গতকাল বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান ক্রিকেট খেলা হোলো মাঠে আর গ্যালারী, টেলিভিশন, ফেসবুক সহ অন্যান্য অনলাইন মাধ্যমে আবেগি ভার্চুয়াল যুদ্ধ গড়াল আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা অনেকেরই মাঝে। আমাদের বাংলাদেশীদের আবেগের থার্মোমিটার সব সময় 'রিয়েল টাইম' এবং 'ওভার এ্যাকটিভ' থাকে। অর্থাৎ মিটারস্থ পারদের অবস্থান কিঞ্চিৎ উত্তাপেই সহসা গতি সম্বলিত হয়ে উচ্চমাত্রায় গিয়ে থিতু হয়। এই আবেগকে হেয় বা অবমূল্যায়ন করাও যেমন অন্যায়, তেমনি আবেগের জোয়ারে যুক্তি বা শালীনতাকে ভাসিয়ে দেয়াও ধীমানের প্রজ্ঞার অসম্পূর্ণতা।
বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্য বা মর্যাদার অন্যান্য কয়েকটি বিষয়ের সাথে ক্রিকেটও যায়। অন্তত দেশের ক্রীড়ামোদী এবং আবেগি জনসাধারণ তাই ভাবেন। ৪৭ থেকে ৫২ অতঃপর ৭১ এ পাকিস্তানীদের জিঘাংসা ও বিভীষিকাময় অধ্যায় রচনা, দেশপ্রেমিক প্রতিটি সচেতন নাগরিকই ঘৃণাভরে স্মরণ করবে। এর সাথে ভিন্নমত বা যুক্তিতর্কের অবতারনাকারী মাত্রই সন্দেহাতীতভাবে স্বাধীনতা বিরোধী বা দেশদ্রোহী, সে যেই হোক। কিন্তু ক্রীড়া বা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের বিশ্ব সার্বজনীনতায় ভূ-রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও শ্রেণী-গুষ্টির তর্ক বা বিভেদ স্থান পায় না এবং পাওয়া উচিৎও নয়।
খেলার মাঠে যখন দুটি দল খেলবে, তখন তারা খেলোয়াড়। দর্শক হিসেবে নিজ সমর্থিত দলের খেলা যেমন উপভোগ্য হবে, তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বী দলের ক্রীড়া নৈপুণ্যও তাকে অভিভূত করবে, এটাই প্রকৃত ক্রীড়ানুরাগীর বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ইদানীং খেলা যেন মাঠের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভূ-রাজনৈতিক শত্রু-মিত্রতার টানাপোড়েন বা যুদ্ধ বিগ্রহের হিসাব-নিকাশ শেষে জয় পরাজয় নির্ণায়ক হয়ে গেছে, বিশেষত পাক-বাংলার ক্রীড়া অনুষ্ঠানগুলোতে। এখন প্রশ্ন হোলো, যাঁরা খেলা দেখে বাংলাদেশের বিজয়কে ৭১ এর বিজয় গাথার সাথে একত্রিত করে আবেগের মেলবন্ধন করেন, তাঁরা কি বাংলাদেশের পরাজয়কেও একইভাবে কল্পনায় আনেন বা ভাবেন? তাহলে কি যতবার আমাদের দল পাকিস্তানী দলের সাথে পরাজয় বরণ করবে, ততবারই আমরা আমাদের আবেগের ভুবনে পরাজিতের গ্লানি অনুভব করবো? যদি তাই ঘটে, তাতে কি ত্যাগ ও গৌরবের আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ৭১ এর বিজয়কেই বার বার খাটো করা হয় না? পক্ষান্তরে, নিজ দলের পক্ষে মাঠে ক্রীড়াশৈলী বা দক্ষতা প্রদর্শনকারী প্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়াড়কে যখন 'ছাগু' বা অন্যান্য বিশেষণ ও অভিধায় আখ্যায়িত করা হয়, তখন প্রকৃত অর্থে সেই খেলার আকর্ষণ ও সৌন্দর্যকেই হেয় বা অপমান করা হয়। আর হ্যাঁ, জয় পরাজয় যাই আসুক, নিশ্চয়ই আমাদের দামাল ব্যাঘ্র শাবকরা কখনোই মাঠে অন্তত ছাগুদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনা এবং করবেও না!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



