আমাদের শৈশব আর কৈশরে বিনোদন মানে ছিল মাঠে খেলতে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে মাঠে বসে আড্ডা দেয়া, সন্ধায় বাড়ি ফিরে পড়া শেষ করে বিটিভি খুলে বসা। সে সময়ে আমরা বিটিভির প্রায় সব কিছুই গোগ্রাসে গিলতাম , এমনকি একঘেয়ে খবর পর্যন্ত । বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে বেড়ানো বলতে আত্মীয় স্বজনদের বাড়ী বেড়াতে যাওয়া , সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যাওয়া , পিকনিক করা ইত্যাদি। তবে ছোট ছোট এই আয়োজনের মাঝেই তখন খুজে পেতাম নির্মল আনন্দ।
এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা হয়ত শুনলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাবে যে, আমার জীবনে আমি প্রথম সমুদ্র ও পাহাড় দেখেছি ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়। কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে একটি স্টাডি ট্যূরের আয়োজন করা হয়েছিল । শুধু আমি একাই নই , আমার ব্যাচের সহপাঠীদেরো আমার মতই একই অবস্থা। কেউই আগে সমুদ্র বা সুইচ্চ পাহাড় দেখেনি। জীবনে সেই প্রথম কক্সবাজারে সমুদ্র দর্শন আর রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের পাহাড় আমাকে যতটা মুগ্ধ করেছিল পরবর্তীতে তার তিলমাত্র মুগ্ধ করতে পারেনি বিভিন্ন দেশের অপরুপ দৃষ্যাবলী।
জীবনে প্রথম উড়োজাহাজে চড়ি ভার্সিটির পড়া শেষ করে অন্য দেশে উচ্চশিক্ষাার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার সময়। এই যুগের বাচ্চারা এই সব কথা শুনলে অবাক হয়ে তাকায় আমাদের দিকে। গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে বাজেট এয়ারলাইন, সস্তায় হোটেল ও এয়ারলাইনের প্যকেেজ , ঘরে বসেই এক্সপিডিয়া, আগোডায় কনফার্ম বুকিং এক কথায় হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে পুরো বিশ্বটাকে। একটু ছুটি পেলেই মানুষ এখন পরিবার নিয়ে চলে যায় বিদেশ ভ্রমনে। ফেসবুক এসে মানুষকে আরো উসকে দিয়েছে ভ্রমনে। শো অফের এই যুগে সবাই শুধু অন্যকে দেখাতে চায় কে কত নিত্য নতুন দেশ ঘুরেছে।ব্যবসা বানিজ্যও এখন আর নিজ দেশের গন্ডীতে সীমাবদ্ধ নয়। সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক এখন আন্তর্জাতিক। ব্যবসা ও অফিসের কাজে এখন মানুষ সকাল বিকাল এক দেশ ত্থেকে আরেক দেশে যায়।
এই গ্লোবালাইজেশনের অভিশাপ হচ্ছে আজকের করোনা পরিস্থিতি। চায়নার উহানে যখন এই ভাইরাসের সং্ক্রমন ঘটেছিল , সেটা হয়ত এই উহানেই সীমাবদ্ধ থাকতো যদি সময়টা ২০০০ শতক না হয়ে ১৯০০ শতকে হত। করোনা ভাইরাস সং্ক্রমনের পর পরই উহান থেকে তীরবেগে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বব্যপী। সম্ভবত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধলেও এর তীব্রতা বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আজকের মত এতটা মারাত্মক হত না। করোনার এই অয়ার্ল্ড ট্যূরের ভয়াবহতা আর কতদিন জারী থাকবে কেউ জানে না। কবে আবার পৃথীবি ফিরে যাবে সেই আগের রুপে তার উত্তরও জানা নেই কারো। হাজারটা কন্সপিরেসি থিউরি এখন চালু সর্বত্র। অনেকেই বলছে যে গ্লোবালাইজেশনের সুযোগটা কাজে লাগিয়ে চায়না বিশ্বব্যপী ছড়িয়ে দিয়েছে করোনা নামের জীবানু বোমা। অনেকেই ধারনা করছে যে চায়নার হাতে করোনার ভ্যকসিন আছে। তানাহলে সারা বিশ্বে যেখানে কীট পতঙ্গের মত মানুষ মরছে, সেখানে চায়নায় এখন করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি কন্ট্রোলে ! লকডাউন উঠিয়ে দিয়ে চায়নায় এখন বিরাজ করছে পুরোপুরি স্বাভাবিক পরিবেশ!
কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা জানা নেই কারো। তবে জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে এই বিশ্বের সকল মানুষের এখন একটাই কামনা যে দ্রুত ভ্যক্সিন আবিস্কার হোক এবং ভ্যকসিনের কাছে পরাজয় ঘটুক এই ঘাতক ভাইরাসের।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:০৫