হলিউডের ফিল্মগুলোতে রাশিয়ানরা টেরোরিস্ট, চাইনিজরা ড্রাগ ডিলার, এরাবিয়ানরা সুইসাইডাল বোম্বার, জার্মানরা নির্মম, জাপানিজরা আগে হারামি ছিল, এখন খুব ভাল, ব্রিটিশরা খাচ্চর, ইজরাইলের মানুষগুলা দুনিয়ার নিষ্পাপ, ফ্রেঞ্চরা কিডন্যাপার, ইটালিয়ানরা মাফিয়া, ইন্ডিয়ান বাদে সাউথ এশিয়ানদের গণায় ধরে না, কিন্তু অ্যামেরিকানরা এক্কেবারে ধোয়া তুলসী পাতা। তাদের কেউ খারাপ কিছু করতেই পারে না, যদি কেউ করে তাইলে যেভাবেই হোক প্রমান করতে হবে সে খাঁটি অ্যামেরিকান না, অন্য জাতের। যা এখন শুধু সিনেমাতেই না, ভিডিও গেমসেও ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা আসলে একধরনের আইওয়াশ, ছোটবেলা থেকেই ওদেরকে বোঝানো হয় পূর্বে উল্লেখিত ওরা খারাপ, ওদের ঘৃণা করতে হবে, আর শুধু অ্যামেরিকানরাই ভাল। কিন্তু অন্যদেশের সবাই কম বেশী জানে অ্যামেরিকানরা কি জিনিষ।
যাই হোক, মজার বিষয় হচ্ছে এই ধারণা এখন বাংলাদেশেও শুরু হয়ে গেছে দেখছি। আমার বন্ধু রাশেদ সিনেমাটি অনেকগুলো পুরুস্কার পেয়েছে এইবার, কেন পেয়েছে তা বুঝতে পারলাম ২৬শে মার্চে চ্যানেল আইতে কিছুক্ষণ দেখে। দেখলাম দাড়ি-টুপি পড়া মানুষগুলো খারাপ, মাদরাসার ছাত্ররা খারাপ, হুজুররা খারাপ, এতোটাই খারাপ যে ওরা মানুষের পর্যায়ে পড়ে না। তখন বুঝলাম পুরষ্কার দাতাদের চরিত্র কেমন হতে পারে। ভাল হয়েছে এক দিক দিয়ে, এতোদিনে নির্বিকার বাঙ্গালীর টনক নড়েছে কিছুটা। আমার প্রশ্ন একটাই, রাজাকার কি সবই দাড়ি-টুপি পড়া ছিল? লুঙ্গী গামছা পড়া রাজাকার ছিল না? সুট-টাই পড়া রাজাকার ছিল না? বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রাজাকার ছিল না? ঐ সময় কেউ যদি জোর করে ধর্মান্তরিত করিয়ে থাকে তাহলে তো তার উদ্দেশ্য অসৎ ছিল বলে মনে হয় না, বরং কাউকে বাঁচানোর স্বার্থেই ধর্মান্তরিত করানোর কথা। আবার জোর করে ধর্মান্তরিত করানো যেতে পারে, কিন্তু জোর করে কি ধর্ম পালন করানো যায়???
নাস্তিকতা বা ধর্ম নিরপেক্ষতা এক জিনিষ, কিন্তু ধর্ম বিরোধিতা আরেক জিনিষ। ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে ধর্ম বিরোধিতা করার মানে হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতার আন্দোলন করতে গিয়ে নিজেই সাম্প্রদায়িক হয়ে যাওয়া। ধর্ম পালন করা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার, কিন্তু কারো ধর্মকে বা কারো বিশ্বাসে আঘাত করা কখনই ব্যক্তিগত ব্যাপার হতে পারে না। কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য কখনই বাকস্বাধীনতার দ্বারা প্রকাশ করার অনুমতি পায় না। বাকস্বাধীনতা শালীনতা বজায় রেখে মন্তব্য করাকে অনুমতি দেয়, গালিগালাজকে নয়। আমাদের দেশে যাদেরকে বর্তমানে নাস্তিক বলা হচ্ছে, তারা আসলে নাস্তিক নয়। তাদেরকে নাস্তিক বলার কারনে মনে করি অন্যান্য সাধারণ ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষগুলো হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। নাস্তিকের কাজ ধর্ম পালন থেকে বিরত থাকা, ধর্মকে কটাক্ষ করা নয়। কিন্তু যাদের নিয়ে কথা উঠেছে তারা সাম্প্রদায়িক ইসলাম বিদ্বেষী। এরা অকথ্য ভাষায় ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে গালিগালাজ করেছে। তাই এদের বিচার হওয়া উচিৎ। সাথে সাথে এটাও বোঝানো উচিৎ যে ব্লগার মাত্রই ধর্ম বিরোধী নয়, ধর্মপ্রান ব্লগারও আছে অনেক।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সরকারের কি আসলেই এই মুহূর্তে ব্লগারদের ধরাটা এতোই গুরুত্বপূর্ণ ছিল? চিহ্নিত ব্লগাররা তো সেই প্রথম থেকেই সরকারের ছত্রছায়ায় বসবাস করছে। তাদেরকে গ্রেফতার করার ঘটনা তো এমন কিছুই না। নাকি আবার কোন ইস্যু তৈরি করতে চাচ্ছে সরকার। ওহ ইস্যু কিন্তু ইতিমধ্যে তৈরি হয়েও গেছে। শুক্রবার আর শনিবার হরতাল দিয়েছে তথাকথিত সুশীল সমাজ। সুরঞ্জিত বাবুর এতীমখানার জন্য বরাদ্দকৃত টাকা থেকে নিজের ভাগ বসানোর কেলেঙ্কারি নিয়ে কারো মনে কোন প্রশ্ন আসার আগেই সেটাকে আড়াল করে ফেলা হয়েছে ব্লগারদের গ্রেফতার করার মাধ্যমে। সাথে সাথে ৬ এপ্রিলের লংমার্চে একটু পানিও ফেলতে চাচ্ছে। এর আগেও একটা লেখায় লিখেছিলাম, প্রয়োজন ফুরালে ব্লগারদের কুরবানি দিতে কার্পণ্য করবে না সরকার। এখন তাই বাস্তবায়ন হতে দেখছি। ব্লগাররা এখন শুধুই বলীর পাঁঠা।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




