somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৪৩

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সকলকে বড়দিন ও নতুন বছরের প্রীতি ও শুভেচ্ছা :)
----------------------------------------------------------------------------------


গান্ধারীর শত সন্তান প্রসবঃ

মুনি বলেন পূর্ব পুরুষদের আরো কথা শুন।

সুবল-সুতা গান্ধারীর পূজায় সন্তুষ্ট হয়ে ব্যাসমুনি তাকে বর দেন মহাবলবান স্বামীর মতই তার একশত পুত্র হবে। আনন্দিত গান্ধারী কিছুকালের মধ্যে গর্ভবতী হলেন। কিন্তু দশমাস পেরিয়ে গেলেও সন্তান প্রসব হয় না দেখে চিন্তিত হলেন। এ সময় হঠাৎ তিনি শুনলেন কুন্তীর পুত্র হয়েছে। এ খবরে তিনি মূর্চ্ছা যান।


“ যার পুত্র প্রথম জন্মাবে সেই কুরুকূলের রাজা হবে-কুন্তী ভাগ্যবতী –তার পুত্র-সন্তানেরা সবার পুজো পাবে, আমি অভাগিনী, পরম পাপিনী-এ আমার কর্মফল। দু’বছর হয়েগেল কিছুই জন্মালো না পরিশ্রমই সার হল”"-এসব ভেবে গান্ধারী ঠিক করলেন গর্ভ বিনাশ করবেন।


লোহার মুগুর নিজের পেটে মারলেন। গর্ভপাত হল-এসব কথা ধৃতরাষ্ট্র কিছুই জানতে পারলেন না। গান্ধারী হাত, পা, মুন্ডহীন এক মাংসপিন্ড প্রসব করলেন। ঘৃণায় রাণী দাসীকে ডেকে তা ফেলে আসতে বললেন।
সব অবধান করে মুনি দ্বৈপায়ন বেদব্যাস সেখানে উপস্থিত হলেন।ক্রোধ ভরে তিনি রাণীকে বললেন, তিনি উচিত কর্ম করছেন না, প্রকৃত ধর্ম জানা সত্ত্বেও তিনি অধর্মের কাজ করছেন। হিংসার মত মহাক্লেশ ও অধর্ম আর নেই, হিংসায় মানুষ নিজেই নিজেকে শেষ করে।


নিজ ভুল বুঝে গান্ধারী লজ্জিত হলেন এবং ক্ষমা চাইলেন। তিনি আরো বললেন মুনির বরদান পূর্ণ হল না দেখে তিনি বিস্মিত। মুনি তাকে শতপুত্রের জননী হওয়ার আশির্বাদ দেন, অথচ দু’বছর মহাক্লেশ সহ্য করেও কেবল মাংসপিন্ডেরই জন্ম হল।

মুনি সান্তনা দিয়ে বললেন তার বচন কখনও খন্ডন হতে পারে না। দুঃখ ত্যাগ করে রাণী তার বাক্য শুনুন, তাহলেই তার ইচ্ছাপূর্ণ হবে। তিনি আজ্ঞা দেন শতকুন্ড ঘৃতে পূর্ণ করে, মাংসপিন্ডটি জলে সিঞ্চন করে যে খন্ড হবে তা কুন্ডে করে রাখতে হবে।

এরপর মুনি নিজে মাংসপিন্ডটি কোলে নিয়ে তা জলে ডুবান। শীতল জলে সিঞ্চিতে সিঞ্চিতে মাংসপিন্ডটি শতখন্ডে ভাগ হয়ে যায়।অঙ্গুলীর তুল্য ছোট ছোট খন্ডগুলি শত কুন্ডে স্থাপন করা হল।

এরপর মুনি গান্ধারীকে বললেন, “রানী উতলা না হয়ে এই শতকুন্ড যত্ন করে রাখ, তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হবে।” তিনি রাজাকেও এ সংবাদ দিতে বললেন। এরপর হিমালয়বাসী ঋষি আপন স্থানে গমন করলেন।

কিছুকাল পর দুর্য্যোধনের জন্ম হল। ভীম যেদিন জন্মালেন দুর্য্যোধনেরও সেদিন জন্ম হল। যখন দুর্য্যোধনের জন্ম হল ময়ূরেরা কেকা রবে ডেকে উঠল, শকুনেরাও কেঁদে উঠল। দুর্য্যোধনের ডাকের সঙ্গে শকুনের ডাকের মিল দেখে সকলে চমকে উঠল। কুকুর, শেয়াল পালে পালে ডাকতে শুরু করল, কাকের উপদ্রপে নগর পূর্ণ হল। চারিদিকে তপ্ত বায়ুপ্রবাহ শুরু হল, মনে হল তাপে দশদিক পুড়ে যাচ্ছে। সূর্যদেব যেন রাগে আগুন বর্ষণ করছেন। পর্বত যেন ঝনঝন করে ভেঙে পরছে।

-এসব অমঙ্গলের চিহ্ন দেখে কৌরবপতি ধৃতরাষ্ট্র চিন্তিত হলেন। ভীষ্ম, বিদুর সকলকে শীঘ্র আসতে আহ্বান জানালেন। ধৃতরাষ্ট্র বললেন, “পান্ডু পুত্রই বংশের জ্যৈষ্ঠ কুমার, সেই রাজা হবে এতে সন্দেহ নেই, এ সংবাদে আমি সুখি। কিন্তু আমার পুত্রের জন্মমাত্র চারদিকে অমঙ্গল ধ্বনি উঠছে-এখন আমার কি কর্তব্য আপনারাই বলে দিন।”

রাজার সকল কথা শুনে বিদুর তার মত রাজাকে জানালেন।
......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৪২
Click This Link
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×