জুলাই ২৮ : ২৭শে জুলাই বিকালে সমন্বয়ক হাসনাত , সারজিসকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। বিষয়টি চাউর হওয়ার পর হেফাজতে নেওয়ার কথা শনিবার (২৭ জুলাই) রাতে স্বীকার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। একইদিনে ফেসবুকে খবর আসে যে , সমন্বয়ক তাবাসসুমকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আন্দোলন দমনে গনহারে শিক্ষার্থীদের গন গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ রাজপথে নামেন। পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষকেরা ছাত্রদের জীবন বাচাঁতে রাজপথে পুলিশের সাথে বাক বিতন্ডায় লিপ্ত হন এবং জ্বালাময়ী বক্ততা দিয়ে উত্তপ্ত করে তোলেন শিক্ষাঙ্গন। একই সাথে শিক্ষকেরা বিভিন্ন থানায় থানান্য ছুটে যান ছাত্রদের ছাড়িয়ে আনতে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগের দিনে ঘোষিত দেয়াল লিখন কর্মসুচীর ডাকে সারা দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার্থীরা দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে দেয় আন্দোলনের রক্তাক্ত ইতিহাস। গন গ্রেফতার ও ধর পাকরের মাধ্যমেও থামিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি শিক্ষার্থীদের ঘরে আটক করে রাখা।
জুলাই ২৯ : কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর আল মতিন প্রীতম ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা লিপি। টিভি উপস্থাপক হিসাবে জনপ্রিয় এই আইনিজীবি জানান যে, '' সন্তানদের রক্ষা করতে এসেছি, কারোর বাপের প্রয়োজনে আসিনি ''। পরবর্তীতে তিনি ছাত্রদের সাথে রাজপথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাড়ান।
ভাতের হোটেল নামে বিখ্যাত ডিবি অফিসে বৈষম্যবিরোধি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের চাইনিজ খাওয়ানোর কিছু ছবি গনমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর ডিবি কার্যালয়ে হেফাজতে থাকা আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক এক লিখিত বক্তব্য পাঠের মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
ডিবি কার্যালয়ে সমন্বয়কদের জিম্মি করে ব্ল্যাকমেইল করে এই লিখিত বক্তব্য পাঠ করানো হয়েছে বলে ফেসবুকে পোস্ট দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিবৃতি আদায় ছাত্রসমাজ মেনে নিবে না। তিনি আরো জানান যে , জিম্মি হওয়ার পূর্বে সিনিয়র সমন্বয়কবৃন্দের নির্দেশনা মোতাবেক আন্দোলন চলবে।
জুলাই ৩০ঃ বৈষম্যবিরোধী আন্দলোনের সমন্বয়ক আ হান্নান মাসউদ দেশব্যপী ‘’March for Justice’’ কর্মসুচী ঘোষনা করেন। দেশের সকল আদালত , ক্যম্পাস এবং রাজপথে ‘’March for Justice কর্মসুচী পালনের আহবান জানান হান্নান।
এই দিনেই অনলাইনে ফেসবুক ইউজারদের প্রোফাইল পিকচার একযোগে লাল করার আহবান জানায় বৈষম্যবিরোধি ছাত্র আন্দোলন । বিশ্বব্যপী তুমুল আলোড়ন তোলে এই আহবান। শুধু কোটি কোটি বাংলাদেশি নয় , বিদেশিরাও বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের এই আন্দলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে একযোগে প্রোফাইল পিকচার লাল করতে থাকে।
সমন্বয়ক মাহিন সরকার ঐক্যবদ্ধভাবে লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেধে রাজপথে নামার আহবান জানায় সর্ব স্তরের মানুষকে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ লাল কাপড় মুখে বেঁধে ’March for Justice’ কর্মসুচীতে যোগদান করে।
ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে নিঃশর্ত মুক্তির জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা । গ্রেপ্তারকৃত সকল ছাত্রদের অবিলম্বে মুক্তি, গ্রেপ্তার বন্ধ করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ারও দাবি জানান তারা। সেই সাথে প্রতিটি হত্যাকাণ্ড এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্র ব্যবহার এবং বল প্রয়োগের বিষয়ে জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ বিশেষজ্ঞের অধীনে স্বাধীন, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান তারা।
view this link
৩১শে জুলাই : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে মুক্তি দিতে এবং আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছোড়া বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের ওপর শুনানি হয়নি। একজন বিচারপতি অসুস্থ থাকার কারণে দ্বৈত বেঞ্চ না বসায় শুনানি হয়নি বলে জানায় আদালত। সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের মা মমতাজ নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় আছি । কি হচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছি । ছেলে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত দুশ্চিন্তা কাটছে না।’ । আসিফ মাহমুদের বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘লুঙ্গি পরা অবস্থায় তাঁর ছেলেকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। আজ (বুধবার) ছেলের জন্য একটি গেঞ্জি ও প্যান্ট নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক রিফাত রশিদ গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘’ আমাদের নায়কদের স্মরণ’ (Remembering the Heroes)’’ কর্মসূচি ঘোষনা দেন।এতে বলা হয়, প্রিয় দেশবাসী, আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ আজ সন্ত্রাসের কালো ছায়ায় আচ্ছন্ন। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার এই দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর রাষ্ট্রযন্ত্র, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবহিনী ও তাদের দলের সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে বর্বর গণহত্যা চালিয়েছে। আমাদের ঝলমলে দিনগুলো আজ আঁধারে ছেয়ে গেছে। রাতগুলো হয়ে গেছে গণগ্রেফতারের আতঙ্কে আরও অন্ধকার। সরকার ও তার মদদপুষ্ট ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও যৌথবাহিনীর মধ্যযুগীয় বর্বরতায় শাহাদাত বরণ করেছে শিশুসহ শত শত সাধারণ নাগরিক। চলছে রাতের আঁধারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হানাদার বাহিনীর কায়দায় গণগ্রেফতার, সেই সঙ্গে চলছে গ্রেফতার বাণিজ্য। সাধারণ শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের রাস্তায় ধরে মোবাইল চেক, হয়রানি ও নির্বিচার গ্রেফতারের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিদিনের চিত্র। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচি পালনে তিন দফা করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো-
১. নির্যাতনের ভয়ংকর দিন-রাতগুলোর স্মৃতিচারণ
২. শহীদ ও আহতদের নিয়ে পরিবার এবং সহপাঠীদের স্মৃতিচারণ
৩. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চালানো নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে চিত্রাংকন/গ্রাফিতি, দেওয়াল লিখন, ফেস্টুন তৈরি, ডিজিটাল পোট্রের্ট তৈরি প্রভৃতি।শহীদদের স্মরণে উপরের যেকোনো কন্টেন্ট/লেখা লিখে নিম্নোক্ত হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে অনলাইনে ও অফলাইনে প্রচার করা।
#JulyMassacre
#RememberingOurHeroes
বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।