somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধ হয়ে গেল ইংরেজি দৈনিক অবজারভার

০৯ ই জুন, ২০১০ ভোর ৬:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল প্রাচীনতম ইংরেজি দৈনিক 'বাংলাদেশ অবজারভার'। শ্রম আদালতের মাধ্যমে পত্রিকাটির সাংবাদিক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের বকেয়া পরিশোধ এবং মালিকানা রদবদলের মাধ্যমে আজ বুধবার থেকে এর প্রকাশনা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে।
তবে সাংবাদিক-কর্মচারীরা দাবি করেছেন, তাঁদের সব পাওনা পরিশোধ না করেই পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এ নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করলে আদালত পত্রিকাটির সব সাংবাদিক-কর্মচারীর সব বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে আল হেলাল প্রিন্টিং ও পাবলিকেশন্স কম্পানি বিলুপ্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তার কারণ জানতে চেয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, গতকাল মঙ্গলবার অবজারভার ট্রাস্টি গ্রুপের পক্ষ থেকে শ্রম আদালতে সাংবাদিক-কর্মচারীদের কাছে ১০ কোটি টাকার 'অ্যাকাউন্ট পেয়ি' চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। একই সঙ্গে গতকাল সকালেই পত্রিকাটির মতিঝিল ভবন, প্রেস ও প্রকাশনা কনকর্ড গ্রুপ বুঝে নিয়েছে। অবজারভার ট্রাস্টি গ্রুপ প্রায় ১৫০ কোটি টাকায় এ সম্পদ কনকর্ড গ্রুপের কাছে বিক্রি করেছে বলে জানা গেছে।
পত্রিকাটির প্রধান বার্তা সম্পাদক শাজাহান মজুমদার গতকাল কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ৬০ বছরের পুরনো এ দৈনিকটির বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য এর সাংবাদিক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। এ নিয়ে আদালতে শতাধিক মামলাও হয়েছে। ১৯৯১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, তাঁদের বকেয়া টাকার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে গত আরো আড়াই বছরের বকেয়া বেতন-ভাতাও যুক্ত হয়েছে। সাংবাদিক-কর্মচারীদের দাবি ছিল, পত্রিকাটির বর্তমান ও সাবেক সব সাংবাদিক-কর্মচারীর বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে হবে। এ নিয়ে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। গত জানুয়ারিতে তথ্য মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, অবজারভার ট্রাস্টি গ্রুপ ও সাংবাদিক-কর্মচারীদের সমঝোতার ভিত্তিতে ১০ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ করার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে ট্রাস্টি গ্রুপ চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী অবজারভারের সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে পারবেন বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শ্রম আদালতে পত্রিকাটির ট্রাস্টি গ্রুপ আইনজীবীর মাধ্যমে ১০ কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক হস্তান্তর করে। এ টাকা এখন অবজারভারের প্রায় ১০০ জন সাংবাদিক-কর্মচারীর মধ্যে বণ্টন করা হবে।
শাজাহান মজুমদার বলেন, 'আমরা জানতে পেরেছি, অবজারভার ট্রাস্টি গ্রুপ ইতিমধ্যে মতিঝিলে পত্রিকাটির ভবন, প্রেস, কম্পিউটার ও আসবাবপত্রসহ সব সম্পত্তি কনকর্ড গ্রুপের কাছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকায় বিক্রি করেছে। গতকাল তারা ওই ভবনটির দখলও নিয়েছে। এর অর্থ পুরনো মালিকানায় গতকাল ছিল পত্রিকাটির শেষবারের মতো আত্দপ্রকাশ। আজ বুধবার থেকে এটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। এখন পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত রাখা না রাখা নতুন মালিকদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।'
১৯৯১ সালে সংকটের শুরু : চতুর্থ বেতন স্কেল বাস্তবায়ন, চাকরিচ্যুত করা বা চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর পাওনা পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে ১৯৯১ সালে সাংবাদিক-কর্মচারীরা আন্দোলন শুরু করেন। বেশ কয়েক বছর আগে অবজারভারের সাংবাদিক ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে এক আবেদনে বলা হয়, চতুর্থ বেতন বোর্ড রোয়েদাদ বাস্তবায়ন না করেই মালিক পক্ষ বাংলাদেশ অবজারভার বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ওই সময় তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী নাজমুল হুদা দুই পক্ষের মধ্যে একটি মধ্যস্থতা করেন। এতে মালিক পক্ষকে পাঁচ কোটি টাকা বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করার কথা বলা হয়; কিন্তু পরে আর ওই টাকা পরিশোধ করা হয়নি।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন : ২০০৮ সালে একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবজারভার ও চিত্রালীর ২৫৯ জন সাংবাদিক-কর্মচারীর পাওনা টাকার পরিমাণ ২৬ কোটি ২৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এ সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিতে নগদ টাকা হিসেবে ১৩০ কোটি এবং (অ্যাকাউন্ট পেয়ি) চেক হিসেবে ২১ কোটি ৯১ লাখ টাকা এসেছে। ২০০২ সালের অক্টোবর থেকে পত্রিকাটিতে পুরোপুরি বেতন বকেয়া হওয়া শুরু হয়। অথচ ২০০২ থেকে ২০০৭ সালে নগদ আয় হিসেবে ৩৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ১৯২ টাকা এসেছে বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়।
খোলা চিঠি : ২০০৪ সালের ১৯ নভেম্বর মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী এক খোলা চিঠিতে অবজারভারের সাংবাদিকদের একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আহ্বান জানান। এতে তিনি সাংবাদিক-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন পরিশোধ এবং তাৎক্ষণিকভাবে কিছুসংখ্যক কর্মচারীকে বকেয়া বেতনের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করার আশ্বাস দেন। ১৬১ জন সাংবাদিক-কর্মচারী ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু তার পরও বেতন পরিশোধ করা হয়নি।
গৌরবময় অতীত : ১৯৪৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর 'পকিস্তান অবজারভার' প্রকাশ করেন বিশিষ্ট আইনবিদ হামিদুল হক চৌধুরী। ভাষা আন্দোলন ও প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেওয়ায় ১৯৫২ সালে পত্রিকাটির প্রকাশনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সে সময় এর সম্পাদক আবদুস সালাম ও প্রকাশককে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫৪ সালে এটি আবার প্রকাশের অনুমতি পায়। পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন চাওয়ায় ১৯৬০ সালে পত্রিকাটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে এটি 'বাংলাদেশ অবজারভার' নামে প্রকাশিত হয়। ১৯৭২ সালে এর দায়িত্বভার গ্রহণ করে সরকার। ১৯৮৪ সালে সরকার অবজারভারের মালিকানা হামিদুল হক চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে আল-হেলাল প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং থেকে পাঁচটি পত্রিকা প্রকাশিত হতো। এগুলো হচ্ছে দৈনিক ওয়াতান (উর্দু), দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার (ইংরেজি), দৈনিক পূর্বদেশ (বাংলা), সাপ্তাহিক চিত্রালী (উর্দু) ও সাপ্তাহিক চিত্রালী (বাংলা)। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ অবজারভার, পূর্বদেশ ও সাপ্তাহিক চিত্রালী (বাংলা) প্রকাশিত হতে শুরু করে। ১৯৭২ সালে আল-হেলাল প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন্সের দায়িত্বভার সরকার গ্রহণ করে। পরে বাকশাল গঠন করে চারটি ছাড়া বাকি সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিলে পূর্বদেশ ও চিত্রালী বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে চিত্রালী আবার প্রকাশিত হয়। তবে ১৯৯১ সালের পর থেকে এর প্রকাশনা অনিয়মিত হয় এবং ২০০৫ সালে আবার বন্ধ হয়ে যায়।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×