির ব্যবস্থা করে নিবে।'

হিটলারঃ


হিটলারের উত্থানে তেমন কোনো Ups and Downs নেই। আছে নিরলস পরিশ্রম আর নিজেদের জাতিস্বত্তাকে জাতির সামনে তুলে ধরে নিজের দাবীকে সকলের দাবীতে পরিণত করার এক নিরলস প্রয়াস। ইতিহাসবেত্তারা অবশ্য ভার্সাই চুক্তিকে দায়ী করে থাকেন।


ভার্সাইয়ের সন্ধির শর্তাবলী জার্মান জাতির জন্য শুধু অপমানজনকই নয়, চিরদিনের জন্য অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে পঙ্গু করে রাখার অপচেষ্টা। ইঙ্গো-ফ্রান্স মিলে পরাজিত জার্মান জাতির উপর এমন সব শর্ত জুড়ে দেয় যাতে জার্মান জাতি আর কোনো দিন মাথা তুলে দাড়াতে না পারে। যদিও সেই সময় জার্মানের নতুন সরকার এই সন্ধিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। এ ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিলো না। তবুও এই ভার্সাই চুক্তির বিরূদ্ধে বলার একমাত্র লোক যেন হিটলার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সের সমরিক নায়ক মার্শাল ফস জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে ফ্রান্সকে জয়ের পথে নিয়ে যান। কিন্তু তিনি এই ভার্সাই চুক্তির শর্তাবলী দেখে মন্তব্য করেন, 'This is not peace, it is Armistice for twenty years.'

১ম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৮ সালে, হিটলার মিউনিখে ফিরে এলেন। দেখলেন হাজার হাজার বেকার। অর্থনৈতিক সংকট। তিনি সামরিক বাহিনীর চাকরিতে ইস্তফা দিলেন না। সামরিক বিভাগেই কাজ করতে লাগলেন। সুযোগ হলো অস্ট্রিয়ার সীমান্তে ট্রনস্টেনে যুদ্ধবন্দিদের ক্যাম্পে গার্ডের কাজ করার। এই ক্যাম্প থেকেই রুশ আর ফরাসি সেনাদের এক এক করে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। ১৯১৯ সালের জুলাইতে জার্মানির ইন্টালিজেন্টসি থেকে তাকে নিয়োগ করা হয় সৈনিকদের অনুপ্রানিত করার জন্য আর DAP
(German Socialist Party) নামে একটি রাজনৈতিক দলের উপর নজরদারি করার জন্য। এর কিছুদিন পরই ১৯১৯ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর হিটলার এই অচেনা অজানা নাম সর্বস্ব DAP দলে ৫৫ তম সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। তবে কিছুদিন পরে, ১৯২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মান ওয়াকার্স পার্টি (DAP) এর নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন ন্যাশনাল সোসিয়ালিস্ট জার্মান ওয়াকার্স পার্টি (National Sozialistische Dentsche Arbeiter Partei)। এর সংক্ষিপ্ত নাম হলো Nazi. (Na tional এর Na আর Sozialistische থেকে Zi। বাংলা করলে নাজ্বি একটু আলাদা আলাদা করে দেখালে হবে 'না'-'জ্বী'।

বলে রাখা ভালো সে সময় জার্মানিতে অনেক রাজনৈতিক দল ও মতের জন্ম নেয়। কয়েকজন মিলিত হয়েই একটি দল গঠন করে ফেলে। সেখানে না আছে জনসমর্থন, না আছে নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য। (তবে আমার ধারণা রাজনৈতিক দল থাকলে নিশ্চয়ই কোনো সুবিধা পাওয়া যেত। এই ব্যাপারটি একান্তই আমার মত। বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করি, কেবল যুদ্ধে হারা দেশ গনতান্ত্রিক হওয়ার স্বাদ পেয়েছে। এর আগে জার্মানিতে ছিলো রাজতন্ত্র। বিভিন্ন বাইরের দেশ থেকে সাহায্য পাওয়ার আশায় এই দল গুলোর জন্ম হতে পারে। যেমন, কমিউনিস্টরা সরাসরি রাশিয়া থেকে সাহায্য পেতো। আবার হিটলারের দল একসময় আমেরিকা থেকেও সাহায্য পেয়েছে। এর বিশেষ কারণ ছিলো। যেমনঃ ফোর্ড গাড়ির মালিক হেনরী ফোর্ড হিটলারকে বা তার দলকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন, কেবল মাত্র দুটি বিষয়ে মিলের কারনে। ১. তারা দুজনেই কম্যূনিস্ট বিরোধী। ২. তারা দুজনেই ইহুদী বিরোধী।)

এবার আসুন দেখি জার্মানির অর্থনীতির অবস্থা। ১৯১৯ সালের জানুয়ারী মাসে যেখানে ১ ডলারের বিপরীতে জার্মান মার্ক ছিলো ৮.২০ সেখানে ১৯২০ সালের জানুয়ারীতে এসে দাঁড়ায় ৬৪.৮০। ১৯২২ এর জানুয়ারীতে এসে দাঁড়ায় ১৯১.৮১। ১৯২৩ এর জানুয়ারী মাসে এসে দাঁড়ায় ১৭,৯৭২.০০ যা ডিসেম্বরে এসে হয় ৪,২০০,০০০,০০০,০০০.০০। এই সংখ্যাকে অনেকে অবাস্তব মনে করতেই পারেন। তাদের জন্য এই লিঙ্কটি দেয়া হলো। ১৯২২ সালের শেষের দিকে জার্মানি ফ্রান্সকে পূর্বশর্তানুযায়ী এক লক্ষ টেলিগ্রাফ পোস্ট সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। অমনি ১৯২৩ সালের ১০ জানুয়ারী ফ্রান্স এবং বেলজিয়াম জার্মানির রূঢ় অঞ্চলে ইঞ্জিনিয়ার পাঠিয়ে দিল, ঠিক মতো কয়লা উৎপাদন হচ্ছে কিনা দেখতে। ইঞ্জিনিয়ারদের নিরাপত্তার জন্য হাজার হাজার ফরাসী সৈন্য ঢুকিয়ে দেয়া হল। একদিকে জার্মানি অর্থনৈতিক মন্দায় ধুকছে, হাজার হাজার শ্রমিক বেকার, উৎপাদন বন্ধ, এরমধ্যে আবার জার্মানির খনিপ্রধান রূঢ় অঞ্চল ফ্রান্সের দখলে চলে গেল। রূঢ় অঞ্চল থেকে সমস্ত খনিজ জাহাজ বোঝাই হয়ে, গাড়িতে গাড়িতে ঢুকতে লাগলো ফ্রান্সে। আর একের পর এক কল-কারখানা বন্ধ হতে থাকলো।

ডলারের বিপরীতে মার্কের অবস্থান দেখেই বোঝা যায়, কি পরিমান দুর্ভিক্ষে নিপতিত হয় দেশটি। একটুকরো রুটির দাম, এক টুকরো কয়লার দাম আকাশ ছোঁয়া। কাগুজে নোটে বাজার ছেয়ে গেছে। লোকে বস্তা বস্তা মার্ক নিয়েও নিত্যপ্রয়জনীয় জিনিস কিনতে পারে না। এমন দুরাবস্থা হয়তো জার্মান জাতির এর আগে কখনো আসেনি।

এদিকে জার্মানদের সংখ্যা দিন দিন জার্মানিতে কমে যাচ্ছে। জার্মানদের বাসস্থান অন্যদেশ কেড়ে নিচ্ছে। সেখানে জার্মানদের চরম দুর্দশায় নিজ দেশে পরবাসী হয়ে বাস করতে হচ্ছে।

ঠিক এমনই এক দুঃসময়ে জার্মান চাচ্ছিল একজন পরিত্রান কর্তা। যার মেরুদন্ড আছে, বুকভরা সাহস আছে এবং সে জার্মান জাত্যভিমানকে বিশ্বের সামনে প্রতিষ্ঠিত করে ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং রাশিয়ার অন্যায় আচরনের সঠিক জবাব দিতে পারবে। হিটলার জার্মানির সাধারণ মানুষের কাছে এলেন স্বপ্নপূরণের নেতা হয়ে। হিটলারের মধ্যে তারা তাদের ইচ্ছাপূরণের প্রতিশ্রুতি পেলেন। হিটলার বললেন, -'ছিড়ে ফেল ভার্সাই এর সন্ধি, জার্মানদের মাথা থেকে ঋণের বোঝা নামাও।' তার বক্তব্য- ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী দের মধ্যে কোনো সামাজিক চেতনা নেই। আর সমাজতান্ত্রীক বামপন্থীদের কোনো জাতীয় চেতনা নেই। সত্যিকারে বিপ্লবী দল হলো তার জাতীয়তাবাদী সমাজতান্ত্রীক দল- Nazi- যারা এক সাথে জাতীয়তাবাদী আর সমাজতন্ত্রীদের বিরুদ্ধে লড়বে।

একটু বলে রাখা ভালো, ফ্রান্স রূঢ় অঞ্চল দখল করে নেয়ায় জার্মান জাতির উপর যে খড়গ নেমে এলো এতে জার্মানের বিভিন্ন প্রদেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী লিটভিনভ এর নির্দেশে জার্মানিতে শ্রমিকদের সহায়তায় সশস্ত্র বিপ্লবের পরিস্থিতি গড়ে তোলার নির্দেশ দেয়া হয়।

হিটলারের বক্তব্য মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতাই প্রথম এবং প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হিটলার বলেন, জার্মানি জার্মানদের অথচ এ দেশের সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে সুদখোর ইহুদিরা। আজ জার্মান নাগরিকদের মাথায় অসম্ভব ঋণ আর সুদের বোঝা। সুদ নিয়ে সরকারকে ঋণ যোগায় ইহুদিগুলো। সুদের অর্থে ইহুদিগুলো সুখেই আছে, নিষ্পেষিত হচ্ছে জার্মানিরা। ইহুদিগুলো চায় জার্মানিদের এই দুরবস্থা চলুক, যাতে তারা তাদের গলায় আরো কষে সুদের ফাঁস লাগাতে পারে।

ন্যাশনাল সোসালিস্ট পার্টির পক্ষে হিটলার যে কর্মসূচির কথা ঘোষণা করলেন তা যে কোনো সাধারণ জার্মান সেই দুর্দিনে আনন্দের সাথে সমর্থন করবেন। মুনাফাখোর, সমাজবিরোধী কালোবাজারি মজুতদারদের মৃত্যূদন্ড দেয়া হবে। ভার্সাই এর সন্ধি বাতিল হবে। ভূমি সংস্কারের মধ্য দিয়ে জমি নিয়ে ফটকাবাজি বন্ধ হবে। দরিদ্র শিশুদের শিক্ষার দায়িত্ব নেবে সরকার। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হবে। মায়েরা, শিশুরা, বালকেরা পাবে স্বাস্থ্য সেবা। বেতন ভুক্ত সৈনিক নয়, গড়ে তোলা হবে গণফৌজ।

আজ এই পর্যন্তই। একটা কথা বলে রাখি এই ফাঁকে। জার্মানিতে যে শ্রমিক দল ছিলো তারা কিন্তু ডানপন্থী আর বামপন্থীতে বিভক্ত হয়েছে। Nazi পার্টিতে যোগদিয়েছে সেই দেশের মধ্যবিত্ত। মনে রাখতে হবে একটি দেশের মধ্যবিত্ত যে সিদ্ধান্ত নেয়, ভালো হোক আর মন্দ হোক পুরো জাতিকে তার ফল ভোগ করতে হয়।

মিল-অমিল নেপোলিয়ন-হিটলার (প্রথম পর্ব)
মিল-অমিল নেপোলিয়ন-হিটলার (দ্বিতীয় পর্ব)
মিল-অমিল নেপোলিয়ন-হিটলার (তৃত্বীয় পর্ব)
মিল-অমিল নেপোলিয়ন-হিটলার (চতুর্থ পর্ব বা প্রেম পর্ব)
মিল-অমিল নেপোলিয়ন-হিটলার (পঞ্চম পর্ব- প্রথম যুদ্ধ)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:১৪
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×