somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত -৯

৩০ শে জুন, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ইন্দ্রের প্রতি বাল্যখিল্যাদির অভিসম্পাত:


ইন্দ্র

মুনিরা আবার জিজ্ঞাসা করেন -বল সূত-নন্দন, ইন্দ্রের কি কারণে পাপ হল! কশ্যপমুনি ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণদের একজন। তার পুত্রের পাখি হওয়ার কারণই বা কি!
সৌতি তখন মুনিদের আবার কাহিনী বর্ণনা শুরু করলেন।

পূর্বে কশ্যপমুনি একবার যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। অনেক মুনি, ঋষি এবং দেবতারা তাঁকে সাহায্য করেন।
ইন্দ্র যজ্ঞের জন্য পর্বত প্রমাণ কাঠ বন থেকে নিয়ে আসেন। ফেরার পথে তিনি দেখেন আঙ্গুলী সমান বাল্যখিল্য মুনিরা পলাশের পাতা মাথায় দিয়ে ধিরে ধিরে যাচ্ছেন। একটি গরু রাস্তা দিয়ে যাওয়ার ফলে যে গর্ত তার ক্ষুরে সৃষ্টি হয় তা মুনিরা পার হতে পারছেন না। দেখে ইন্দ্র তাঁদের উপহাস করলেন।
তাতে বাল্যখিল্যমুনিরা রেগে গিয়ে বললেন –মত্ত দুরাচার! তুমি অহঙ্কারে আমাদের চিনতে পারছ না!

তাঁরা ইন্দ্রকে জব্দ করার জন্য ইন্দ্রের চেয়েও শক্তিশালী বীরের আবির্ভাবের জন্য যজ্ঞ শুরু করলেন। ইন্দ্র ভয় পেয়ে ব্রহ্মা এবং কশ্যপমুনিকে তুষ্ট করলেন।

ব্রহ্মার অনুরোধে শেষ পর্যন্ত বাল্যখিল্য মুনিরা অনেক দুর এগিয়েও যজ্ঞ বন্ধ করলেন।

বাল্যখিল্য মুনিরা বললেন –এতদুর এগিয়েও সব পন্ড হবে!

কশ্যপ মুনি বললেন –তা কেন! এর ফলে পক্ষীন্দ্র অর্থাৎ পক্ষীদের রাজা জন্মাবেন এবং সেই ত্রিভুবন জয় করবেন।

মুনিরা ইন্দ্রকে শান্তনা দিয়ে বললেন আর কখনও কাউকে উপহাস করো না, অহঙ্কারও করো না, ব্রাহ্মণের ক্রোধ থেকে কারো নিস্তার নেই। এরপর তারা বিদায় সম্ভাষণ জানান।

কশ্যপমুনি তার স্ত্রী বিনতাকে বলেন ব্রত সফলরূপে শুনলে তার গর্ভে খগেন্দ্র অর্থাৎ পক্ষীরাজ জন্মাবেন। শুনে বিনতা খুশি হলেন। এভাবে কশ্যপের পুত্র হলেন গরুড়।


যখন গরুড় স্বর্গে গেলেন, তার ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে সকলে ভয় পেলেন। সকল দেবতা তাদের সকল অস্ত্র গরুড়ের উপর প্রয়োগ করলেন। কামরূপী অর্থাৎ ইচ্ছানুযায়ী গরুড় তার আকৃতি পরিবর্তন করে দেবতাদের আচরণে হাসতে লাগলেন। যত অস্ত্র তার উপর ফেলা হতে লাগলো, ততোই গরুড়ের তেজ বাড়তে লাগলো। মেঘের মত গর্জন করতে লাগলেন গরুড়।
তিনি ভাবলেন ইন্দ্র ও অন্য দেবতারা তার শক্তির পরিচয় বুঝতে না পেরেই তাঁর বিরোধীতা করছেন। এই ভেবে তিনি তাঁর পাখনার ঝাপ্‌টায় ইন্দ্রপুরী ধুলায় ভরালেন। ইন্দ্রপুরী লন্ডভন্ড হতে লাগলো।
ইন্দ্রও পবনকে ধুলা উড়ানোর আজ্ঞা করলেন। সকল দেবতা গরুড়কে আবার বাঁধতে চাইলেন।

এতসব দেখে গরুড় রেগে উঠলেন এবং আক্রমণ শুরু করলেন। কারো হাত ভাঙ্গল, কারো বা পা। সকলের মাথা ফেটে রক্তগঙ্গা! কারো বা হাড় ভেঙ্গে গেল। সকলে পালাতে চেষ্টা করলেন। পশ্চিমে রবি পালালেন। অশ্বিনীকুমাররা উত্তরে পালালেন।
সকল দেবতা কেবল অমৃতের জোরেই বেঁচে গেলেন এবং বার বার এসে যুদ্ধ করতে লাগলেন। কামরূপী গরুড় শেষে জ্বলন্ত আগুনে পরিণত হলেন। প্রলঙ্কারীরূপে সকলকে জ্বালাতে লাগলেন। আর সহ্য করতে না পেরে দেবতারা হার মানলেন।


তখন গরুড় চন্দ্রলোকে এলেন। চন্দ্রের চারপাশে তিনি অগ্নিকে দেখলেন। শেষে এক উপায় বার করলেন। সোনার বর্ণ হয়ে ভিতরে প্রবেশ করে অগ্নি পার হলেন। গরুড় দেখলেন অতি সূক্ষ্ম এক রন্দ্র। তার মধ্যে দিয়ে কামরূপী প্রবেশ করে অমৃত নিয়ে আনন্দে তা পাখায় নিয়ে নিমেষে চলে গেলেন।

তার মহাকায়রূপে যেতে ইচ্ছে করল। তার এই রূপ দেখে বিষ্ণু রেগে গেলেন। তাদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হল। বিষ্ণু চার হাতে যুদ্ধ করলেন। গরুড় তার পাখনা ও নখের সাহায্যে যুদ্ধ করলেন। শেষে গরুড়ের বীরত্বে বিষ্ণু খুশি হলেন এবং বর দিতে চাইলেন।

গরুড় প্রার্থনা করলেন তিনি বিষ্ণুর থেকেও উচ্চস্থানে অধিষ্ঠান করতে চান। তিনি আরো বললেন, এই সংসারে তিনি অজর, অমর ও অপরাজিত হতে চান। বিষ্ণু তাকে সেইরূপ বরই দিলেন।

হৃষ্টচিত্তে গরুড়ও বিষ্ণুকে বর দিতে চাইলেন। এবার বিষ্ণু তাকে নিজের বাহনরূপে প্রার্থণা করলেন। গরুড় তাকে সেই বরই প্রদান করলেন।

এভাবে দু’জনে দু’জনকে বর দিলেন। গরুড় বিষ্ণুর বাহন হলেন এবং বিষ্ণুর বরে তাঁর উচ্চস্থানে অর্থাৎ বিষ্ণুর রথের উপর আসনগ্রহণ করেন।

এরপর তীব্রবেগে গরুড় ফিরে চললেন। ইন্দ্র তাকে দেখে রেগে বজ্র মারলেন।
হেসে গরুড় বলেন –বজ্র ব্যর্থ হলে ইন্দ্রকে লজ্জা পেতে হবে!
তাই তিনি নিজের দেহের একটি পালক ইন্দ্রকে উপহার দেন। তার আচরণে ইন্দ্র বিস্ময়াপন্ন হন এবং গরুড়ের সাথে বন্ধুত্ব করতে চান।

ইন্দ্র বলেন –গরুড়ের তেজ দেখে তিনলোক ভয় পায়।

গরুড় লাজুক হেসে জানালেন তিনি সাগর এবং পৃথিবীকে এক ডানায় এবং অন্য ডানায় ইন্দ্রের অমর–নগরী নিয়ে উড়ে যেতে পারেন।
এভাবে একশ বছর উড়লেও তার কোন কষ্ট হবে না।

ইন্দ্র বললেন –তা সত্যই বটে!
তিনি অনুরোধ করলেন গরুড় দয়া করে অমৃত ফিরিয়ে দিক।

গরুড় তখন ইন্দ্রকে তাঁর মার দাসীরূপের দুঃখের কাহিনী জানালেন।

ইন্দ্র তাকে বললেন সর্পদের অমর করে কোন লাভ নেই। তারা সংসারের ক্ষয় করে। গরুড়ের যে শত্রু, ইন্দ্রেরও সে শত্রু। শত্রুকে তিনি অমৃত দান করতে পারেন না।

কিন্তু গরুড়ও মায়ের কাছে অমৃত দানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ!

শেষে ঠিক হল গরুড় সর্পদের অমৃত দেবেন এবং মাকে মুক্ত করবেন। সুযোগ বুঝে ইন্দ্র অমৃতভান্ডার লুকিয়ে ফেলবেন। এ পরিকল্পনায় দুই বন্ধুই খুশি হলেন।

ইন্দ্র গরুড়কে বর দিতে চাইলে গরুড় সাপদের খাদ্য হিসেবে ভক্ষণ করতে চাইলেন। ইন্দ্র তাকে সেই বর দিলেন। এবং ছায়ারূপে গরুড়ের সাথে চলতে লাগলেন।
আসলে ইন্দ্র সম্পূর্ণরূপে গরুড়কে বিশ্বাস করলেন না যে সে অমৃত ফিরিয়ে দেবে।

যা হোক্‌! গরুড় নাগলোকে গিয়ে সর্পদের ডেকে অমৃত তাদের হাতে তুলে দিলেন এবং মাকে দাসীত্ব থেকে মুক্ত করলেন।


গরুড় সর্পদের বললেন –যাও তোমরা স্নান করে এসে শুচি হয়ে অমৃত পান কর। ঐ দেখ সুধা কুশের উপর রাখা আছে। এই বলে গরুড় মাকে নিয়ে চলে গেলেন।

সকল নাগ স্নানের উদ্দেশ্যে গেলে ইন্দ্র সুধাভান্ড নিয়ে পালালেন। স্নান করে এসে নাগেরা সুধা দেখতে না পেয়ে হাহাকার করতে লাগল। তারা জানতে পারল ইন্দ্র তা নিয়ে গেছেন। সবাই তখন দৌড়ে সেই কুশ চাটতে লাগল। এভাবে চাটতে চাটতে তাদের জিভ চিরে গেল। সেই থেকে সাপেদের জিভ চেরা। অন্যদিকে সুধার স্পর্শে কুশ চিরদিনের জন্য পবিত্র হয়ে গেল।

গরুড়ের বিক্রম আর বিনতার দাসীত্ব মোচন, নাগেদের নৈরাশ্য, ইন্দ্রের অমৃত হরণ - এসব রহস্যের কথা যে জন শ্রবণ করবেন তার আয়ু এবং যশ বৃদ্ধি হবে দিনে দিনে। পুত্রার্থীর পুত্র হবে, ধনার্থীর ধন – যার উপর প্রসন্ন হন বিনতা নন্দন।

..............................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ১
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ২
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৪
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৫
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৬
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৭
Click This Link
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৮
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১০ রাত ১:৫০
৪৮টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×