somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃৃতিচারন - শৈশবের কুরবানির ঈদ

২৭ শে জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগামী বৃহস্পতিবার কুরবানির ঈদ। ঈদ এলেই আমার মন খারাপ হয়ে যায়। ভীষনভাবে দেশে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্ত বাস্তবতার কারনে যাওয়া সম্ভব হয় না। সারা বছর দেশে থাকা প্রিয়জনদের মিস করি। কিন্ত ঈদের সময় সবচেয়ে বেশি মিস করি।ঈদ উপলক্ষে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে দেশের বাড়ী যায়। ফেসবুকে দেখি অনেকেই ঢাকা ছাড়ছে। ট্রেন , বাসে চড়ে হাসিমুখে ছবি দিচ্ছে। বড় ভাল লাগে ছবিগুলো দেখতে। ছবিগুলো দেখলে শৈশবের ঈদের কথা মনে পড়ে যায়।

যতদিন দাদু বেচেঁ ছিলেন , ততদিন দুই ঈদই দেশের বাড়ি করতে যেতাম। ঢাকার কাছেই এক জেলাশহরে আমার দেশের বাড়ি। মনে আছে ফুলবাড়িয়া বাস স্টেষনে গিয়ে বাস ধরতে হত। ঈদের সময় ঢাকায় থাকা অন্যান্য কাজিনরাও আমাদের সাথে রওনা হত। বাস জার্নিটা সে কারনে দারুন উপভোগ্য হয়ে উঠত। ঢাকা ছাড়তেই শুরু হত সবুজের মেলা। গ্রাম বাংলার অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পৌছে যেতাম মেঘনা নদীর তীরে। মেঘনা ও গোমতি এই দুই নদীতে সেই সময়ে ব্রীজ ছিল না। ফেরী করে পারাপার করতে হত। সে আরেক দারুন অভিজ্ঞতা। ফেরীতে উঠেই আমড়া , চানাচুর , বাদামঅলাদের হাক ডাকে প্রায় সব আইটেমই খাওয়া হত। সে সময়ে এত হাইজেনিক, ননহাইজেনিক বিষয়ে মাথা ঘামাতাম না। কোলাহলমুখর ফেরীতে বসে আমড়া, চানাচুর, খেতে খেতে মেঘনার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতাম। তখন মেঘনা আজকের মত শীর্নকায় খাল সদৃস ছিল না। প্রমত্ত মেঘনার বুকে পাল তোলা নৌকার সৌন্দর্য যারা অবলোকন করেছে , শুধু তারাই জানে মেঘনার অপরুপ সেই সৌন্দর্যের কথা।

বাস কাংখিত গন্তব্যে পৌছুলেই বাস স্টেষনে গিয়ে দেখতাম চাচাতো ভাইয়েরা আমাদের অপেক্ষায় বসে আছে। সদলবলে কয়েকটা রিকশায় করে দাদুর বাড়ির কাছাকাছি পৌছুলেই দেখতাম পাড়ার অন্যান্য ছেলেমেয়েরা স্বাগত জানাচ্ছে। আমাদের আগমনের খবর তারা আগেই পেয়ে গেছে। নিজেদের বেশ ভিয়াইপি বলে মনে হত। সাধারনত ঈদ উপলক্ষে পাঁচ থেকে সাতদিন থাকা হত। সেই সাতদিন স্বপ্নের মত কেটে যেত। কুরবানির ঈদের আগের দিন সাধারনত গরু কেনা হত। বড়ড়া হাটে যেত। আমাদের ছোটদের কাজ ছিল বিভিন্ন বাসায় গিয়ে গরু দর্শন করা। কাদের গরু কত বড় বা কত দামী তা নিয়ে অলিখিত প্রতিযোগিতা চলত প্রতিবেশিদের মধ্যে।

দাদু বাড়ীর উঠোনে গরু কিনে এনে রাখা হত। আমাদের ছোটদের কাজ ছিল গরুকে পাতা খাওয়ানো। ঈদের দিন যখন সেই গরুকে কুরবানি দেয়া হত , তখন দুচোখে পানি চলে আসত। কুরবানির সময় এলেই তাই ছোটদের বাড়ীর ভেতরে পাঠিয়ে দিতেন বড়রা। কুরবানির পর বড় কাজিনদের মাংশ কাটাকাটিতে বসতে হত। কাজটা কেউই পছন্দ না করলেও বাবা চাচার চোখ রাঙ্গানীতে না করে উপায় ছিল না । আমরা ছোটরা ছিলাম স্বাধীন। নতুন জামা পড়ে বের হতাম পাড়া বেড়াতে। প্রতিবেশিদের বাসায় দলবেধে ঘুরে ঘুরে জর্দা , ফিরনি খেতাম। দল বেধে রাস্তায় ক্রিকেট খেলতাম কিংবা কারো বাসার রোয়াকে ( উচু খোলা বারান্দা) বসে বসে সাত পাথর, মার্বেল আরো অনেক ধরনের খেলা খেলতাম । দুপুর হলেই বাড়ি ফিরতাম । বাড়ীর সবচেয়ে বড় রুমে চাদর পেতে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হত ঈদের দিনে। মা, চাচী ও বড় আপুরা মিলে খাবার সাজাতো। বিশাল হাড়িতে রান্না করা গরুর মাংশের গন্ধে চারিদিকে মৌ মৌ করত। গরুর মাংশ, কলিজা, মগজ ভুনার সাথে পোলাও, খিচুরি , সাদা ভাত ও সালাদ থাকত। সেই মাংশ-খিচুরির স্বাদ ছিল তুলনাহীন, যা আর কোথাও কখনও পাইনি।

মাঝে মাঝে মনে হয় টাইম মেশিনে করে যদি সেই সময়টায় ফিরে যাওয়া যেত! এখনো হয়ত যারা ঢাকা ছেড়ে দেশে গ্রামে ঈদ করতে যায় , তারা হয়ত এরকম আনন্দ করার সুযোগ পায়। কে কোথায় ঈদ করছেন এবার ?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২১
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×