somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজাকারদের প্রতিকী গণঅনশন।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুপুরের দিকে ভার্সিটিতে যাই। শাহজালাল ইউনিভার্সিটি না। লিডিং ইউনিভার্সিটি। আজকে বন্ধের দিনে ভার্সিটিতে গিয়েছি এবং প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ করে ফিরেছি। রাজাকাররা দেখলাম ভার্সিটির সামনে সিলেটের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দাবী " আধ্যাত্মিক ( !!! ) বিশ্ববিদ্যালয়ে জাহানারা ইমামের মূর্তি ( !!! ) স্থাপন বন্ধ করতে হবে "

হারামজাদাদের ঘোষণা দিয়েছে তারা নাকি মূর্তি ভেঙ্গে ফেলবে।



এতে বক্তারা ( আসলে রাজাকার ) বলে " জাহানারা ইমাম একজন নারী হয়ে কেন তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে আন্দোলন করবেন। তিনি থাকবেন ঘরে। কালো পর্দার আড়ালে। কিন্তু না। তিনি থেকেছেন রাজ পথে। আর আজকে এই আমাদের আধ্যাত্মিক ( !!!) নগরী সিলেটে শাহজালালের নামের বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মূর্তি স্থাপন করা হচ্ছে। "



এখানে কয়েকজনের বক্তব্যের সার সংক্ষেপ দিয়ে দিলাম ঃ

১। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় এখন নাস্তিকদের হাতে চলে গেছে। এর পূর্বে আপনারা আন্দোলন করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরনের সময় এখন আবার সময় এসেছে আন্দোলনে নামার। জাহানারা ইমামের মূর্তি হতে পারে না।

২। আমরা ভিসির কাছে গিয়েছিলাম আমাদের প্রস্থাব নিয়ে তিনি আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমাদের আজকের এই গণঅনশনে আমরা আমন্ত্রন করেছিলাম সিলেটের মেয়র " কামরান " সাবকে। কিন্তু এখন গিয়ে উনার গাড়ি পেয়েছি কিন্তু উনাকে পাইনি। কিন্তু এই সিলেটের মুসলমান জাগ্রত। আপনারা মূর্তি তৈরি করতে দিবেন ??? নাআআআ ( সবাই উচ্চ স্বরে )।

৩। যদি মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মাণ করতেই হয় তবে এমন একটা ভাস্কর্য নির্মাণ করা হোক যেখানে দুটি কামান থাকবে। একটি থাকবে পাকিস্তানের দিকে অন্যটি থাকবে দিল্লির দিকে। কিন্তু এরা এরকম ভাস্কর্য নির্মাণ না করে তৈরি করছেন " জাহানারা ইমামের " মূর্তি।

৪। এই জাফর ইকবাল একজন নাস্তিক। শাহজালালের মাটিতে তার পা রাখার কোন অধিকার নেই। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূর্তি নির্মাণ করে, সে নারীদের সাথে নাচে, তার বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েরা বোরকা ছাড়া চলাচল করে। আমাদের আধ্যাত্মিক বিশ্ববিদ্যালয় আজ নাস্তিকদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। এখনি এদের উচ্ছেদ করে শাহাজালালের পূর্ণভূমিতে আধ্যাত্মিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৫। তারপরও যদি ভাস্কর্য বসানো হয় তবে আমরা সেটা ধ্বংস করে দেবো। কি ? ধ্বংস হবে ?? হাঁ হবে ( উচ্চস্বরে )

৬। এরা মূর্তি নির্মাণ করে আমাদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত করছে। লক্ষ মুসলিমের ধর্মীয় অনুভূতিতে তারা আঘাত করছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।



এছাড়া অনেকেই অনেক ভাবে উস্কানি দিয়ে গেছেন।

আজতারা গণঅনশনে নেমেছে। আগামীকাল তারা চাপাতি সংগ্রহ করবে পরশু তারা নেমে যাবে সিলেটকে আধ্যাত্মিক( !!! ) নগরী প্রতিষ্ঠা করার জন্য সিলেটের সকল মূর্তি ভাঙার জন্য।

*** হঠাৎ করে খেয়াল করলাম একটি মিছিল এগিয়ে আসছে। একজন কে জিজ্ঞেস করলাম ভাই এই মিছিল কি এই গণঅনশনের জন্য আসছে ??

সেই মানুষটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল। " এই রাজাকারদের অনশন না চুদাুিতে কেডা যাবে ?? এই গুলা রাজাকার। ালরা না বুঝেই রাস্তায় বসে যায়। এদের রাস্তায় গুলি করে মারা উচিত। ঠিক মতো কথা কইতেই জানে না আর হেরা বুঝবো মূর্তি আর ভাস্কর্যের মধ্যে পার্থক্য ?? "

আমি এই লোকটার কথা শুনে হতবাক। নেহাত সাধারণ একজন মানুষ। মাথায় টুপি পড়নে লঙ্গি। কিন্তু ঐ সব আবালদের মতো না। রাজাকারা যে পড়াশুনা জানে না সেটাও আজকে ভালো করে প্রমাণ হলো। এরা সবাই খাঁটি সিলেটী ভাষায় কথা বলছে।

পাশের হাসান মার্কেটে ঢুকতেই শুনলাম দুইটা প্যান্ট শাট পরা ভদ্র লোক কথা বলছেন " জাহানারা ইমাম হলো নাস্তিক। উনি যুদ্ধের সময় কি না কি করছিল সে জন্যই উনি বিখ্যাত। সিলেট হলো আধ্যাত্মিক নগরী। এখানে মূর্তি বসাতে পারবে না। "

তারপর উনাদের সাথে আমার একটু কথা হয়েছে। কথোপকথন নিম্নরূপ।

আমি ঃ ভাই, বাংলাদেশের শহীদ দিবস কবে ??
ভদ্রলোক ঃ আপনি কে ???
আমি ঃ না। আপনারা দেশের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলছেন তাই জিজ্ঞেস করলাম। দেশে যে রাজাকার আছে তাদের বিরুদ্ধে প্রথম কে আন্দোলন করেছে ??
ভদ্রলোক ঃ আমি কীভাবে জানবো।
আমি ঃ আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমাদের দেশের স্বাধীনতা দিবস কবে আর বিজয় দিবস করে। কে প্রথম স্বাধীনতার ডাক দিয়েছে ?
ভদ্রলোক ঃ আরে ভাই আমার সময় নাই। আমি যাই।
আমি ঃ খারান। তুই তাইলে রাজাকার। থু থু।

এই বলেই বাসার উদ্দেশের হাঁটা দিয়েছি।

এখন সময় মনে হয় চলে এসেছে ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে। তা না হলে ওরা গ্রিনিচ বুক অব ওয়ার্ল্ডে " বিশ্বের প্রথম আধ্যাত্মিক বিশ্ববিদ্যালয় __ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় " লিখে দেবে। আগামীকাল শাবিতে নারী শিক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে। তারপরদিন বন্ধ হয়ে যাবে সকল বিজ্ঞান শিক্ষা। তারপরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে তৈরি হবে নানা বোমা। কারণ সিলেটের সকল মূর্তি ভেঙ্গে ফেলতে হবে। তারপরদিন দেশের সকল মূর্তি ভেঙ্গে ফেলতে হবে। এভাবেই চলতে থাকবে আধ্যাত্মিক নগরী প্রতিষ্ঠা সাথে সাথে ইসলামের জয় জয়কার।

ওরা একটা কামান পাকির দিকে রাখতে চায়, আর আরেকটা কামান রাখতে চায় দিল্লির দিকে। আর আমি ওদের দিকে রাখতে চাই কামান। যাতে এক কামানের গোলায় ওরা উড়ে দিয়ে পাকিতে আর আফগানি পড়ে।

যদি শাহজালালের নামের বিশ্ববিদ্যালয়ে মূর্তি নির্মাণ হারাম হয় তবে আমি বলবো বিজ্ঞানের সাথে শাহজালালের কোন সম্পর্ক নেই। এখনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামটি অপসারণ করে " সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় " করা হোক। শাহজালাল তার গালিচায় ভেসে সুরমা পাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু বিজ্ঞান তা মানে না। বিজ্ঞানের সাথে শাহজালাল তাহলে সংঘর্ষিত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নামের সাথে শাহজালালের নাম থাকতে পারে না। __ একজন লেখকের উক্তি।

প্রয়োজন হলে আমরা আগামীকাল থেকেই নেমে যাবো ভাস্কর্য তৈরি করতে। আমাদের ঘামে তৈরি হবে ভাস্কর্য। প্রতিটি ইটের গাঁথুনিতে থাকবে আমাদের হাতের ছাপ। ভাস্কর্য হবেই।

প্রয়োজন হলে আগামীকাল থেকেই আমরা সিলেটবাসিকে বুঝাতে নেমে যাবো। গণ স্বাক্ষর অভিযানে নেমে যাবো। এই সিলেটের মানুষদের বুঝাতে হবে এইটা কোন মূর্তি না। এটা ভাস্কর্য। একজন মায়ের আশীর্বাদ নেওয়ার প্রতিকৃতি। সাথে সাথে আমরা দিখিয়ে দিতে পারি অন্য সকল মুসলিম প্রধান দেশের ভাস্কর্য। সিলেটের মানুষ ঐ রাজাকারদের মতো মূর্খ না।

ভাস্কর্যকে যারা মূর্তি বলবে তাদের বলতে চাই " মূর্তি হবেই "

শাবিপ্রবিতে নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের নকশা।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৫৭
১৯টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×