কৈশোরে মা আমাকে নিয়ে একবার নিউ মার্কেটে গিয়েছিলো...
তখনকার দিনে ফুটপাতে বিভিন্ন গল্পের বই, চাচা চৌধুরীর কমিক বই, কার্টুনের সিরিজ টাইপ গল্পের কমিক বই বিক্রি করতো...
যদিও এখন তেমন দেখা যায় না তখনকার দিনের মত...
তো মায়ের কাছে বায়না ধরে বললাম, মা আমাকে 'ময়ূরাক্ষী' নামে ওই বইটা কিনে দেন, আমি ওই বইটা পড়বো...
কী বুঝে নিতে চাইলাম জানি না!
তখন হুমায়ূন স্যারকেও তেমন চিনতাম না...
উপন্যাস কী জিনিস তাও জানতাম না!
কমিক বই আর তিন গোয়েন্দা সিরিজ পড়তাম বেশি তখন...
মিনা-রাজুর কার্টুন বিটিভিতে দেখালেও, কমিক আকারে যতগুলো বের হয়েছিলো, সেগুলো সবই পড়া হয়েছিলো তখনকার দিনে...
তখনকার দিনে নাটক-সিনেমায় দেখতাম, প্রায় নায়িকা (হলুদ কভার মোড়ানো) উপন্যাস হাতে দোলনায় চড়ে চড়ে বইয়ের পাতা উল্টানোর মূহুর্তে প্রিয় মানুষকে কল্পনা করতো আর তাকে ভেবে দুইজনে ৩-৫ মিনিটের মত নাচ-গান করতো...
দেখতে ভালোই লাগতো। জীবনে একটা প্রেম করা খারাপ না। একটা প্রেম করা দরকার জীবনে...
ভাবতাম, এরকম 'হলুদ কভার মোড়ানো বই' পড়লেই বুঝি সহজেই প্রেমে পড়ে মেয়েরা!
মূলত একটা প্রেম করার কারণে এই বই কেনার বায়না ধরা...
মাকে তো আর সরাসরি বলা যায় না, প্রেম করার জন্য এমন একটা বই দরকার!
তো মাকে ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝালাম বইটা পরীক্ষার জন্য কতটা জরুরী!
মায়েরা সন্তানদের আবদারের কাছে বোকা হয়ে যায়...
বুঝে সন্তানরা মিথ্যা বলছে, তবুও বোকা হয়ে থাকতে চাই মায়ের জাতিরা...
উনারা সন্তানদের কাছে বোকা হতে ভালোভাসেন...
আমিও মাকে বোকা বানাতে পারার আনন্দে আত্মহারা...
অন্যদিকে তখনকার দিনে, একটা প্রথা চালু ছিলো, কাউকে এই টাইপ বই পড়তে দেখলেই প্রতিবেশীরা ভাবতো, ছেলেটা তো অনেক বড় হয়ে গেছে, নাটক সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের মত প্রেমের বই পড়ে!
আমাকেও ব্যতিক্রম ভাবেনি!
বেশ কয়েকমাস পর মায়ের কাছে কমপ্লেইন গেলো। তোর ছেলে তো বড় হয়ে গেছে। সারাক্ষণ বড়দের বই পড়ে!
মা অনেকদিন সহ্য করলেও, একদিন মুখ ফুটে বলেই ফেললেন, তুই নাকি কী সব বড়দের বই পড়িস! পান্না নাকি তোর কাছ থেকে বই নিয়ে যায় পড়ার জন্য? সে পড়ে ক্লাস টেনে আর তুই পড়স সেভেনে। সে তোর বই নিয়ে কী করবে? পান্নাকে তো টিউশনিতেও যেতে দেখি না! তাহলে সে তোর কাছ থেকে বই নিয়ে যায় কেন?
আমি চুপ হয়ে থাকি। কিছু বলি না। কারণ তখন আমার মাঝে হিমু বসবাস করছিলো। হিমুরা কিছু বলে না। চুপ হয়ে থাকে। হিমুরা সকল পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক থাকে, তাই আমিও স্বাভাবিক ছিলাম। কারণ আমি সেদিন শিক্ষানবিশ হিমু হয়ে ছিলাম...
আমাকে আরও বেশ কিছু হিমু পড়তে হবে...
তাই টাকা পেলেই, আমি আর পান্না দিদি দুইজনই মিলে-মিশে হিমু সিরিজের একটা একটা বই কিনতাম আর পড়তাম...
এর কয়েকমাস পর একদিন মা বললেন, প্রতিমাসেই একটা ব্যাণ্ডের গানের ক্যাসেট আর একটা বই কিনস। গান শুনতে দেখি। কিন্তু বইটা একদিন পড়ে আর হাতেও তো নিতে দেখি না! পরীক্ষায় যদি ফেল করস, তোর আর রক্ষে নেই, মনে রাখিস...
নেক্সট টাইম তোকে আর কোন বই কিনে দেয়া হবে না। যতগুলো বই কিনসস সেগুলো আগে নিয়মিত পড়বি, তারপর নতুন বই ভেবে দেখবো...
ততদিনে আমার নতুন উপন্যাস পড়ার প্রন্থা পেয়ে গেছি, নেলী পিসির মাধ্যমে...
তাদের প্রেমের বিয়ে। রঞ্জিত মামা প্রতি সপ্তাহেই হুমায়ূন স্যারের বই কিনতেন। তবে হিমু সিরিজের না। অন্য গল্পের। অন্য চরিত্রের। সেখানে থাকে তিথি, শুভ্র, হাসান, মিসির আলী...
সেই গল্প বলতে গেলে লেখা আরও অনেক লম্বা হয়ে যাবে। তাই লেখা দীর্ঘায়িত করতে চাই না...
সেই গল্প অন্য আরেকদিন...
আমার জীবনে উপন্যাস পড়ার মূল কারণ ছিলো, একটা প্রেম করার! প্রেম করলে মানুষ নাচে, গায়...
বাস্তবে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম...
পরীক্ষা শেষে বুঝলাম, শুধু নাচে গায় না, বানরের মত লাফাইও, গণ্ডারের চামড়ার মত সবকিছু সহ্য করেও...
বিঃদ্রঃ মিহির ছাড়া জীবনে আর কোন প্রেম আসেনি...
কীভাবে যে এতবছর এখনও একসাথে আছি, কী জানি!
মায়া বড়ই খারাপ জিনিস। একবার মায়ায় পড়ে গেলে, এই মায়া থেকে বের হওয়া সম্ভব না...
#ভালো_থাকুক_তারা_ভালোবাসে_যারা
নয়ন বড়ুয়া
জানুয়ারি, ২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




