somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৩৩

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[পূর্বকথা - পাণ্ডবরা রাজসূয় যজ্ঞ করে পিতাকে রাজা হরিশচন্দ্রের মত ইন্দ্রের স্বর্গে স্থান করে দিতে চায় ......অর্জুন, ভীম নকুল ও সহদেব সে কারণে দ্বিগ্বিজয় যাত্রা করেন......চারদিকে ধন্য ধন্য ধ্বনি উচ্চারিত হয় ......যুধিষ্ঠিরের ভাইরা, মন্ত্রী, সুহৃদ বন্ধুরা সকলে এবার যজ্ঞ শুরুর অনুরোধ করলেন......যুধিষ্ঠির কৃষ্ণের অপেক্ষা করেন ....কৃষ্ণ অনুমতি দিলে যজ্ঞের আয়োজন হয় ....... ]


রাজসূয়-যজ্ঞ প্রসঙ্গঃ

কৃষ্ণের অনুমতি পেয়ে রাজা যুধিষ্ঠির হৃষ্ট মনে সহদেবকে ডেকে আজ্ঞা করে বলেন –রাজপুরোহিত ধৌম্যের কাছ থেকে জেনে এস রাজসূয় যজ্ঞে কি কি দ্রব্যের প্রয়োজন। সেই মত দ্রব্য সামগ্রী দ্বিগুণ পরিমাণ সংগ্রহ কর। পৃথিবীতে যত রাজা আছেন সকলকে সসৈন্য আমন্ত্রণ জানাতে হবে।
এছাড়া দ্বিজ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র-সকল জাতির মানুষের কাছে আমন্ত্রণের জন্য দ্রুত দূত পাঠানোর ব্যবস্থা কর।
ইন্দ্রসেন(যুধিষ্ঠিরের সারথি), বিশোক(ভীমের সারথি) ও অর্জুন সারথিকে ভক্ষ্য বস্তু সংগ্রহের জন্য নিযুক্ত কর।
ব্রাহ্মণদের প্রিয়কার্য সম্পূর্ণ করার জন্য ভাল ভাল বস্তু কাতারে কাতারে আনার ব্যবস্থা কর।
চর্ব্য, চুষ্য, লেহ্য, পেয়-বহুতর ব্যবস্থা কর। রসে, গন্ধে যেন সকল কিছু মনোহারি হয়।
যখন যে যা চাইবে সঙ্গে সঙ্গে তা যেন পান, তার ব্যবস্থা রেখ। এর জন্য স্থানে স্থানে প্রচুর কর্মচারী নিয়োগ কর।
দ্বিজদের নিমন্ত্রণের জন্য সত্যবতীসুত ব্যাসদেবকে রাজ্যে রাজ্যে নিজ দূত প্রেরণের অনুরোধ কর।

এভাবে সহদেবকে যুধিষ্ঠির নির্দেশ দিলেন।

তারপর পুনরায় কৃষ্ণের কাছে গিয়ে অনুরোধ করে বলেন –হে নারায়ণ! আপনি আজ্ঞা দিন কাদের কাদের নিমন্ত্রণ করা হবে।

শ্রীকৃষ্ণ বলেন –মহারাজা হরিশচন্দ্র যেমন রাজসূয় যজ্ঞ করেন, তেমন ব্যবস্থা করতে হবে। তার যজ্ঞে পৃথিবীর সকল রাজারা আসেন। আপনিও ত্রিভুবনের সকল লোকদের নিমন্ত্রণের ব্যবস্থা করুন।
ইন্দ্র, যম, বরুণ, কুবের আদি সকল দেবসুর যারা সুরপুরে আছেন তাদের, পাতালে নাগরাজ শেষ বিষধরকেও নিমন্ত্রণ করতে হবে। পৃথিবীর প্রতি রাজরাজেশ্বর যেন আমন্ত্রণ পান।

যুধিষ্ঠির বলেন – হে প্রভু! কোন দূত কোথায় নিমন্ত্রণ করতে যাবেন সেটিও স্থির করে দিন। স্বর্গে দেবতাদের নিমন্ত্রণ করতে যাওয়ার ক্ষমতা সকলের তো নেই!

কৃষ্ণ বলেন –দেবতাদের নিমন্ত্রণের ক্ষমতা কেবল মহারথী পার্থের আছে, সেখানে তিনিই যাবেন। অগ্নিদেবের উপহার দেওয়া কপিধ্বজ রথ যেটি চারটি শ্বেত অশ্বের দ্বারা চালিত সেই রথের অগম্য স্থান ত্রিভুবনে নেই। সে রথ একদিনেই তিনলোক ভ্রমণ করতে পারে। সেই রথে চড়ে পার্থ উত্তর দিকে গিয়ে সকলকে নিমন্ত্রণ করুন।
উত্তরের পর্বতের গভীর কাননে যে রাজারা থাকেন সেখানে মনুষের কি ক্ষমতা পক্ষীরাও প্রবেশ করতে পারে না সেখানে গিয়েও তিনি নিমন্ত্রণ করবেন।
তারপর কৈলাস পর্বতে যেখানে বৈশ্রবণ(বিশ্রবামুনির পুত্র) কুবের থাকেন সেখানে তাকে নিমন্ত্রণ করে তার কাছে মনুষ্য অগম্য স্বর্গে যাওয়ার পথ নির্দেশ নেবেন।
ইন্দ্রসহ ইন্দ্রপুরে যত দেবতারা, দেব-ঋষি, ব্রহ্ম-ঋষি বসেন সকলকে নিমন্ত্রণ করবেন।
তারপর বরুণের পুরী গিয়ে সকলকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে মৃত্যুর অধিকারী যমপুরী যাবেন। সেখানে গিয়ে নিমন্ত্রণ জানালে তবেই ধর্ম এই যজ্ঞে অংশগ্রহণ করবেন।
আর আখন্ডল ইন্দ্র অর্জুনকে স্নেহ করেন। তিনি আমন্ত্রণ পেলেই খুশি মনে যজ্ঞ স্থানে উপস্থিত হবেন। আর ইন্দ্র একবার এলেই সকল এখানে আসবেন।
এভাবে দেবতা, গন্ধর্ব, দৈত্য, সিদ্ধ, সাধ্য ঋষি, পর্বত, সমুদ্র, অন্তরীক্ষবাসীরা সকলে উপস্থিত হবেন।
যেখানে যার সাথে দেখা হবে তাকেই সাদর আমন্ত্রণ যানাতে ভুলবেন না।
লঙ্কায় গিয়ে বিশেষ ভাবে বিভীষণকে বরণ করতে হবে। এই রাক্ষসরাজ পরম বৈষ্ণব। ইনি ধার্মিক, সুমতি ও আমার অনুরক্ত, পরমভক্ত। তিনি যদিও দূতের মাধ্যমে সংবাদ পেলেও উপস্থিত হবেন আমি জানি। তবু তাকে নিজে গিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসতে হবে। তিনি রাক্ষসদের মধ্যে ইন্দ্রের সমান। এভাবে সবাইকে নিমন্ত্রণ করুন।
তবে যে সব দুষ্ট নৃপরা নিমন্ত্রণ পেয়েও আসতে চাইবে না, তাদের বেঁধে আনার নির্দেশ দেবেন।
উত্তরে যেমন পার্থ যাবেন তেমনি আরো বাকি তিনদিকেও দূত পাঠান হোক। সকল মহীপালদের কাছে আমন্ত্রণবার্তা পৌছতে হবে।

দেব দামোদরের আজ্ঞা পেয়ে রাজা দ্রুত দূতদের ডেকে তাদের হাতে রাজাদের উদ্দেশ্যে যজ্ঞের বিবরণ লিখে নিমন্ত্রণ জানালেন। এমনকি সে সকল দেশের দ্বিজ, ক্ষত্র, বৈশ্য, শূদ্র যত আছে তাদেরও আসার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। সকলে নিজেদের রাজ্য থেকে এসে এই রাজসূয় যজ্ঞস্থলে উৎসব দেখবে-এই রাজার মনের ইচ্ছা।
তিনলোকে দূত পাঠিয়ে উত্তরে ইন্দ্রসুত অর্জুন নিজে যাত্রা করলেন।

মহাভারতের কথা অমৃত সমান, কাশীরাম দাস কহেন, শুনেন পুণ্যবান।
......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
.....................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৩২ Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×