ব্লগে রেজিস্ট্রেশন করার সময় যখন নিকনেম কি নেব বলে ভাবছিলাম তখন কেন যেন সবচেয়ে প্রথমেই ফেলে আসা প্রানপ্রিয় ক্যম্পাসের কথাই মনে এসেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারাই পড়াশোনা করেছে, তারা সবাই জানে যে কি অসম্ভব এক আকর্ষন এই ক্যম্পাসের যা বৃদ্ধ বয়সেও মানুষকে নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত করে সবসময়। জীবনের স্বার্নালী এক অধ্যায় সময়টা। ক্যম্পাসে কাটানো প্রতিটি দিন একেকটি রঙ্গীন স্মৃতি এখন।
স্মতিময় কার্জন হল। ক্লাসের ফাকে ফাকে কত যে আড্ডা দিয়েছি এই সবুজ মাঠে । পকেটে তখন খুব বেশি টাকা থাকতো না। ঝালমুড়ি, চপ সিঙ্গারাও তখন অনেকে মিলে ভাগাভাগি করে কিনে মাঠে বসে খেতে খেতে চায়ের কাপে ঝড় তুলতাম। পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া স্যারেরা দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতেন। কে জানে হয়ত তারাও তখন নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হতেন!
কলাভবনের এই অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যের পাশে যতবারই দাড়িয়েছি, ততবারই শিহড়িত হয়েছি , আবেগতাড়িত হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক আবেদন ফুটে উঠেছে এই স্থাপত্যশৈলীতে। সেই আমলে মোবাইল ছিল না। বন্ধুদের মাঝে যাদের ক্যামেরা ছিল তাদের বন্ধুদের মাঝে ছিল দারুন কদর। প্রচন্ড বিরক্তি ও দেমাগ দেখিয়ে সেই ক্যামেরাম্যান বন্ধু আমাদের আবদার মিটিয়ে এই সব অসাধারন জায়গাগুলোয় ছবি তুলে দিত।
উপড়ের ছবিটি সাইন্স এনেক্স ভবনের। ভুগোল ও ম্যাথ ডিপার্টমেন্টে কিছু বন্ধু ছিল। তাদের সাথে আড্ডা দিতে যাওয়া হত সেখানে। এছাড়াও শহীদ মিনারের সামনে অবস্থিত এই ক্যম্পাসে যাওয়া হত শহীদমিনারে কোন অনুষ্ঠানে যোগদান করতে গেলে। অনেক সময়ই পথ নাটক, গান, আবৃত্তির আয়োজন করত উদিচির ছাত্রছাত্রীরা।
টিএসসির এই চত্বরে বসে বিখ্যাত কলিজার সিঙ্গারা খেতে খেতে আড্ডা দেয় নাই এমন ঢাবি স্টুডেন্ট মনে হয় খুজে পাওয়া যাবে না। টিএসসি মিলনায়তনে মাঝে মাঝে বিভিন্ন ব্যান্ডের কনসার্ট হত। টিকিটবীহিন সেই সব কনসার্টে চেয়ারে বসে গান শোনার জন্য অনেকে অনেক আগে গিয়েই জায়গা দখল নিত। অনেক সময় ভেতরে জায়গা না পেলে বাইরে মাঠে বসে শুনতাম ফিডব্যাক, মাইলস, এলারবি ইত্যাদি ব্যন্ডের গান। মৌসুমি কারে ভালবাস তুমি , রুপালি গিটার ইত্যাদি গানগুলোর সাথে আমারাও গলা মেলাতাম।
চারুকলায় যাওয়া হত মুলত পহেলা বৈশাখে। আমাদের সময়ের চারুকলার শোভাযাত্রায় এত হাবিজাবি মুখোশের প্রচলন ছিল না। তবে চারুকলায় যারা পড়ত , তারা ছিল বিড়াট আতেল। সবসময় একটা বাড়তি গাম্ভীর্য নিয়ে তারা চলাফেরা করত। বিপাশা হায়াত তখন চারুকলায় পড়ত। তাকে দেখতেও মাঝে মাঝে যাওয়া হত।
বৈশাখি, চৈতালি, ক্ষনিকা, তরঙ্গ, শ্রাবন ইত্যাদি নামে বিভিন্ন রুটে চলাচল করা এই বাসগুলো ছিল আড্ডা, ঝগড়ার প্রানকেন্দ্র। সে সময় এই বাসে ঝুলে ঝুলে ভার্সিটিতে যাওয়ার আনন্দই ছিল অন্যরকম।
লকডাউনে বসে বসে ঘুরেফিরে ক্যম্পাস লাইফের বিভিন্ন ছবি দেখতে দেখতে মনে হল, ব্লগেও একটি পোস্ট দিয়ে জানতে চেষ্টা করি বর্তমান ঢাবিয়ান ও এক্স ঢাবিয়ান কে কে আছেন এই ব্লগে। আমি সাইন্স ফ্যকাল্টিতে ছিলাম। অর্থাৎ কার্জন হল ছিল আমার মুল ক্যম্পাস। আমার জানামতে ব্লগার, জুন, সোহানী, রিম সাবরিনা জাহান সরকার, ভুয়া মফিজ, সেলিম আনোয়ার, শের শাইরি ইত্যাদি এক্স ঢাবিয়ান। তবে কে কোন ফ্যকাল্টিতে ছিলেন জানা নেই। এছাড়াও হয়ত আরো অনেক ব্লগার আছেন যাদের কথা জানা নেই।
লকডাউনে দুশ্চিন্তা, মানসিক অবসাদ ভুলে থাকতে এখন মানুষ পুরোনো বন্ধুদের সাথে অনলাইনে বিভিন্ন গ্রুপে আড্ডা দিচ্ছে।সর্বাত্মক ভাল থাকার প্রচেষ্টায় পারি দিচ্ছে সবাই কঠিন এক সময়। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই মুলত এই পোস্টের অবতারনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২০ বিকাল ৪:২১