somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চেয়ে রবো তারার পানে

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রাতরাশে মননশক্তি সঞ্চারক দাওয়াই ‘দৈনিক প্রথম আলো’ আর নৈশ ভোজে তৃপ্তির মিষ্টান্ন আস্বাদন সরূপ ‘তারা মিউজিক’। সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততার ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফেরা। তারপর ফ্রেস হয়ে তড়িঘড়ি দুমুঠো অন্ন গলাধঃকরণ করেই টেলিভিশনের সামনে বসে পড়া। এভাবেই চলছে জীবন।

সারাদিনকার দেশ বিদেশের খবরাখবর তো নেয়া চাই! তাই রিমোট হাতে নিয়েই ঘুরতে থাকি এ চ্যানেল থেকে ঐ চ্যানেলে, খবরের বৈচিত্র্য অন্বেষণে। খবর পর্বের পর চলতে থাকে ‘টক শো’ অনুসন্ধান। আর্থ সামাজিক নানা ঘাত প্রতিঘাত, বিশেষ করে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতায় গুমট হয়ে যাওয়া নাগরিক সমাজের কাছে দেশীয় চ্যানেলগুলোর ’টক শো’ এখন বাতায়নের মতই। আমার মত অনেকেই মধ্য রাত পর্যন্ত বসে থাকেন এই জানালা খোলার জন্য। তারপরেই সেই মিষ্টান্ন আস্বাদন পর্ব অর্থাৎ তারা মিউজিক এ থিতু হয়ে বসা, যতক্ষণ পর্যন্ত না মনের রসনা বিলাস সম্পন্ন হয়। এই রসনা বিলাস পর্ব মধ্য রাত পেরিয়ে কখনো কখনো নিশির শেষ ভাগ পর্যন্ত গড়ায়। বাংলা গানের কথা সুর ও ছন্দের সাথে ছেলেবেলায় সেই যে গাঁটছড়া বাঁধা, আজও তা অটুট। সংসার ও কর্ম জীবনের নতুন নতুন অধ্যায় ও বন্ধনের কোথাও কোনো টানাপোড়েন থাকলেও, এই একটি জায়গায় সম্পর্ক দৃঢ় ও অবিচ্ছেদ্য। এখানে আমি শুধুই দুহাত পেতে নেই, দেবার কিছুতো নেই, চাইবারও কেহ নেই!

বাংলা গানের কিংবদন্তীরা তাদের কথা সুর ছন্দ ও কণ্ঠের যাদুতে সেই যে কিশোর কেন শৈশবেই মুগ্ধতা এনে দিয়েছিলেন, আজও তা অম্লান। জীবনে ভাল লাগা বা প্রশান্তির গভীরতায় পৌঁছেছে যতটুকু, তার সবটুকুই গান বৈকি অন্য কিছু নয়! তাইতো আজও পেশাগত বা অন্য কোনো প্রয়োজনে দেশ বিদেশের যেখানেই যাই, সারাদিন কর্মব্যস্ততার পর কামড়ায় ফিরে ল্যাপটপ বা মুঠোফোনে সযত্নে সংরক্ষণ করা রবীন্দ্র, নজরুল, ডিএল রায়, মান্না দে, সন্ধ্যা, হেমন্ত, লতা, মানবেন্দ্র, কিশোর, শ্যামল, সতিনাথ, আশা, অনুপ, পিন্টু, হৈমন্তী, অজয় না বাজলেই নয়। ইদানীংতো তরুণদের মধ্যে অপূর্ব কণ্ঠশৈলী আর মেলোডিতে স্থান করে নিয়েছে শুভমিতা, মনোময়, রূপঙ্কর, শ্রেয়া, রাঘব, দেবর্ষি সহ আরো অনেকে। অন্যদিকে আবার বিশেষ যত্নে অবস্থান করছেন সুমন, শ্রীকান্ত ও নচিকেতারা। বাংলা গানে গৌরিপ্রসন্ন, জ্ঞানপ্রকাশ, সলিল, পুলক’রা কি আর যাদু দেখাতে ফিরে আসবেন? বোধকরি না।

বাংলা গানের আকালে কোলকাতা থেকে সম্প্রচারিত তারা নেটওয়ার্কের তারা মিউজিক চ্যানেল বাংলা গানের মন্দির হয়ে উঠেছে। একটা টেলিভিশন চ্যানেল যে গান প্রিয় মানুষগুলোর অনুভূতির কতটা গভীরে স্থান করে নিতে পারে, তা তারা’র সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যাওয়ার সংবাদের পরের দৃশ্যপটই বলে দেয়। ভেবেছিলাম পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ওপার বাংলার বাঙ্গালিদেরই বেশী ছুঁয়েছে এই দুঃসংবাদ। তারা মিউজিক যে আমার মত এপার বাংলার আরো অনেক হৃদয় হরণ করে আছে, তা জানলাম আমার এক শ্রদ্ধাভাজন অগ্রজের আকুতি দেখে, যিনি তাঁর এ সংক্রান্ত ফেবু পোস্টটি শেয়ার করার জন্য সবার ব্যক্তিগত ওয়ালে পর্যন্ত অনুরোধ রাখছেন।

তারা মিউজিক বাংলা গানের পৃষ্ঠপোষকতায় দীর্ঘদিন ধরে যে অবদান রেখে আসছে, তার কৃতিত্ব শুধু পরিকল্পনাকারী শিল্পী ও কলাকুশলীদেরই নয়। সবচেয়ে বড় অবদান ও কৃতিত্বের প্রশংসা রয়ে যায় এর অর্থায়ন ও পরিচালনাকারীদের জন্য। কারণ এই চ্যানেলটি বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনদাতাদের খুব বেশী আশীর্বাদ পুষ্ট ছিলনা। তারা মিউজিক প্রথিতযশা শিল্পীদের পাশাপাশি কিশোর তরুণ প্রতিভাবান এবং উদীয়মান শিল্পীদেরও একটা সঙ্গীত প্রার্থনালয় হয়ে উঠেছে, যেখানে দর্শক শ্রোতারাও মন্ত্রমুগ্ধ বা মন্ত্রস্নাত হন।

কিছুদিন আগে ‘টেক এ ব্রেক’ যাকে রয় নাম দিয়েছে ‘ট্যাব’ এর একটি পর্বে এক সদ্য শৈশব উত্তীর্ণ কিশোর গান শোনালো। যদি প্রশ্ন করা হয়, অভিভূত হবার কিছুটাও কি ছিল বাকী? উত্তর, মোটেও না!

তারা’র সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে ‘গানভাসি’ ‘তারা ক্লাব’ ‘আজ সকালের আমন্ত্রণে’ আর আমন্ত্রিত না হওয়া। বাংলা গানের প্রজন্ম কিঞ্জলের অসম্ভব রোমান্টিক কণ্ঠ ঘুরে ফিরে না শোনা। রূপকের গীটারের যাদুতে মুগ্ধ না হওয়া। অনেক মমতায় ‘বন্ধু’ বলে দর্শক শ্রোতাদের রিনি মৈত্রেয়ী মল্লিকাদের আর সম্বোধন না করা।

তারা’র বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে দেশ বিদেশের সহস্র লক্ষ কোটি বাংলা গানের তৃষিত প্রাণকে মরু প্রান্তরে নির্বাসন দেয়া। এমনটি হবার নয়, হওয়া উচিৎ নয়! আমার বিশ্বাস, সকল প্রতিকূলতাকে তুচ্ছ করে সারদা গ্রুপ কর্তৃপক্ষ গান পাগল বাঙ্গালীর হৃদয়ের আকূতিকে শ্রদ্ধা জানাবেন। রিনি মৈত্রেয়ী মল্লিকা সহ তারা মিউজিক এর সকল কলাকুশলী শিল্পী এবং আমার মত অজস্র দর্শক শ্রোতার দুফোঁটা চোখের জলকে তাদের হৃদয় মন্দিরে অর্ঘ হিসেবে গ্রহণ করবেন। জিতে রহো তারা মিউজিক!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×