থাবা বাবা মারা গেল সেদিন। এর আগ পর্যন্ত তাকে চিনতাম না। মারা যাওয়ার পর তার ব্যাপারে বিভিন্ন লেখা পড়লাম, জানলাম। এরপর শুনলাম আমাদের প্রধান মন্ত্রী থাবা বাবা ওরফে রাজীব হায়দার শোভনের বাসায় গিয়ে বলে আসলেন, জামাত-শিবিরের রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। বলা বাহুল্য থাবা বাবা হত্যাকাণ্ড জনিত কোন রহস্যের এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা হয় নি। উনি এতো দ্রুত কিভাবে জানতে পারলেন জামাত-শিবিরই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা বোধগম্য নয়। প্রধান মন্ত্রীর কাছে দৈববানী পৌঁছায় নাকি কে জানে!! এরপর আবার শুরু হল থাবা বাবার নাস্তিকতা বিষয়ক লেখাগুলোর প্রচার। এতে থাবা বাবা সাধারণ জনগণের সহানুভূতি হারাল। এরপর আবার বলা হল ঐ লেখাগুলো তার নয়, ওগুলো তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। এখন অবশ্য অন্য সব তদন্তের মতই থাবা বাবা হত্যাকাণ্ডও মাটি চাপা পড়ে আছে। যাই হোক, এবার বিশ্বজিতের ঘটনা নিয়ে কিছু বলি। তার হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ সবগুলো টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছিল, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ও ব্লগগুলোতেও প্রচারিত হয়েছিল, সুতরাং কারো নজর এড়িয়ে যাওয়ার মত বিষয় নয়। সেখানে আমরা চাক্ষুষ দেখেছিলাম, ছাত্রলীগ কর্মীরা কিভাবে বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এরপর শুরু হল বিশ্বজিতের ব্যাপারে অপপ্রচার, বিশ্বজিতের কোন ভাই নাকি ছাত্র শিবির করে, বিশ্বজিতের হত্যাকারীরা নাকি আওয়ামী ব্যানারে ছাত্রশিবির, বিশ্বজিতের হত্যাকারীরা নাকি ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত কর্মী, বিশ্বজিতের শরীরে নাকি কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাতেও লাভ হয়নি, সাধারণ জনগণ জানে বিশ্বজিতের খুনি কারা। প্রধান মন্ত্রীর কি উচিৎ ছিল না সেদিন বিশ্বজিৎএর বাসায় গিয়ে একথা বলা, ছাত্রলীগের রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। কেন উনি বললেন না? আওয়ামী ব্যানারে সব বৈধ!!
এবার হয়তো কিছু লোক বলবে, থাবা বাবার প্রতি আমার কোন সহানুভূতি নেই, সব সহানুভূতি বিশ্বজিতের জন্য। আমি বলব, মোটেই না, বিশ্বজিতের প্রতিও আমার বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই। কারন এদেশে সহানুভূতির কোন দাম নেই, সহানুভূতি দেখিয়ে কোন লাভ নেই। অবশ্য মূল কারন আরেকটি, সেটা হচ্ছে বিশ্বজিতের শেষ কথা। আপনারা জানেন বিশ্বজিৎ মারা যাওয়ার পূর্বক্ষণে কি বলছিল। “আমি হিন্দু, আমাকে মাইরেন না”, ভুলে গিয়ে থাকলে আবার দেখুন। আশা করি খুব একটা কঠিন হবে না ভিডিও ফুটেজটি খুঁজে পেতে। বীজগনিতের ভাষায় বিশ্বজিতের কথাটি যদি লেফট হ্যান্ড সাইড ও রাইট হ্যান্ড সাইড বের করি, তাহলে কি দাঁড়ায় এর অর্থ? আমি হিন্দু, আমারে মাইরেন না = ওরা হিন্দু না, ওদের মারেন। যাই হোক, বেচারা মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মাথা খাটিয়ে কিছু বলার মত অবস্থা ছিল না। কিন্তু তারপরও একথার মানে আমার কাছে অনৈতিক মনে হয়েছে। বলা উচিৎ ছিল, আমি একজন সাধারণ মানুষ, রাজনীতি করি না, আমাকে মারবেন না।
মানবতার খাতিরে, একজন মানুষ হিসেবে এবং একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হবার কারনে আমি থাবা বাবা ওরফে রাজীব হায়দার এবং বিশ্বজিৎ সহ সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই, বিচারের নামে প্রহসন চাই না। নৈতিক ভাবে যে যেই পন্তায় বিশ্বাস করুক, মানবতার খাতিরে আমরা সবাই এক, এই বিশ্বাসে বিশ্বাস করতে চাই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




