গাংনী পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা তিনি। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যাংক কর্মকর্তা—মার খাওয়ার তালিকা থেকে বাদ নেই কেউ
তিনি জনপ্রতিনিধি। তাই জনগণের ভালোমন্দ দেখার ভার নিজের মতো করে কাঁধে তুলে নিয়েছেন। কেউ কথা না শুনলে, কথামতো কাজ না করলে লাঠিপেটা করেন। সঙ্গে চড়-থাপড় তো আছেই। তিনি নিজে মারেন, সাঙ্গপাঙ্গরাও মারেন। সাধারণ নাগরিক, সরকারি চাকুরে, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যাংক কর্মকর্তা—কেউই বাদ নেই মার খাওয়ার তালিকা থেকে।
এই জনপ্রতিনিধির নাম আহম্মদ আলী। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এবং পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র তিনি।
মারেন কেন? জবাবে মেয়র আহম্মদ আলী বলেন, ‘আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। সব ধরনের অনিয়ম-অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি। খারাপ কিছু দেখলেই প্রতিবাদ করি। এটাই আমার কাজ। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। এটা আমি করেই যাব। যা হবে হোক।’
মেহেরপুরের সন্ত্রাসকবলিত এলাকা গাংনী। বোমাবাজি, টেন্ডারবাজি, রাজনৈতিক হামলা, অস্ত্রের প্রকাশ্য মহড়া সেখানকার নিত্যদিনের ঘটনা। এক সময় সন্ধ্যা নামলে জনমানবশূন্য হয়ে পড়ত গাংনীর পথঘাট। এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে নতুন আতঙ্ক পৌর মেয়র নিজেই। তাঁর চোখে কেউ কিছু অনিয়ম করলে, অবাধ্য হলে, কারও কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে তিনি মামলা করেন না। করেন গালিগালাজ ও মারধর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেয়রের হাতে সর্বশেষ মার খেয়েছেন কৃষি ব্যাংকের গাংনী উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপক ইমারত হোসেন। মেয়রের সুপারিশ সত্ত্বেও মটমুড়া গ্রামের এক যুবককে ৬০ হাজার টাকা কৃষিঋণ দিতে না চাওয়া তাঁর অপরাধ। এ অপরাধে গত ২৮ জুলাই ব্যাংকে ঢুকে ব্যবস্থাপককে মারধর করেন মেয়র।
জানতে চাইলে ব্যবস্থাপক ইমারত আলী বলেন, মেয়রের সুপারিশ করা আবেদনে জমির যে দাগ ও খতিয়ানের উল্লেখ ছিল, তা আবেদনকারীর জমি নয়। এ কারণে ঋণ দিতে আপত্তি করা হয়। তিনি জানান, শুধু ব্যাংকের ভেতরেই নয়, মেয়র তাঁকে গাড়িতে তুলে নিজের কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানেও তাঁকে নির্যাতন করেন। খবর পেয়ে গাংনী থানার একজন কর্মকর্তা এসে তাঁকে মেয়রের কার্যালয় থেকে বের করে আনেন। এ ঘটনার পর তিনি ব্যাংকে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এর পর থেকে ওই ব্যাংকে কৃষিঋণ বিতরণ কার্যক্রমও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তবে ব্যাংক কর্মকর্তাকে মারধরের ব্যাপারে মেয়র বলেন, ওই কর্মকর্তা ঘুষ ছাড়া ঋণ দিচ্ছিলেন না। এ অভিযোগে জনগণই তাঁকে মেরেছে।
গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আবদুস সালাম তিন মাস আগের একটি ঘটনা জানান। বলেন, রোগী দেখছেন না, এমন অভিযোগ পেয়ে মেয়র তাঁর দলবল নিয়ে হাসপাতালে আসেন। এরপর তাঁকে ও এক নার্সকে মারধর করেন। এর প্রতিবাদে চিকিৎসকেরা মানববন্ধন করেন। থানায় অভিযোগও করা হয়। কিন্তু কিছুই হয়নি।
জানতে চাইলে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা এসআই গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, লোকমুখে তাঁরা এমন মারধরের অনেক খবর পান। কিন্তু কেউ এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি জানান, ব্যাংক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু উদ্ধার করে আনার পরও তিনি অভিযোগ করতে রাজি হননি। আসলে কেউই অভিযোগ করেন না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছর কাজ শেষ হওয়ার আগেই ঠিকাদারের বিল করতে বলেছিলেন মেয়র। সেই বিলে সই না করার অপরাধে পৌরসভার প্রকৌশলী কাওসার আলীকে মারধর করেন মেয়র। প্রকৌশলী জানান, মেয়র অফিস কক্ষের জানালা-দরজা বন্ধ করে তাঁকে লাঠি দিয়ে পেটান। মারধর খেয়ে তিনি এ কর্মস্থল ছেড়ে চলে যান। এখন তিনি ফরিদপুরে কর্মরত আছেন।
পৌরসভার একজন কর্মকর্তা জানান, আরেক প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন চাকরি নিয়ে গাংনী পৌরসভায় যোগ দেওয়ার পর মেয়রের হাতে লাঞ্ছিত হন। ওই প্রকৌশলী জানান, ঠিকাদারদের অবৈধ সুবিধা দিতে না চাওয়ার কারণে মেয়র তাঁকে পেটান।
জানা যায়, মেয়রের হাতে মার খেয়েছেন পৌরসভার ক্যাশিয়ার আবুল কালাম আজাদ, ওয়ার্ক অ্যাসিসট্যান্ট নাসির উদ্দিন, টিকাদানকারী আবু তাহের। জানতে চাইলে তাহের বলেন, ‘মারধরের বিবরণ দিয়ে আবার মেয়রের হাতে মার খেতে চাই না।’
এলাকাবাসী জানান, পছন্দের ব্যক্তির এক সন্তানকে স্কুলে ভর্তি না করায় গাংনী সিএসএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল হেলালকেও মারধর করেন মেয়র। তবে স্কুলের কোনো শিক্ষক এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
গাংনী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় মেয়র বিদ্যুতের কার্যালয়ে তাঁদের এক সহকর্মীকে মারধর করেন। ওই কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎ দিতে না পারায় এবং টেলিফোন ধরতে দেরি হওয়ায় মেয়র বিদ্যুতের কার্যালয়ে ঢুকে টেলিফোন, আসবাব আছড়ে ফেলেন। এরপর নুরুল ইসলাম নামের এক লাইনম্যানকে মারধর করেন। এ পর্যন্ত তাঁদের পাঁচ কর্মী মেয়রের মারধরের শিকার হয়েছেন বলে তিনি জানান।
জানা যায়, মেয়রের পক্ষে ভোট না করায় এক সালিসে গাংনীর মালসাদাহ গ্রামের গোলাম হোসেনকে মারধর করেন মেয়র। আবার তাঁর কথা না শোনার কারণে গাংনী মহিলা কলেজের আয়া রেহেনা খাতুনকে তিনি মারধর করেন। রেহেনা খাতুন জানান, এ ব্যাপারে মেয়রকে অভিযুক্ত করে তিনি আদালতে মামলা করেছিলেন। পরে মেয়র তাঁকে বুঝিয়ে মামলাটি উঠিয়ে নেন।
পৌর সালিসে মেয়রের সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করার অভিযোগে চৌগাছা গ্রামের খোকনের স্ত্রী সরু মালা, চৌগাছা পশ্চিমপাড়ার বিউটি, বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আবদুল হান্নান, আজিজুল হক এবং চিৎলা গ্রামের কাওসার আলী মার খেয়েছেন।
গাংনী এলাকায় দুই দিন ধরে সরেজমিন তথ্য অনুসন্ধানের সময় অন্তত ১৫ জন মেয়রের হাতে মার খাওয়ার কথা প্রথম আলোকে জানান। তাঁরা জানান, মেয়রের সঙ্গে সব সময় কিছু চিহ্নিত যুবক থাকে। এরাই মেয়রকে উসকে দেয়।
মেয়রের এমন আচরণ নিয়ে বিরক্ত সরকারি দলের নেতারাও। গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, মেয়র নিজেকে লৌহমানব বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন।
গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, মেয়রের এ ধরনের আচরণ দলের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক বলেন, মেয়রের হাতে এভাবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিরীহ নাগরিকদের মার খাওয়ার ঘটনা নিন্দনীয়। মেয়রের রাজনীতি পেশিনির্ভর হয়ে পড়ায় তাঁর হাতে রাজনীতিও জিম্মি হয়ে পড়েছে।
সূত্র জানায়, এর আগে চরমপন্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে মেয়র আহম্মদ আলী পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর হাতে কয়েকবার আটক হয়ে দীর্ঘ কারাভোগ করেন। এলাকায় তিনি সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন—এমন অভিযোগও আছে।
তবে মেয়রের মারপিটের নীতিকে সমর্থন করেন গাংনীর সাবেক সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন। তাঁর মন্তব্য, ‘এ দেশের আইনিব্যবস্থা সব অন্যায়ের তাৎক্ষণিক সাজা দিতে পারে না। তাই মেয়রের এমন আচরণ দুর্নীতি ও অনিয়মমুক্ত গাংনী গড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।’
সূত্রঃ প্রথম আলো
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার
এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।
আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন
কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই
দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।
সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন
রম্য : মদ্যপান !
প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=
এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।
বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন
Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই
শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন