somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের গল্পঃ আমরা আমরা'ই তো...

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ শুক্রবার। রাস্তায় টং দোকানে চা খাচ্ছিলাম। অফিস থেকে নির্বাচন উপলক্ষে ৩ দিনের বন্ধ পেয়েছি। প্রতিদিন বাসার চায়ে বিরক্ত হওয়ার কারণে, চায়ের স্বাদের নতুনত্ব আনার জন্যই এই টং দোকানে গিয়ে চা পান করা...
মূলত এইটাই উদ্দেশ্য...
রাস্তার আশে-পাশে বিভিন্ন প্রার্থীর পোষ্টার। তবে সবচেয়ে বেশি পোষ্টার কেটলী প্রতীকের...
আমাদের আসন থেকে নৌকার কোন প্রার্থীকে নমিনেশন দেয়নি...
তবে সবাই ছদ্মবেশী নৌকার প্রার্থী...
মানে, লাঙ্গল, ফুলকপি, কেটলীর প্রার্থীরা সব ছদ্মবেশী আওয়ামীলীগ...
চায়ে চুমুক দিতে দিতে এগুলোই ভাবছিলাম...


হঠাৎ দূর থেকে কেটলী মার্কার বিশাল মিছিলের স্লোগানে গর্জিত একটা দল নির্বাচনী প্রচারণা করতে করতে আমার সামনে আস্তে আস্তে অগ্রসর হচ্ছে...
বুঝতে বাকি রইলো না, এইটা বন্ধু অলির নেতৃত্ব দেওয়া দল...
কেননা সামনে অলিকেই স্লোগানে দিতে দেখা যাচ্ছে...
"কেটলী মার্কার সালাম নিন, ৭ তারিখ ভোট দিন" এই স্লোগানেই দলটা আস্তে আস্তে ছুটে আসছে এইদিকেই...
সাথে কয়েকজন ছেলেপুলে রিফলেট বিলি করছে সাধারণ জনগণদের...
অলির হাতে মাইক, মাঝে রিক্সা।
৪০/৫০ জনের একটা দল অলির বলা শেষে, সেটা সুর মিলিয়ে অন্য আরেকটা লাইন বলছে...
অমুক আসনের উন্নয়ন, কেটলী মার্কার দুই নয়ন...
অমুক মার্কায় দিলে ভোট, শান্তি পাবে দেশের লোক...



রিপন অলির চাইতেও অনেক উপরের নেতা। রিপন আর আমি ভাইয়ের মত চলাফেরা করি। আমাদের প্রতিদিন আড্ডা হয়...
তো সেও প্রচারণায় নেমেছে। তবে যেহেতু নৌকার প্রার্থী নাই, সেহেতু সে ফুলকপি প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করছে। তাকে নাকি উপর থেকে নির্দেশ দিয়েছে এই প্রতীকেই বেশি সময় দিতে...
এই প্রতীক নিয়েই জনগণদের বুঝাতে...
তাই সেও এই প্রতীক নিয়ে বেশি বেশি প্রচারণা চালাচ্ছে...
আমাদের এলাকায় আর্মি টহল দিলেও কাজ হচ্ছে না। যে যার মত করে, মনের খায়েশ মিটিয়ে প্রচারণায় নেমেছে...
রিপনেরও একটি দল অন্য প্রান্ত থেকে বিশাল দলবল নিয়ে ফুলকপি, ফুলকপি মার্কা বলে চিৎকার করে আমাদের দিকে আস্তে আস্তে অগ্রসর হচ্ছে...

আমরা হলাম আমজনতা। স্বাভাবিকভাবে ভয় তো কিছুটা থাকবেই। আমার সাথে যারা যারা চা খাচ্ছেন, তারাও ভয় পাচ্ছেন...
দুই দিকের দুই প্রান্ত থেকে দুইটা ভিন্ন দল, ভিন্ন স্লোগানে তাদের দলবল নিয়ে আসছে, না জানি মুখোমুখি হলে কোন ক্যাচাল হয় কী না!
না জানি কোন লাঠিসুঠা নিয়ে আসছে কী না!
এই ভয়ে ভয়ে আমরা টং দোকানে চা পান করছি। আর অপেক্ষা করছি একটা গ্যাঞ্জাম দেখার...
মানুষ ভালোবাসার চাইতে, রাস্তায় গ্যাঞ্জাম দেখতে বেশি পছন্দ করে। তার উপর আজ ছুটির দিন। চাকরিতে জীবন অতিষ্ট। স্বাভাবিক ভাবে সবাই এমন দিনে এই বিনোদন কে বা মিস করতে চাইবে!
এখানেও সেম। কেউই সরছে না। সবাই সবার নিরাপদ জায়গায় গিয়ে কী ঘটতে যাচ্ছে তা দেখার অপেক্ষা করছে...
সবাই গল্প পছন্দ করে। এইটাও আমজনতার কাছে একটা গল্প।
বাসাতে, চাকরিতে, অফিসে এই গল্পকে সুন্দর ভাবে সত্য মিথ্যা দিয়ে সাজিয়ে বর্ণনা করে, বেশ জমিয়ে আড্ডা দেয়া যাবে, এইটা ভেবেই হয়তো সবাই এই ঘটনার সাক্ষী হতে চাচ্ছে...


নাহ। কোন ক্যাচাল হয়নি। কোন গ্যাঞ্জাম হয়নি। উল্টো তাদের ভাব বিনিময় দেখে অবাক। যদিও আমি অবাক না। কারণ দুইজনকেই তো ব্যক্তিগতভাবে চিনি। দুইজনই তো আমাদের প্রতিদিনকার আড্ডার সঙ্গী। কিন্তু যারা জানেন না, তাদের জন্য কিঞ্চিত হলেও ভয়ের কারণ ছিলো এই ঘটনা...
হয়তো এইটাকেও অনেকেই সুন্দরভাবে গুছিয়ে, বেশ জমিয়ে আড্ডা দেবে...
হয়তো বলবে, "আরেকটু হলেই তো রক্তারক্তি হতো। সবাই লাঠিসুঠা নিয়ে যেভাবে একদল, আরেকদলের উপর ঝাপিয়ে পড়লো! ভাগ্যিস আর্মির গাড়ি আসছিলো, নাহলে তো আজ লাশের বন্যা পড়তো"...

তো দুইদলের দুই নেতা আমাদের সামনে হাজির। কোন তর্ক-বিতর্ক না, কোন বেদ বাক্য না, দুইজনই সুন্দর করে কুশল বিনিময় করে, কোলাকুলি করে, যে যার মত নির্বাচনী প্রচারণার রিফলেট দিয়ে আমাদের সামনে থেকে বিদায় নিলো...
দুইজনই আমাকে বললো, রাতে বের হয়ো, কথা আছে। চাকমার দোকানের পেছনে আজ জমিয়ে আড্ডা দেবো...
আমি বললাম, তোমাদের দুই প্রান্ত থেকে ভিন্ন ভিন্ন দুই দলের স্লোগানে তো সাধারণ জনগণরা ভয়ে অস্থির!
দুইজনই বলে, আরেহ ভয়ের কী আছে! এখানে আমরা আমরা'ই তো...

নয়ন বড়ুয়া
জানুয়ারি, ২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:১৩
২২টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতার আসনে বেশী দিন থাকা শাসকদের মাঝে খালেদা জিয়া সর্বসেরা

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০৩



আমার এক ছাত্র চাকুরীর পরীক্ষায় ৫২ নম্বর পেয়ে ৩ জনের মধ্যে প্রথম হয়েছিল। দ্বিতীয় জন পেয়েছিল ৪৯ নম্বর এবং তৃতীয় জন পেয়েছিল ৪৭ নম্বর। সে হিসাবে খালেদা জিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপসহীনতার নাম খালেদা জিয়া: যন্ত্রণার বিনিময়ে গণতন্ত্রের প্রাচীর

লিখেছেন জুয়েল তাজিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৭



ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে একাত্তরের বিভীষিকায় বন্দিত্ব, অল্প বয়সেই বিধবা হওয়া—বেগম খালেদা জিয়ার জীবনের শুরুটাই ছিল যন্ত্রণার অধ্যায়। এরপর ইতিহাস যেন তাঁকে একের পর এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু রাজনীতির মাঠে বিরাট শূন্যতা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৯

 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি দলটির হাল ধরেন। সেনানিবাসে গড়ে উঠা দলটাকে রাজপথে বেড়ে উঠতে গৃহবধূ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খালেদা জিয়া মরিয়া প্রমাণ করিলেন , তিনি মরেন নাই ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮


বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন। এই খবরে জাতি শোকাহত। কিন্তু একদল মানুষ আছে যারা উনার মৃত্যুর পরেও নিজেদের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থে তার মৃত্যু নিয়ে ঘৃণ্য মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×