মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র থেকে বের হয়ে ছুটলাম স্বর্ণমন্দির দেখতে। স্বর্ণমন্দির বান্দরবন থেকে প্রায় ৩ কিঃ মিঃ পশ্চিমে। বালাঘাটা এলাকার একটা পাহাড়ের উপর মন্দিরটি অবস্থিত। এর নাম মহাসুখ মন্দির। মন্দিরের স্তম্ভ থেকে অন্যান্য সব কিছুই স্বর্ণালী রঙে মোড়ানো। তাই এর নাম স্বর্ণমন্দির নামেই পরিচিতি পেয়েছে। এটির কাজ শেষ হয় ২০০৪ সালে। এটি সকাল ৮.৩০ থেকে ১১.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। আবার খুলে দেয়া হয় ১২.৪৫ থেকে। ৬.০০ পর্যন্ত ভেতরে ঢোকা যায়। এখানেও টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। সম্ভবতঃ টিকিটের দাম ২০ টাকা করে।
আসুন কিছু ছবি দেখে নিই।
বেশ অনেকগুলো সিড়ি দিয়ে উঠতে হয় স্বর্ণমন্দিরে। এখানে মোট ১৭০ টির মতো সিড়ি বা ধাপ আছে।
টিকিট কেটে ঢুকে হাতে ডানে একটা সরু গলির মতো। এখানেই কাচের ভেতর এই মূর্তিগুলো সাজানো রয়েছে।
ডানে রয়েছে খোলা জায়গা। এক সাথে বসে ধ্যান বা প্রার্থনা করার স্থান।
এরপর আবার সিড়ি বেয়ে উঠতে হবে স্বর্ণমন্দিরের বেদীতে পৌছানোর জন্য। আসুন কিছু ছবি দেখে নিই।
ছবিতে আমার বন্ধু সজল দাঁড়িয়ে আছে।
স্বর্ণমন্দিরের সৌন্দর্য নিয়ে নেমে এলাম। সি, এন, জি চালককে খুঁজে পাই না। পড়ে বুঝতে পারলাম খেতে গেছে। এখন প্রায় ২.৩০ এর বাজে। মন্দিরের আগে বেশ কয়েকটা দোকান সাজিয়ে বসে আছে জাম্বুরা, পেপে, কলা, ডাব, মধু, আরো কত কিছু। এখান থেকেও পেপে খেলাম। কিন্তু তত মজা পেলাম না। মিষ্টি কম। ভাগ্য খারাপ। জাম্বুরা কেনা হল। কথা হলো, লবন দিয়ে মাখিয়ে দিবে। জাম্বুরাগুলো দেখতে তেমন সুন্দর না। তবে কাটার পর দেখা গেল, কি সুন্দর লাল! আর খেতেও মিষ্টি! বানানোর সময় না দিয়ে আমরা জাম্বরার গায়ে লবন মাখিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। শেষ হতে সময় লাগলো না।
এর পর চললাম, রামজাদী মন্দিরের দিকে। এখান থেকে মাত্র ১ কিঃ মিঃ দূরে। রামজাদী মন্দিরে সেদিন সকাল থেকে পূজা-প্রার্থনার কাজ চলছিলো। এখানে চিবর দান অনুষ্ঠান হয়েছে গতকাল। অর্থাৎ ২২ তারিখে। আর একটা দিন আগে এলেই দেখতে পেতাম। এখানকার ছবি দেখুন।
-এটি একটা অদ্ভুদ প্রানীর ভাস্কর্য।
ভেতরে ঢুকেই বান্দরের খাচা চোখে পড়ল। তারপর সিড়ি বেয়ে উঠতে হলো বেশ অনেক খানি। এখনো মূল মন্দির এবং এর স্থাপনাগুলোর নির্মান কাজ শেষ হয়নি। আরো অনেক কাজ বাকী। তবে এই মন্দিরটাও খুব সুন্দর। আর বেশ বড়। ক্যামেরার ব্যাটারি লো দেখাচ্ছে। তাই বেশি ছবি তুলতে পারলাম না। দেখুন কয়েকটি।
এই যে পতাকাটা দেখা যাচ্ছে, এর বিশেষ কিছু মানে আছে। এই দিন, এই পতাকা দিয়ে ছেয়ে রাখা হয়েছে বৌদ্ধবিহারটি।
এরপর ফেরার পালা। ফিরে এসে খেতে বসলাম তাজিংডং নামে হোটেলে। বান্দরবনে যে কটি হোটেল ভালো তার মধ্যে এটি একটি। আর যে হোটেল গুলো আছে তার মধ্যে 'ফিস্ট রেস্টুরেন্ট' অন্যতম। ফিস্ট রেস্টুরেন্ট এর বিজ্ঞাপনের একটা ছবি দিয়ে দিলাম। এতে মোবাইল আর টেলিফোন নম্বর আছে। কাজে লাগবে নিশ্চয়ই। এটা একটু দূরে। রিক্সা নিয়ে ১৫ টাকা লাগবে। এরা অর্ডার দেয়ার পর রান্না শুরু করে। তাই, খুব বেশি ক্ষিধা পাওয়ার আগেই চলে যান। কম করে ৩০ মিনিট বসিয়ে রাখবে। তবে খেয়ে শান্তি পাবেন। গ্যারান্টি।
খাওয়া নিয়ে যখন কথা শুরু হয়েছে, খাওয়া দাওয়া পর্ব এখানেই শেষ করি। এখানে আরো একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে, এর নাম রি সাং সাং। যে কোনো রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞাস করলে বলে দিবে। এটা নীলগিরি যাওয়ার পথে পরে। ভাড়া ১৫/ ২০ টাকা নিবে।
চৌধুরী মার্কেট বা প্লাজার সামনে 'মাইমা' নামে একটা রেস্টুরেন্ট আছে। এটা বান্দরবনের ঐতিহ্য ধারণ করে এমন একটি রেস্টুরেন্ট। এখানে 'সিদ্ধ' নামে একটা খাবার দেয়। দাম বিশ টাকা। তেমন কিছুনা, কিছু বরবটি সিদ্ধ, আর মূলা সিদ্ধ দুই টুকরা। খেতে হয় মরিচের ভর্তার সাথে ভাতের সাথে মিশিয়ে। ঝাল খাওয়ার চর্চা না থাকলে না খাওয়াই ভালো। এর একটা ছবি দিয়েই দিই।
-মাইমা রেস্টুরেন্ট এর সিড়ির দেয়ালে লাগানো।
-এই হলো সিদ্ধ
সন্ধ্যা বের হলাম কেনা-কাটায়। তার আগে এখানকার স্থানীয় খাবার লাসসো খাওয়াতে চাইলেন তানভীর ভাই। খুজতে খুজতে পেয়ে গেলাম একটা দোকান। দোকানটা স্থানীয় মহিলারা চালাচ্ছেন। আমরা যে দোকানে ঢুকলাম, বসার জায়গা নেই। কি করি। একটু দাঁড়িয়ে থাকতেই কয়েকজন উঠে গেলে সেই জায়গা দখল নিলাম। এরপর এলো সেই বিখ্যাত 'লাসসো'। তার আগে কাবাব এর অর্ডার দিলাম। এইটা একটা ভালো কাজ করেছিলাম। নয়তো আফসোসই থাকতো। কারনটা একটু পরে বলছি ছবি দেখুন আগে।
- লাসসো
দেখেছেন শুকনা মরিচের গুড়া কেমন ভেসে ভেসে আছে। এটা খেতে হলে আগেই ক্যান্ডি বা লজেন্স জাতিয় কিছু সাথে রাখুন। আপনার ব্রহ্মতালু জ্বালিয়ে দিবে। এটা এক ধরনের স্যূপ। মুরগীর মাংস জ্বাল দিয়ে সেই পানি দিয়ে তৈরি করে। সাদা সাদা নুডুলসের মতো গুলো চামচ দিয়ে উঠানো যায় না সহজে। এর সাথে কিন্তু সালাদ ও আছে। সালাদের ছবি আগে দেখুন, তারপর সালাদের সম্পর্কে বলছি।
- সালাদ
এই সালাদ বানানো হয়েছে কয়েকটা মুরগীর সিদ্ধ মাংসকে মরিচ আর পিয়াজ দিয়ে মাখিয়ে। উফ কি যে ঝাল! তবুও আমি মাংসগুলো শেষ করি। কিন্তু স্যূপ শেষ করতে পারি নাই।
ব্লগিয় ভাই-বোনেরা আজ, এই পর্যন্তই। কাল যাবো নীলগিরি।
বাংলাদেশের দার্জিলিং- বান্দরবন (পর্ব-১)
বাংলাদেশের দার্জিলিং- বান্দরবন (পর্ব-২)
বাংলাদেশের দার্জিলিং- বান্দরবন (পর্ব-৪)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৪৪