somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৪৬

৩০ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পুত্রোৎপাদনে কুন্তীর প্রতি পান্ডুর অনুমতিঃ

চিন্তিত পান্ডু কুন্তীকে বলেন দেবতার দ্বারা পুত্র হবে একথা ঋষিরা বলেছেন। মৃগ-ঋষির শাপে আমার আর পুত্র উৎপাদন সম্ভব নয়-এখন কুন্তী চিন্তা করে দেখুন কি উপায় করা যায়। তবেই পিতৃঋণ মুক্ত হওয়া সম্ভব। এছাড়া পূর্বে শাস্ত্রে এমন ঘটনা অনেক আছে। নিজ সন্তান উৎপাদন করলে ভালই, না হলে কোন জন তাতে সাহায্য করতে পারেন। মূল্য দিয়েও পোষ্য পুত্র নেওয়া সম্ভব। আবার পুত্রহীনকে কেউ কন্যা দান করে তার পুত্রের মাধ্যমেও পুত্রবান হওয়া যায়। অথবা স্বামীর আজ্ঞা নিয়ে কেউ নিজের সদৃশ বা উচ্চস্থানে অবস্থিত ব্যক্তির সাহায্যে পুত্রবান হয়। পূর্বে ব্রহ্মার বচনে এমন হয়েছে। সেই মতে রাজা আজ্ঞা করছেন কুন্তী তার বংশের রক্ষা করুন।

কুন্তী একথায় ক্রুদ্ধ হলেন, এমন কুৎসিত বাক্য বলার জন্য ধিক্কার জানালেন। তিনি ধর্মপত্নী, তিনি রাজন ছাড়া আর কাউকে এ নয়নে রাখতে পারেন না। তাছাড়া শ্রেষ্ঠের মাধ্যমে পুত্র উৎপাদন হলেও পৃথিবীতে পান্ডুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ তার কাছে কেউ নেই।

পূর্বে শোনা গেছে মুনিরা বলেছেন- পৌরব-নন্দন ব্যুষিতাশ্ব নামে এক রাজা ছিলেন। রাজা ধর্মে তৎপর, যজ্ঞ করে দেবতাদের তুষ্ট করলেন। তার দক্ষিণায় মত্ত হল ব্রাহ্মণরা। বাহুবলে রাজা সব কিছু জিতলেন। রাজার পরমা সুন্দরী ভার্য্যা ছিলেন-ভদ্রা। রাজাকে রাণী বহু সেবা করেন সন্তান কামনা করে। কিন্তু কামুক রাজা সঙ্গমে ব্যাধিযুক্ত হন এবং যক্ষারোগে তার মৃত্যু হয়।

ভদ্রা শোকে মুহ্যমান হন। স্বামী ছাড়া স্ত্রীর প্রাণের কোন মূল্য নেই। ঘর শ্মশান, সকলের গঞ্জনা এবং বিবিধ যন্ত্রণা পেতে হয়। লোকে অনাদর করে। মানুষের মধ্যে স্বামী-সন্তানহীনা নারীকে গনণা করা হয় না- এসব বলতে বলতে ভদ্রা উচ্চস্বরে বিলাপ করতে থাকেন।

এসময় শব তাকে ডেকে বলেন- ভদ্রা তুমি কেঁদনা। আমার মাধ্যমেই তোমার সন্তান উৎপাদন হবে। শবের বচনে ভদ্রা আস্বস্থ হলেন এবং গৃহে বহু যত্নে শবকে রাখলেন। ঋতুযোগে ভদ্রা শবের সাথে সঙ্গম করলেন। এভাবে তিনি সাতটি সন্তান গর্ভে ধারণ করেন। শব স্বামীর মাধ্যমে ভদ্রা এভাবে সন্তানের জন্ম দেন। মুনিরা যেহেতু বলেছেন, রাজাও সে ভাবেই কুন্তীকে সন্তান দান করবেন –এই কুন্তীর ইচ্ছা।

পান্ডু বলেন- মানুষের পক্ষে এরূপ অসম্ভব। দৈববলে শব থেকে সন্তানের উদ্ভব- কিন্তু তার এমন শক্তি নেই।

এবার পান্ডু বলেন- বহু পূর্বে বর্তমান নিয়ম ছিল না। যার যখন যাকে ইচ্ছে তার সাথে মিলিত হতে পারত। ব্রহ্মার নিয়মে স্ত্রীরা ইচ্ছে মত যার কাছে মন চাইত যেতে পারত। কিন্তু নিয়ম করলেন এক ঋষিপুত্র, তার কথা রাজা শোনালেন।


উদ্দালক নামে এক মহাতপোধন ছিলেন। শ্বেতকেতু নামে তার এক পুত্র ছিল। পিতা ও মাতার সাথে পুত্র খেলছিল। সে সময় এক মুনি সেখানে আসেন। কামাতুর মুনি তার মাকে কামনা করেন। স্বামী পুত্রকে কোলে করে অন্যস্থানে চলে যান।

বিস্ময়ের সাথে শিশু পিতার মুখপানে চান এবং ক্রুদ্ধ হয়ে জিজ্ঞাসা করেন এই দুরাচার কে এবং তার জননীকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে।

শুনে পিতা পুত্রকে শান্ত হতে বলেন। পুরাণে নির্দেশ আছে যার যাকে ইচ্ছে শৃঙ্গারে আমন্ত্রণ করতে পারে-এতে কোন দোষ নেই।

শুনে পুত্র আরো ক্রুদ্ধ হলেন। এমন কুৎসিত নিয়ম সৃষ্টির জেনে প্রজাপতির উপর কুপিত হলেন।


তখন তিনি নিয়ম করলেন, পিতাকে বললেন –আজ আমি পরম তপস্বী নিয়ম করছি, নিজ নিজ স্বামী ও স্ত্রী ত্যাগ করে যে জন পর নারী ও পর স্বামীর প্রতি গমন করবে সংসারে সে সকল পাপের পাপী হবে এবং নরক থেকে সে কখনও পার পাবে না। স্ত্রী হয়ে যে স্বামীর বচন না শুনে, স্বামীর বংশ রক্ষা না করে, অবজ্ঞায় স্বামী কার্য্যে অনাদর করে তবে সে নারী চিরকাল নরকে মজবে।
এইভাবে মুনিপুত্র নিয়ম সৃষ্টি করলেন। ফলে পূর্বের মত পরিবর্তিত হল।

রাজা আরো পূর্বকথা কুন্তীকে শোনালেন- সূর্যবংশে ছিলেন সৌদাস রাজন। তার মদয়ন্তী নামে রাণী ছিলেন পরমা সুন্দরী। কিন্তু দুজনে সন্তান বিরহে সর্বদা দুখী থাকতেন। রাজা বশিষ্ট মুনির সেবায় রাণীকে নিযুক্ত করেন এবং মুনির ঔরসে তার শ্রেষ্ঠ পুত্র হয়।

রাজা আরো জানালেন তাদের উৎপত্তিও ব্যাসমুনির সাহায্যে, পিতার মৃত্যুর পর হয়েছে। বংশের কারণে এমন পূর্বে অনেকবার হয়েছে। এতে রাণীকে বিস্মিত হতে বারণ করলেন।

সেই কারণে রাজা আজ রাণীর কাছে প্রার্থণা করছেন তার সন্তান উৎপাদন যেহেতু সম্ভব নয়, কুন্তী আজ নিজেই এর উপায় স্থির করুন।

রাজার কাতরবাক্য শুনে কুন্তীভোজের কন্যা তার পূর্বকথা পান্ডুকে বললেন। বাল্যকালে তিনি যখন অতিথি সেবায় নিযুক্ত ছিলেন তখন হঠাৎ দুর্বাসা মুনি উপস্থিত হলে তাকে সেবা করে সন্তুষ্ট করেন কুন্তী। তার সেবায় সদয় হয়ে মুনি তাকে এক মন্ত্র দান করেন। এই মন্ত্রবলে তিনি যে দেবতাকে আহ্বান জানাবেন, তিনিই উপস্থিত হবেন এবং যে বর চাইবেন তাই পাবেন। এই আশির্বাদ দিয়ে মুনি দেশান্তরে যান। এখন রাজা আজ্ঞা করলে কুন্তী দেবস্থানে পুত্র কামনা করতে পারেন। রাজাই বলেদিন কোন দেবতাকে তিনি আহ্বান জানাবেন।


পান্ডু রাজা সব শুনে সুখি হন এবং বলেন আর চিন্তার কোন কারণ নেই। হোম-যজ্ঞ-পূজা করেও যাদের বহু ক্লেশে পাওয়া যায় না, তাদের রাণী এত সহজে পেতে পারেন! রাণীর দেরি করা উচিত নয়।
দেবতাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ হলেন ধর্ম। সব পাপ মুক্ত হয় তার আশ্রয়ে। সেই ধর্ম দেবতাকেই রাণী আহ্বান জানান -এই তিনি চান।
ধর্মবন্ত, মহাবলবন্ত ও সর্বগুণাধার পুত্র হবে –এই ভেবে পান্ডু কুন্তীকে নির্দেশ দিলেন নিয়ম মেনে ধর্মকে স্মরণ কর।
তার ব্যাকুলতা দেখে কুন্তী স্বামীর নির্দেশ পালন করলেন।
স্বামীকে প্রদক্ষিণ করে নমস্কার করলেন।
.......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ৪৫
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×