somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্বিতীয় পৃথিবীর সন্ধানে

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বিতীয় পৃথিবীর সন্ধানে

দিনটি ছিল ২০ জুলাই ২০১২। ৪৩ বছর আগে এরকম দিনেই কী ঘটেছিল, জানা তো সবারই। মানুষ প্রথম পা রেখেছিল পৃথিবীর বাইরে ভিন কোনো মাটিতে। চাঁদে। মহাকাশচর্চার ঐতিহাসিক এমন দিনে বসেছিল এক আলোচনার আসর। ডিসকাশন প্রজেক্টের ২৫১তম ডিসকাশন, তবে গ্রুপ ডিসকাশন। ধানম-ি ১৯-এ ডিসকাশন প্রজেক্টের বর্তমান ঠিকানায়। দ্বিতীয় পৃথিবীর সন্ধানে; এই নিয়ে ছিল ডিসকাশন প্রজেক্টের এ আসরের বিজ্ঞান-আলোচনা। মানে, হচ্ছে ভিন কোনো গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা? কেন ওদের খোঁজ করব আমরা (পাছে ভয় তো আছেই, যদি এসে আমাদের ওরা ধ্বংস করে যায়!)_ এমন দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই দুই ঘণ্টা ধরে আলোচনা করেছেন আসিফ। বক্তৃতার বিশেষ অংশে ছিল দরকারি সস্নাইড শো এবং গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও প্রদর্শনী। ৩০ টাকা দর্শনী দিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু আসিফের এ বক্তৃতার ধরন ছিল ভিন্ন ধারার। দৃষ্টিভঙ্গি ছিল দার্শনিক। উপস্থাপনা ছিল নাটকীয় ও উপভোগ্য। কিন্তু তার বক্তৃতার বাক্য বেড়েছে বলা চলে, কিছুটা কৌশল গায়ে মেখে। কেমন? ধরুন, আলোচনা ছিল পৃথিবীর বাইরে প্রাণের সম্ভাবনা নিয়ে। কিন্তু শুরুটা হয়েছে মানব সভ্যতার ইতিহাস দিয়ে। অবশ্য শুরুটা করেন ডিসকাশন প্রজেক্টের আর এক বিজ্ঞানকর্মী খালেদা ইয়াসমিন ইতি। এরপরই আসিফের নাটকীয় উপস্থাপনা। বিজ্ঞানমনস্ক শ্রোতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপলব্ধি করেন। পুরো অনুষ্ঠানটিকে সুসম্পন্ন হওয়ার জন্য বিজ্ঞানকর্মী জাহাঙ্গীর সুর করেছেন। উল্লেখ্য ডিসকাশন প্রজেক্ট দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এ ধরনের বিজ্ঞান বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে। পৃথিবীতে জীবনের বিবর্তন নিয়ে আলোচনার শুরু, এরপর বিবর্তনের ইতিহাসে আমাদের অবস্থান, মানবসভ্যতার ইতিহাস। আমরা নিজেদের গঠন ও অবস্থান সম্পর্কে ঠিকঠাক না জানলে অন্যদের কী করে জানব ও বুঝব? এরপর আসিফ কার্ল সাগানের কসমিক ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, মহাবিশ্বের সৃষ্টি থেকে এখন পর্যন্ত সময়কে যদি পার্থিব এক বছরের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে মানুষের জন্ম ৩১ ডিসেম্বর রাত ১০টা ৩১ মিনিটে। আর যদি বলা হয়, মানুষের লিখিত ইতিহাস কত দিনের? তবে তা মাত্র ১০ সেকেন্ড আগের! দ্বিতীয় পৃথিবীর সন্ধানে মানুষের যে প্রচেষ্টা তা একদিন সফল হবেই। ইতোমধ্যে সাড়ে ৫০০ ভিন গ্রহ আবিষ্কৃৃত হয়েছে। আসিফ মনে করেন, লাখখানেক গ্রহ আবিষ্কার হলে আমরা 'নিশ্চিত' তেমন কোনো প্রাণ অধ্যুষিত পৃথিবীও পেয়ে যাব। আর ১০ বছরের মধ্যেই অন্তত মঙ্গল গ্রহে অণুজীবের সম্ভাব্য জীবন ধারণ নিয়ে আমরা সুনিশ্চিত হতে পারব_ মন্তব্য করেন বক্তা আসিফ। ভয়েজার, পাইওনিয়ার, কেপলার_এ রকম অনেক মহাকাশযান ভিনগ্রহের সন্ধানে সৌরজগতের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে ইতোমধ্যে। বেতার বার্তা পাঠিয়েছে মানুষ। যদি ওরা থেকে থাকে, আর সঙ্কেত পাঠোদ্ধার করতে পারে আর যদি ফিরতি বার্তা ওরা পাঠায় তবে সেও হবে অনেক দীর্ঘ সময়ের এক হিসাব। কিন্তু ওরা যদি হয় মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান প্রাণী। হতেই পারে, এ ব্যাপারে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন ফ্রাঙ্ক ড্রেকের সমীকরণের। তিনি এ সমীকরণের মাধ্যমে দেখিয়েছেন আমরা ছাড়াও ১ কোটি প্রাযুক্তিক সভ্যতা থাকতে পারে এ গ্যালাক্সিতে। আর আমাদের অবস্থান? তাও দেখিয়েছেন নিকোলাই কারডাশেভের সভ্যতার শ্রেণী বিভাগের মাধ্যমে। সেখানে আমাদের অবস্থান টাইপ১ ও টাইপ২-এর মাঝামাঝি। প্রাযুক্তিকভাবে ওরা যদি হয় আরো বেশি উন্নত, টাইপ৩-এর মত বা এর কাছাকাছি হয়, তাহলে? আসিফ মজা করে বললেন, 'আমরা যেমন ব্যাকটেরিয়া কালচার করার সময় ভাবি, থাক ওদের বিরক্ত করব না। ঠিক তেমনি হয়তো ভিনগ্রহের বুদ্ধিজীবীরাও আমাদের ওরকম চোখেই দেখছে। মানুষ যা করছে করুক, ওরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে!' যেন ওরা করছে হিউম্যান কালচার! আমরা কি পারব সভ্যতাকে আন্তঃণাক্ষত্রিক সভ্যতায় নিয়ে যেতে? পারব কি সে পর্যন্ত আমাদের এ সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে? এসব প্রশ্নের উত্তর এসেছে প্রশ্ন উত্তর পর্বে। আমাদের এ সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রথমেই যা করতে হবে তা হলো, শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে। বিদ্যালয়গুলোয় দিতে হবে সাংস্কৃতিকমুখী শিক্ষা। মানবতা ও মানবিকতাই পারে এ সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে। আর মানবতাই হওয়া উচিত শিক্ষার্জনের মূল লক্ষ। সব প্রশ্নোত্তরের পর শ্রোতাদের আরো উৎসাহী মনে হলো। তারা পরের আলোচনায় অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাদের পরবর্তী ওপেন ডিসকাশনের বিষয় হিগস কণা বা ঈশ্বর কণা যা সার্নের লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারে সম্প্রতি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে।

২০ জুলাই ২০১২
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×