ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গের স্মৃতিচারণ, শহিদ বা ভাষা দিবস যাই বলি না কেন, এবার দিনটি পালন করা হোলো বেশ ঘটা করেই। বায়ান্নত্তর প্রতিবছরই আমরা বাঙ্গালিরা দিবসটি পালন করে আসছি। মনে পড়ে, ছোট বেলায় ২১শে ফেব্রুয়ারি পালিত হতে দেখেছি পরিপূর্ণ ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে, শোক আর আবেগের গভীর আলিঙ্গনে, যেখানে চেতনার স্ফুরণও পরিলক্ষিত হত জনগণের চোখেমুখে। আজও দিবসটি পালিত হয়, তবে সেখানে আনুষ্ঠানিকতা আর আবেগের কোনো কমতি না থাকলেও চেতনার দৈন্য চোখে পড়ে যায় খুব স্পষ্টভাবেই। আর এই দৈন্যের দায় যতটুকু না জনগণের কাঁধে, তার চেয়ে অনেক বেশি দায় রাষ্ট্র যন্ত্র বা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর।
বাংলা ভাষা বিকৃতির অপচেষ্টা নানাভাবে হলেও, ইদানীং এর তোরজোড় ব্যাপকভাবে বেড়েছে, তাও আবার আধুনিক ঢঙে! বেসরকারি রেডিওগুলোর 'আরজে'রা যে ভঙ্গি বা উচ্চারণে বাংলা বলছে, তা সচেতন বাংলাপ্রেমী শ্রোতার জন্য রীতিমত মননাঘাত। লক্ষ্য করলাম, বেসরকারি টেলিভিশনের দুএকটিতেও ঢুকে পড়েছে এই ছোঁয়াচে রোগ। কারণ, প্রথম দিকে রেডিও জকিদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়ছে টেলিভিশন, মঞ্চ এমনকি বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য সেবা প্রদানকারী 'কল সেন্টার' সমূহের প্রতিনিধিদের মধ্যেও।
বাচনভঙ্গির আধুনিকায়নের নামে ভাষার এই কথ্য বিকৃতি, মূলত ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণকারীদের অজ্ঞানতা কিংবা উচ্ছ্বাস অথবা অনুপ্রেরণায়ই বেশি হচ্ছে। তাঁরা হয়তো মনে করছেন, ইংরেজি উচ্চারণের ভঙ্গিতে বাংলা বলার মধ্যে তাদের আধুনিক বা আধুনিকা হবার গৌরবটা লুক্কায়িত। কিন্তু তাঁরা জানেন না, বাংলার আভিজাত্যের আভা বিচ্ছুরিত হওয়া কপোলে ইংরেজির নকল বা মেকি এবং উদ্ভট প্রলেপ, এর সৌন্দর্যহানী বৈ শোভা বর্ধন করে না। বরং এতে করে তাঁদের নিজেদেরই হাস্যরসের পাত্র-পাত্রীতে রূপান্তরিত হতে হয়।
এই ধরণের বিকৃত কর্মকাণ্ড রোধে সরকারের তথ্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সহ বাংলা একাডেমি বা সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা বিভাগগুলো নজরদারির পাশাপাশি দায়িত্ব নিতে বা পালন করতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকারী বেসরকারি রেডিও বা টেলিভিশনগুলোতে কেউ বাংলায় উপস্থাপনা বা সঞ্চালনার দায়িত্ব নেয়ার আগে, তাঁর বাংলা উচ্চারণগত শুদ্ধিতা পরীক্ষার জন্য প্রাজ্ঞজনদের নিয়ে গঠিত কমিটির সামনে উপস্থিত হওয়া সহ উত্তীর্ণ সনদ গ্রহণ করাও বাধ্যতামূলক করে দেয়া যেতে পারে। অন্যথায়, নতুন প্রজন্মের কিশোর কিশোরী ও তরুণ তরুণীরা শুদ্ধ সাবলীল বাংলা উচ্চারণের পরিবর্তে আধুনিকতার নামে বিকৃতিতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়বে, যাকে হয়তো এক সময় 'হিংলিশ' এর মতো 'বাংলিশ' নামকরণও করে ফেলবে মানুষ!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



